খবর অনলাইন: কাশ্মীরকে অনেকটা স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হোক। যে ‘বিশাল সুবিধা’ পাওয়ার আশায় কাশ্মীর ভারতের অঙ্গীভূত হয়েছিল তা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এ ভাবেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এটা করা না হলে দেশকে অনেক মূল্য চোকাতে হবে বলে চিদম্বরম সতর্ক করে দিয়েছেন।
“যে বিশাল সুবিধা পাওয়ার আশায় কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়েছিল, তাকে আমরা উপেক্ষা করেছি। আমি মনে করি আমরা বিশ্বাসভঙ্গ করেছি, প্রতিশ্রুতি ভেঙেছি এবং এর জন্য আমরা প্রচুর মূল্য দিয়েছি” – ইন্ডিয়া টুডে-তে করণ থাপারকে বলেন চিদম্বরম। কংগ্রেস নেতা বলেন, ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির সময়ে যে ‘বিশাল সুবিধা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাকে পুরোপুরি সম্মান দেওয়া হবে, কাশ্মীরের মানুষকে দিল্লি এই আশ্বাস দিক। তাঁর মতে এটাই হবে কাশ্মীর সমস্যার সব চেয়ে ভালো সমাধান।
চিদম্বরম বলেন, “আমি ভুল হতে পারি, আমি ঠিক হতে পারি। কিন্তু যেটা দরকার সেটা হল, কাশ্মীরের জনগণকে এই আশ্বাস দেওয়া যে বিশাল সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি রক্ষা করা হবে। সংবিধানের সঙ্গে বিরোধ বাধবে না, এই শর্তে কাশ্মীরের জনগণ যতদূর সম্ভব নিজেদের আইন নিজেরা প্রণয়ন করুন। আমাদের আশ্বাস দিতে হবে যে আমরা কাশ্মীরের অভিন্নতা, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্মকে শ্রদ্ধা করব… এবং তাদের ভারতের অংশ হিসাবে মেনে নেব।”
তামিল অধ্যুষিত উত্তর ও পূর্বের এলাকার জন্য ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে ভারত যে উপদেশ দিয়েছে তার উদাহরণ টেনে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে আমরা যে উপদেশ দিচ্ছি, সেটাই কাশ্মীরের ক্ষেত্রে রূপায়ণ করতে হবে। দিল্লি ও শ্রীনগরের উপর্যুপরি সরকার কাশ্মীরের পরিস্থিতি সঠিক ভাবে সামাল দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন চিদম্বরম – “আমরাও (ইউপিএ সরকার) পরিস্থিতির মোকাবিলা ঠিক ভাবে করতে পারেনি। তবে ২০১০-এ নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছিলাম। এখন দিল্লি আর শ্রীনগরের সরকার খুব, খুব খারাপ ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।”
চিদম্বরম খেদ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরের নিরাপত্তা দেখভাল করার সামগ্রিক দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কোর কম্যান্ডারদের, মুখ্যমন্ত্রী বা জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের নয়। “নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর… সামগ্রিক কমান্ডের দায়িত্ব জিওসি’র… এই পরিবর্তনগুলো হওয়া উচিত হয়নি… দীর্ঘ সময় ধরে এটা হয়েছে। আমি দেখেছি জিওসি-ই সামগ্রিক দায়িত্বে, সিএম বা ডিজি নন… সিএমের আদেশ চলে না…”
প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী ও আধাসেনা সীমান্ত এলাকায় চলে যাক, বিতর্কিত আফস্পা বাতিল হোক, নিদেন পক্ষে সংশোধন হোক, এবং সামগ্রিক ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের হাতে থাকুক। সেনাবাহিনীর ১০ হাজার কর্মীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। “কিন্তু দুর্ভাগ্য, বিষয়টি নিয়ে আর এগোনো হয়নি।” চিদম্বরম স্বীকার করেন, প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির আপত্তির ফলে আফস্পা প্রত্যাহারের প্রস্তাব নিয়ে তিনি এগোতে পারেননি। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন কাশ্মীর নিয়ে আলাপআলোচনা চালানোর জন্য যাঁদের নিয়োগ করেছিলেন তাঁদের রিপোর্ট নিয়ে আর এগোনো হয়নি বলে চিদম্বরম দুঃখ প্রকাশ করেন। “আমি মনে করি ওঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী কাজ করা উচিত ছিল। ওঁদের সুপারিশের বেশির ভাগই আমরা রূপায়ণ করিনি।”
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।