দেশের প্রধান বিচারপতি পদে সময় ফুরিয়ে গেল ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের। আজ, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে ছিল চন্দ্রচূড়ের কর্মজীবনের শেষ এজলাস। খাতায়কলমে অবশ্য তাঁর অবসরের দিন আগামী রবিবার, ১০ নভেম্বর। শনিবার এবং রবিবার আদালত ছুটি থাকায় আজই শেষ বার বসলেন নিজের চেয়ারে। প্রধান বিচারপতি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি কী করবেন?
চন্দ্রচূড় কি ফের আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে পারবেন?
সংবিধানের ১২৪(৭) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিরা অবসরের পর কোনো ভারতীয় আদালতে ল’ প্র্যাকটিস করতে পারেন না। এই নিষেধাজ্ঞাটি একটি নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা নিশ্চিত করে যে বিচারপতিরা তাঁদের কার্যকালে নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন এবং অবসরের পরেও তাঁদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে।
নিষেধাজ্ঞার কারণ
বিচারপতিদের অবসরের পরল’ প্র্যাকটিসে নিষেধাজ্ঞা জনগণের আস্থা রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। এক বার একজন বিচারপতি বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে, অবসরের পর পুনরায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করলে জনগণের মধ্যে সন্দেহ জাগতে পারে যে তাঁর রায়গুলো ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য প্রভাবিত হতে পারে।
মূল কারণগুলি
সংঘাত এড়ানো: অবসরের পর আইনজীবী হিসাবে কাজ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সহায়ক।
মর্যাদা রক্ষা: অবসরের পর আইন চর্চা করলে প্রাক্তন বিচারপতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
অযাচিত প্রভাব প্রতিরোধ: বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গোপনীয় তথ্যের অ্যাক্সেস পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের মাধ্যমে অনৈতিকতার ঝুঁকি বাড়ায়।
অবসর-উত্তর ভূমিকা
আদালতে আইন চর্চা নিষিদ্ধ হলেও, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবদান রাখতে পারেন:
- মধ্যস্থতা ও সালিশি: অভিজ্ঞ বিচারপতিরা সালিশ বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন, যেখানে তাঁদের আইনি দক্ষতা প্রয়োজন হয়।
- কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল: প্রাক্তন বিচারপতিরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বা জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের মতো কমিশন বা ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্ব দেন।
- শিক্ষাগত অবদান: অনেক প্রাক্তন বিচারপতি আইন শিক্ষায় অবদান রাখেন, পাঠদান, বক্তৃতা প্রদান এবং প্রকাশনা লেখার মাধ্যমে।
- জনসেবা: অবসর-প্রাপ্ত বিচারপতিরা রাজ্যপাল বা সরকারি কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন।
সমালোচনা
অনেকে মনে করেন, অবসর-প্রাপ্ত বিচারপতিরা সরকারি ভূমিকা গ্রহণ করলে পক্ষপাতের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর রাজ্যসভায় মনোনয়ন এই ধরনের বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল। সমালোচকদের মতে, অবসর-উত্তর সরকারি পদবী গ্রহণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে পারে।