আইনের চোখে ১৮ বছরের নীচে যৌনসম্পর্ক, তা বিবাহিত সম্পর্কেই হোক বা সম্মতিসূচক, শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মুম্বই: নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে সম্মতি থাকার পরও যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে বলে রায় দিল বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ।
আদালত জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সি স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে “সম্মতি” মান্য হবে না। বিচারপতি জিএ সানাপের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্ত্রী তথা নাবালিকার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে।
বিচারপতি সানাপ বলেন, “১৮ বছরের নীচে কোনও মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক বিবাহিত হলেও তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে।” আইন অনুযায়ী, নাবালিকার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষে সম্মতির যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে স্পষ্ট করেছেন আদালত।
আইন ও বয়সের সীমার গুরুত্ব
বিচারপতি সানাপ তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, “১৮ বছরের কমবয়সি কোনো মেয়ের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক, সে বিবাহিত হোক বা না হোক, তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে।” আদালত আরও স্পষ্ট করে জানায়, স্ত্রী হিসেবে দাবি করা হলেও ১৮ বছরের কমবয়সি মেয়ের সঙ্গে সম্মতিসূচক যৌনসম্পর্ক আইনি সুরক্ষা পাবে না।
মামলার প্রেক্ষাপট
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযুক্ত প্রথমে জোর করে নাবালিকার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেন, যা তাঁর গর্ভধারণের কারণ হয়। পরে অভিযুক্ত তাঁকে বিয়ে করেন। তবে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক শীঘ্রই ভেঙে পড়ে। এর পরই ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রেমের সম্পর্ক থেকে নিপীড়ন
ঘটনায় প্রকাশ, অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীর মধ্যে ৩-৪ বছরের একটি রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ভুক্তভোগী তাঁর শারীরিক ঘনিষ্ঠতার প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে অভিযুক্ত ভুক্তভোগীকে কাজের জায়গায় যাওয়া-আসার সময় সহযোগিতার অজুহাতে তাঁকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত নাবালিকার সঙ্গে একটি ভুয়ো বিয়ের নাটক সাজান। কিছু প্রতিবেশীর উপস্থিতিতে একটি ভাড়া করা ঘরে এই তথাকথিত বিয়ে হয়। এরপর তিনি ভুক্তভোগীর প্রতি নির্যাতনমূলক আচরণ শুরু করেন, গর্ভপাতের জন্য চাপ দেন এবং সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে ভুক্তভোগীকে অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে দোষারোপ করেন।
প্রমাণ ও রায়
বিচারপতি সানাপ রায়ে উল্লেখ করেন, অভিযুক্তের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ ভুক্তভোগী অপরাধ সংঘটনের সময় ১৮ বছরের কমবয়সি ছিলেন। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে প্রমাণিত হয় যে অভিযুক্তই সন্তানের পিতা।
হাইকোর্টের এই রায় ভারতীয় আইনে বাল্যবিবাহ এবং বয়সের সীমা সম্পর্কিত একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আইনের চোখে ১৮ বছরের নীচে যৌনসম্পর্ক, তা বিবাহিত সম্পর্কেই হোক বা সম্মতিসূচক, শাস্তিযোগ্য অপরাধ।