ভারতের অষ্টম জনগণনার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়ে গেল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে সদ্য জারি হওয়া গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৭ সালের ১ মার্চকে ‘রেফারেন্স ডেট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ওই দিন ভারতে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার নিরিখে সেন্সাসের চূড়ান্ত হিসাব তৈরি হবে। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় এবার একাধিক নতুন সংযোজন— যার মধ্যে অন্যতম নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য আপলোডের সুযোগ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এবার আর শুধুমাত্র জনগণনা কর্মীর ওপর নির্ভর নয়। কোনও নাগরিক চাইলে বাড়ি বসেই নিজের এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের তথ্য আপলোড করতে পারবেন। এই তথ্য আপলোড করা যাবে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (RGI)-র নির্ধারিত পোর্টাল বা অ্যাপে। পরিবারে কারও মৃত্যু, অথবা ঠিকানা পরিবর্তন হলেও সেই তথ্য নিজেই সংশোধন করতে পারবেন নাগরিকেরা। সরকারের মতে, এতে যেমন সময় ও খরচ বাঁচবে, তেমনই ৩৪ লক্ষ কর্মী ও ১.৩ লক্ষ আধিকারিকের বিশাল কর্মযজ্ঞ আরও মসৃণভাবে পরিচালনা করা যাবে।
২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে ‘হাউজ লিস্টিং’ অর্থাৎ দেশের ঘরবাড়ির পরিসংখ্যান সংগ্রহ। এরপর শুরু হবে ‘পপুলেশন ইনিউমারেশন’ পর্যায়, যেখানে নাগরিকদের বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, শিক্ষা, পেশা-সহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সবশেষে ২০২৭ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত সেন্সাস রিপোর্ট।
তবে এই গেজেট বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। জনগণনায় জাতির ভিত্তিতে তথ্যান্বেষণ— অর্থাৎ ‘কাস্ট সেন্সাস’— নিয়ে একটিও শব্দ নেই এই নোটিফিকেশনে। অথচ ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই জাতিগণনার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ৩০ এপ্রিল একটি বিবৃতিতেও সে কথা জানানো হয়েছিল। এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ কটাক্ষ করে বলেন, “মোদীজি কি আবার ইউ-টার্ন নিলেন?” তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, কংগ্রেস শাসিত তেলেঙ্গানার মতো জাতিগণনার স্পষ্ট মডেল অনুসরণ করা উচিত কেন্দ্রের।
যদিও ৪ জুন প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, সেন্সাসে জাতিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবু সরকারিভাবে জারি হওয়া গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রসঙ্গের অনুপস্থিতি ফের নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।
আপাতত অপেক্ষা, সরকার কবে নাগরিকদের জন্য সেই নির্দিষ্ট পোর্টাল বা অ্যাপ চালু করে। আর তার আগেই রাজনৈতিক তরজা নতুন মাত্রা নিচ্ছে— এই জনগণনাকে কেন্দ্র করে।