
নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ জোটের প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে এক জন আদিবাসী নেত্রীকে। এমন মাস্টারস্ট্রোকে শুধু বিজেপি এবং সহযোগী দলগুলিই নয়, বিরোধীদের সমর্থনও যেতে পারে দ্রৌপদীর ভোটবাক্সে।
বিরোধী দলের আদিবাসী ভোটে ভাগ বসাতে পারে বিজেপি

ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার চালাচ্ছে জেএমএম। মূলত আদিবাসী দল। ফলে বিরোধী জোটের প্রার্থী নির্ধারণে কংগ্রেস অন্যতম ভূমিকা নিলেও দ্রৌপদীকে সমর্থনের ব্যাপারে জেএমএম নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কি না সন্দেহ। বিশেষ করে, ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসেবে দ্রৌপদীর ট্র্যাক রেকর্ড মোটের উপর খারাপ নয়।
ছত্তীসগঢ়ে একক ক্ষমতায় সরকারে রয়েছে কংগ্রেস। সেখানে আদিবাসী জনসংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস বিধায়ক এবং সাংসদদের জন্য যশবন্ত সিনহাকে ভোট দেওয়া সহজ হবে না। অন্য দিকে, যশবন্ত যেখানে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সম্প্রতি। আপাত ভাবে তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হিসেবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, কংগ্রেসের নয়।
শুধু ঝাড়খণ্ড বা ছত্তীসগঢ় নয়, সারা দেশে কংগ্রেসের আদিবাসী বিধায়ক এবং সাংসদ সংখ্যা যথেষ্ট। এমনকী বিভিন্ন বিরোধী দলের আদিবাসী বিধায়ক এবং সাংসদ সংখ্যাও কম নয়।
সে ক্ষেত্রে তাঁরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এক জন আদিবাসী প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে দলীয় নির্দেশ মেনে চলবেন কি না, সে বিষয়েও সংশয় থাকছে। রাজনৈতিক মহলের মতে,নিজের সম্প্রদায়ের আনুগত্য প্রায় সবসময়ই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে ছাড়িয়ে যায়।
সে ক্ষেত্রে ক্রস ভোটিংয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। যেহেতু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রযোজ্য নয়, তাই এ ব্যাপারে দলের লাইন মেনে চলতে বাধ্য নন নির্বাচকরা।
এনডিএ-র ভোটের অংক বাড়তে পারে সহজ সমীকরণে

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদের ৭৭৬ জন সদস্য (রাজ্যসভা ও লোকসভার সদস্য) এবং বিধানসভার ৪,০৩৩ জন সদস্যের ভোটের মাধ্যমে। মোট ৪,৮০৯টি ভোট দেওয়া হয়।
বিভিন্ন রাজ্যের বিধায়কদের ভোটের মিলিত মূল্য হল ৫৪৩২৩১ এবং সাংসদদের ভোট মূল্য ৫৪৩২০০, দুইয়ে মিলে মোট ১০৮৬৪৩১।
তবে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র কাছে রয়েছে মোট ভোটের অর্ধেকের কিছু কম অর্থাৎ ৫,২৬,৪২০টি ভোট। এ বারে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে প্রায় ১৩ হাজার ভোট কম পড়ছে বিজেপির। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এর জন্য ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং বিজু জনতা দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। দ্রৌপদীর নাম ঘোষণা হতেই তাঁকে অভিনন্দন জানাতে সময় কালবিলম্ব করেননি নবীন। দ্রৌপদীর জন্ম এবং কাজের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই রয়েছে ওড়িশা। নবীনের অভিনন্দন তাঁর জয়ের পথকে অনেকটাই প্রশস্ত করেছে। উল্লেখ্য, বিজেডি সাংসদ এবং বিধায়কদের ভোট মূল্য ৩১,৭০৫।
কোনো আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতিপদে দেখতে অরাজি হবেন?

প্রশাসনিক এবং সাংবিধানিক দায়িত্বে অভিজ্ঞতা-সহ একটি চিত্তাকর্ষক জীবনপঞ্জি রয়েছে দ্রৌপদীর। তিনি একজন প্রাক্তন শিক্ষক, একজন প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী, ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কের নেতৃত্বাধীন বিজেডি-বিজেপি জোট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল, যিনি নিজের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন।
এত শক্তপোক্ত পরিচিতির মধ্যেই যুক্ত হয়েছে তাঁর আদিবাসী পরিচয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কেউ কি তাঁকে রাষ্ট্রপতিপদে দেখতে অরাজি হবেন?
গত সাত দশক ধরে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা পৌঁছেছেন। এক মাত্র আদিবাসী ছাড়া। দ্রৌপদীকে বেছে নিয়ে প্রান্তিক সামাজিক ও নারী ক্ষমতায়নের লড়াইয়ে আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করতে চায় বিজেপি। দেশের সর্বোচ্চ পদে একজন আদিবাসী মহিলাকে বসানোর মাধ্যমে সামাজিক অন্তর্ভুক্তির একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছানোই মূল লক্ষ্য। যদিও কার্যক্ষেত্রে কতটা প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে।
আরও পড়তে পারেন:
প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্ত, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।