মরাঠা বীর ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ ও পরে বালগঙ্গাধর তিলকের হাত ধরে জনপ্রিয়তা লাভ করে গণেশ পুজো। আজ ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’-র ডাক চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে। মহারাষ্ট্রের আঙিনা ছেড়ে আজ দেশের প্রায় প্রতিটি কোণায় কোণায় সর্বজনীন রূপ পেয়েছে গণপতির আরাধনা। মহারাষ্ট্রের বিশেষ করে মুম্বইয়ের গণেশ মহোৎসব চাক্ষুষ করতে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসেন। বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে অসংখ্য গণেশ পুজোর প্যান্ডেল যা মরাঠি ভাষায় মণ্ডল হয়। এরমধ্যে বিখ্যাত হল লালবাগছা রাজা বা লালবাগের রাজা। বহু প্রাচীন এই সর্বজনীন গণেশ পুজো। অনেকেই লালবাগছা রাজাকে নবসাছা গণপতি নামেও ডাকেন। মরাঠি ভাষায় এর অর্থ ইচ্ছাপূরণকারী গণেশ। বিশালাকৃতির গণপতি বাপ্পার অত্যন্ত ধূমধাম করে পুজো হয় এখানে। লালবাগের রাজার সামনে নতমস্তকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় সপরিবারে ধনকুবের শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি থেকে বলিউডের শাহেনশা অমিতাভ বচ্চনের মতো তাবড় সেলেবদের।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাংলার মতো একদিনে নয় মহারাষ্ট্রে ১০ দিন ধরে উদযাপন করা হয় গণেশ পুজো। ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি থেকে শুরু হয়ে পুজো চলে চতুর্দশী তিথি পর্যন্ত। মুম্বইয়ের গিরগাঁওয়ের পুতলাবাঈ চলের কাছে লালবাগছা রাজার বিশালাকৃতির গণপতিকে পুজোর দ্বিতীয় দিন থেকে অনন্ত চতুর্দশী পর্যন্ত দর্শন করা যায়। ‘লালবাগের রাজার’ উচ্চতা প্রায় ১৮-২০ ফুট। প্রত্যেক বছর সাড়ম্বরে প্রতিমার উন্মোচন হয়। সবচেয়ে আকর্ষণ হল বিসর্জনের অনুষ্ঠান। প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগম ঘটে এই পুজোয়।
#WATCH | Actor Boman Irani and his wife Zenobia Irani offered prayers at Lalbaugcha Raja in Mumbai today, on the occasion of #GaneshChaturthi2024 pic.twitter.com/aWxUMv1iWZ
— ANI (@ANI) September 7, 2024
এবছরও ১২ ফুটের বিশালাকৃতির গণপতি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। মেরুন রঙের ধুতি পরানো হয়েছে গণেশ ঠাকুরকে। অযোধ্যার রামমন্দিরের আদলের বিশাল মণ্ডপ তৈরি করেছেন বলিউডের বিখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর নিতিন চন্দ্রকান্ত দেশাই। এবছর এই পুজোর বিমার মূল্য প্রায় ৩২.৭৬ কোটি টাকা। মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি ‘লালবাগছা রাজা’-কে ২০ কিলো ওজনের সোনার মুকুট নিবেদন করেছেন।
এই পুজোর ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায়, ১৯ শতকের গোড়ার দিকে ওই অঞ্চলে ১০০টি’র বেশি পোশাককল ছিল। তিরিশের দশকের আশপাশে পোশাকশিল্পে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক ক্ষতি হয়। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক সময় পোশাককলের জন্য গিরগাঁও অঞ্চল ‘কাপড় কলের গ্রাম’ বলে পরিচিত ছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা জমি দান করে। সেই জমির এখনকার নাম হল লালবাগ মার্কেট। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে তাঁদের আরাধ্য দেবতা গণেশ পুজো শুরু করেন। গণপতির আর্শীবাদে আবার লাভের মুখ দেখে পোশাক শিল্প। ব্যবসা বাণিজ্যে লাভ হওয়ার পর জমির একটা অংশ সার্বজনিক গণেশ মণ্ডলকে দান করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানেই প্রতি বছর হয় পুজো।