বাইকের আওয়াজে ভোররাতের ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি। এক সঙ্গে ৪-৫টি মোটরবাইকের সশব্দ পথ-চলা শুরু হলে যে কোনও মানুষের ঘুম ভাঙার কথা।
ব্যাপারখানা কী। তত্ত্বতালাশ শুরু করলাম। আর তারই সূত্র ধরে মুখোমুখি ফ্ল্যাটের দরজায় ঘণ্টি বাজালাম। এক মুখ হাসি নিয়ে দু’পাল্লা ছড়িয়ে দিলেন ওরা। রাজেন্দ্র বিশ্বকর্মা ও রঞ্জন দাশগুপ্তর সঙ্গে আলাপেই জানতে পারলাম বাইকবাহিনীর কথা।
৯ জুলাই ‘মুনসুন রাইড’-এ বেরিয়ে পড়েছিল আঠারোটি বাইক। গন্তব্য ছিল বিলিগিরিরঙ্গা হিলস। বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে এই পাহাড়শ্রেণি। তার পাদদেশে গিয়ে বিশ্রাম ও প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো। এমন চিন্তা ভালো। তা বলে বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিজগতের যুবকরা ছুটির দিন কাটাচ্ছেন এই ভাবে! যে শহরে পাবকালচার, মলকালচার জেন ওয়াইকে জড়িয়ে ফেলেছে, সেখানে এই উদ্যোগ নিশ্চয়ই অভিনব। কিন্তু প্রশ্ন হল মোটরবাইক কতখানি নিরাপদ যান?
এ বারের অতিথিসভ্য রঞ্জনের কথায়, “পরিমিত গতি, হাঁটু ,কনুইয়ের জন্য বিশেষ প্যাড, বিশেষ জুতো, মাথায় হেলমেট, ওষুধের ব্যাগ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সকলের নিজস্ব গাড়িতে রাখতে হবে। আর যিনি অতিথিসভ্য হয়ে যাবেন তিনি সদস্যের পিছনে বসবেন। প্রথম ও শেষ সদস্যের গাড়িতে থাকবে পতাকা।”
তবে এই অ্যাডভেঞ্চার প্রথম নয়। আটটি রাইড হয়ে গিয়েছে ‘টিম টর্ক মোটরসাইকেল ক্লাব’-এর। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির ছুটির দিনের সকালে আড্ডা চলছিল কফির টেবিলে। নানা কথায় উঠে এল অভিযানের কথা। সে দিনের, সেই মুহূর্তের ফাউন্ডার মেম্বার রাজেন্দ্র বিশ্বকর্মা, চন্দন গৌড় ও জেফরি রুবিন ঠিক করেন কোথাও বেরিয়ে পড়লে ভালো হয়। কথা অনুযায়ী কাজ। ডেকে নেওয়া হয় বাকি বন্ধুদের। প্রত্যেকের মোটরসাইকেল আছে। আর তাতে চড়ে বেড়ানো এক পছন্দের বিষয়। এসে গেলেন জনা পনেরো আরোহী, যাত্রা শুরু হাসান জেলার রাপ্পায়। বেঙ্গালুরু থেকে যার দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। ফিরতি পথে বুঝতে পেরেছিলেন কাজটা অত সহজ নয়। আগে থেকে ঠিক করে, রীতিমতো গুগল সার্চ করে তবেই এ বার পথে চাকা ঘুরবে।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাজেন্দ্র বিশ্বকর্মা বললেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লাবটি গঠিত হলেও জুন মাসে নামকরণ করা হয় ও একটি লোগো করা উচিত বলে মনে করি। বর্তমানে সদস্য চল্লিশ। আমরা যাত্রা করার আগের দিন কয়েক জন এক সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। জড়ো হই একটি জায়গায়। কারও যাতে এক হতে দেরি না হয়। বের হই ভোর তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে। রাতে ফিরে আসা। তবে সব সময় ফেরা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে রাতে থেকে যেতে হয়েছে হোটেলে।” রাপ্পার পরে আভালাবেট্টা, গোকর্ণ , গোয়া (নিউ ইয়ার রাইড), উটি, মণ্ডলপাটি ও কুর্গ এবং চিকমাগালুর।
সারা সপ্তাহ কাজের সঙ্গে লড়াই চালানোর পরে বেলা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ার একটা কষ্ট বা ক্লান্তি তো আছে? “আসলে প্রকৃতির কাছে, সমুদ্রের কাছে, পাহাড়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারলে প্রাণবায়ু ফিরে পাই। যেতে যেতে সবুজ মাঠ পেলে বসে যাই। খোলা আকাশের নীচে শুয়ে বসে নিজের সঙ্গে কথা বলি। নিজেরা গান গাই। নতুন কিছুর আলোচনা করি”- বললেন জাফরি রুবিন।
বেঙ্গালুরুর জেন ওয়াই নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন টেনশন মুক্তির উপায়। নতুন সৃষ্টির কাছে বন্ধু করেছেন প্রকৃতিকে।
ছবিঃ রাজেন্দ্র বিশ্বকর্মা
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।