ওয়েবডেস্ক: যে আশঙ্কাটা করা হচ্ছিল, সেটাই সত্যি হল। বর্ষার বিলম্বের ফলে দেশের অর্ধেকেরও বেশি অংশ এখন খরার সম্মুখীন। জুলাইয়ের মধ্যে জোর বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও ছবিটা কিন্তু আদৌ ভালো নয়।
এত দিন শুধু চেন্নাইয়ের করুণ পরিস্থিতির দিকে আমাদের নজর ছিল, কিন্তু আদতে ভারতের ৫১ শতাংশ অঞ্চল এখন কার্যত জলশূন্য। বৃষ্টি না হওয়ার ফলে নদী-নালা-খাল-বিল সব শুকিয়ে গিয়েছে। এমনকি ভূপৃষ্ঠের জলও প্রায় তলানিতে।
রবিবার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে গোটা ভারতের এই মুহূর্তে বৃষ্টির ঘাটতি ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে পূর্ব, মধ্য এবং দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ‘অতিরিক্ত শুকনো’ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া দফতরের পুনে শাখার তরফ থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে।
পুনে শাখারই এক আধিকারিক, পুলক গুহাঠাকুরতা বলেন, “বর্ষা এমনিতে দেরি করে এসেছে। আবার যেখানে এসেছে সেখানেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। এর ফলে এই খরার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।” তবে এর মধ্যেও পুলকবাবুর আশার বাণী, “আগামী সপ্তাহের পূর্বাভাস, উৎসাহজনক।”
গত দশ বছরে এই সময়ে দেশের ৯১টা কেন্দ্রীয় সরকারি জলাধার প্রকল্পে যতটা জল ছিল, তার মধ্যে এ বারই সব থেকে কম। এমনই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তরফ থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে। অন্ধ্রপ্রদেশের জলাধারগুলিতে গড়ে জল কম প্রায় ৮৩ শতাংশ, তামিলনাড়ুতে ৪৩ শতাংশ, কেরলে ৩৮ শতাংশ, তেলঙ্গানায় ৩৬ শতাংশ এবং কর্নাটকে ২৩ শতাংশ।
এরই মধ্যে বেশ কিছু নদী অববাহিকা অঞ্চলে জলের পরিমাণ মারাত্মক ভাবে কমে গিয়েছে। তাপ্তি অববাহিকায় গত দশ বছরের গড়ের থেকে এ বার ৮১ শতাংশ জল কম। কৃষ্ণায় ৫৫ শতাংশ, কাবেরীতে ৪৫ শতাংশ, সবরমতীতে ৪২ শতাংশ। তুলনায় গঙ্গার ছবিটা কিছুটা ভালো। সেখানে জল কম ৯.২৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন বারমেঢ়ে প্যান্ডেল ভেঙে মৃত্যুমিছিল!
জলের এই আকালের জন্য অচিরেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কৃষক সংঘর্ষ কমিটি। রবিবার একটি বিবৃতিতে তারা বলেছে, “এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হতে পারে। খরা মোকাবিলা করার জন্য ‘ম্যানুয়াল অব ড্রাউট ম্যানেজমেন্ট’-এ যা বলা আছে, এই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলিকে কাজ করতে হবে।”
যদিও কেন্দ্রের তরফ থেকে এখনই আতঙ্কিত হতে বারণ করা হচ্ছে। ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব এম রাজীবন বলেন, “ঘূর্ণিঝড় বায়ুর জন্য বর্ষার অগ্রগতি থমকে গিয়েছিল, কিন্তু তা আবার স্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। কিছু দিনের মধ্যে দিল্লিতেও বৃষ্টি শুরু হবে। ২৭ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি কম হবে ঠিকই কিন্তু তার পর থেকে আবার বৃষ্টি বাড়বে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে একটি নিম্নচাপ হওয়ার কথা। তেমন হলে বৃষ্টির ছবিটা আরও ভালো হবে।”
বাংলার ছবিটা কেমন?
পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য ভালো যে গ্রীষ্মের বৃষ্টি এ রাজ্যে পর্যাপ্তেরও বেশি হয়েছে। যার ফলে জলাধারগুলিতে জল রয়েছে। কিন্তু ১ জুন থেকে ২৩ জুনের হিসেবে দেখা যাবে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে। গোটা রাজ্যে বর্ষার ঘাটতি গড়ে ৫০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগণা, হাওড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দুই দিনাজপুর এবং দার্জিলিং। ৩০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে ঘাটতি রয়েছে রাজ্যের বাকি জেলাগুলি। অর্থাৎ, এই তথ্যেই বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টির ছবিটা ঠিক কতটা খারাপ।
তবে এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গের জন্য সুখবর, আগামী বেশ কয়েক দিন সেখানে চরম বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। যদিও দক্ষিণবঙ্গকে ভালো বৃষ্টি পেতে গেলে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। এই সপ্তাহের শেষ থেকে স্বাভাবিক বৃষ্টি ফিরতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা তাকিয়ে রয়েছেন জুলাইয়ের শুরুতে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলা নতুন নিম্নচাপের দিকে।