দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রাথমিক গণনায় দেখা গেছে, কংগ্রেস তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে কার্যত ব্যর্থ। তবে আপ-এর থেকে ভোট কাটার মাধ্যমে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বড় ধাক্কা দিতে সফল। বিজেপি যেখানে সম্ভবত ঐতিহাসিক জয় পেতে চলেছে, সেখানে এই ভোট ভাগাভাগি আপ-এর ক্ষত আরও বাড়িয়েছে।
কংগ্রেস ও আপ আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজেই তাঁর নয়াদিল্লি আসনে বিজেপির প্রার্থী প্রবেশ বর্মার কাছে পরাজিত হয়েছেন। কংগ্রেসের সন্দীপ দীক্ষিতও ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং তাঁর পাওয়া ভোট যোগ হলে কেজরিওয়াল সহজেই জিততে পারতেন। একইভাবে, আপের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া মাত্র ৬০০ ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছেন, যেখানে কংগ্রেস প্রার্থীর ভোট যোগ হলে ফলাফল উল্টো হতে পারত।
দিল্লির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আসন বাদলি, নাঙ্গলোই জাত, মাদিপুর, রোহিণী ও দ্বারকায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কংগ্রেস ও আপের জোট না করার সিদ্ধান্ত বিজেপিকে সুবিধা দিয়েছে, এবং আপকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।
দিল্লিতে ১৯৯৮ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিজেপি এবার বড় জয় পেতে চলেছে বলে ইঙ্গিত মিলছে। অন্যদিকে, আপ ২০১৫ ও ২০২০ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করেছিল। কংগ্রেস, যা ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দিল্লি শাসন করেছিল, ২০১৫ ও ২০২০-এর নির্বাচনে একটি আসনও জিততে পারেনি। এবার তারা নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলেও ভোট বিভাজনের কারণে আপের মূল ভোটব্যাংকে ধস নামতে পারে।
২০১৩ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৪৩ থেকে কমে ৮-এ দাঁড়ায়, এবং তাদের ভোট শতাংশ ৪০.৩১ শতাংশ থেকে ২৪.৫৫ শতাংশ-এ নেমে আসে। ২০১৫ সালে কংগ্রেস আরও ১৫ শতাংশ ভোট হারায়, যখন আপ ১৫ শতাংশ ভোটের বৃদ্ধি পায়। ২০২০ সালে কংগ্রেসের ভোট শেয়ার আরও কমে ৪.২৬ শতাংশে পৌঁছায়। তবে বিজেপির ভোট শেয়ার তখন ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা আপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিল।
এবার কংগ্রেস কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও, এটি আপের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব বস্তিবাসী, পুর্বাঞ্চলীয় ভোটার, মুসলিম সম্প্রদায় এবং অবৈধ কলোনির বাসিন্দাদের ভোট আপের শক্তি ছিল, সেখানে কংগ্রেস কিছুটা ভাগ বসালে আপের আসন সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সবমিলিয়ে, এই নির্বাচনের ফলাফল আপ ও কংগ্রেসের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। বিজেপির শক্তিশালী অবস্থান বজায় থাকলে দিল্লির রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।