কর্মসংস্থান নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে লাগাতার নিশানা করে চলেছে বিরোধীরা। তবে, এরই মধ্যে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্টে কর্মসংস্থান নিয়ে যথেষ্ট ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হল। সোমবার প্রকাশিত আরবিআই-এর ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ভারতে ৪.৭ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। যা সমস্ত মহলের অনুমানের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
গত ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ভারতে কর্মসংস্থানের হারে ৩.২ বৃদ্ধি ঘটেছিল। সেটাই ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে অনুমান করা হয়েছিল ৬ শতাংশ। শেষ আর্থিক বছরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার সেই অনুমানকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। রিপোর্টে শিল্পের উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানের পরিমাপ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যগুলি ব্যবহার করে এই প্রথম বার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আনুমানিক পরিসংখ্য়ানগুলির সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে।
২৭টি বৃহত্তম শিল্প ক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা এবং সেখানে কর্মসংস্থানের আনুমানিক পরিসংখ্য়ান সংগ্রহের চেষ্টা করেছে আরবিআই। কৃষি,বনজ, মৎস্যচাষ, খনি, উৎপাদন ক্ষেত্র, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জলসরবরাহ, নির্মাণ এবং পরিষেবার মতো ক্ষেত্রগুলি এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এনএসও, এনএসএসও এবং এএসআই-এর মতো সংস্থাগুলির পরিসংখ্যান ব্যবহার করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
সর্বশেষ পাওয়া এই তথ্য সম্ভবত চাকরি নিয়ে বিতর্কে নতুন ইন্ধন যোগ করতে পারে। কারণ, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে প্রধান ইস্যুগুলির অন্যতম হিসাবে উঠে এসেছিল কর্মসংস্থানের বিষয়টি। বেশ কয়েকটি সমীক্ষা দেশে উচ্চ বেকারত্বের হারকে নির্দেশ করে আসছে। বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্বের হার দুই অংকের সংখ্যা ধরে চলছে।
সম্প্রতি সিটি গ্রুপ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্টে ভারতে কর্মসসংস্থান নিয়ে যে পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট ভাবনার বিষয়। যেখানে বলা হয়েছে, ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে সঙ্গী করেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি করতে ভারতকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, আগামী এক দশকে ভারতকে বছরে ১.২ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি যা বলছে, তাতে বৃদ্ধির হার শুধুমাত্র ৮০-৯০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়ক। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতে আসরে নেমেছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। বেসরকারি সংস্থার রিপোর্টের দাবি খণ্ডন করতে মন্ত্রক পাল্টা নিজস্ব অর্থনীতিবিদদের তৈরি রিপোর্টও পেশ করেছে।
একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) এবং আরবিআই-এর কেএলইএমএস তথ্য অনুসারে, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত আট কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে ভারত। অর্থাৎ, প্রতি বছর গড়ে দু’কোটির বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে বিশ্ব জুড়ে কোভিড অতিমারি বহুমুখী ভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলা সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরিতে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পিএলএফএস তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ সালে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ৬ শতাংশ, সেখানে ২০২২-২৩ সালে সেটা কমে হয়েছে ৩.২ শতাংশ। এটাই এখনও পর্যন্ত সর্বনিম্ন। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে শ্রমশক্তিতে যোগদানকারীদের সংখ্যার চেয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে বেশি। যে কারণে বেকারত্বের হার ধারাবাহিক ভাবে কমেছে। যদিও এ ধরনের দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে কর্মসংস্থানের বাস্তব পরিস্থিতির দিকে তাকাতে বলছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: টেক ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক ছাঁটাই, কী কারণে? জানাচ্ছেন সংস্থাগুলির সিইওরা