গত বছর সিএ পরীক্ষায় সফলভাবে পাশ করার পর এ বছর মার্চে পুনের বহুজাতিক সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন কেরলের তরুণী আন্না সেবাস্টিন পেরাইল। গত ২০ জুলাই মৃত্যু হয়েছে আন্নার। তাঁর বাবা, মা, পরিজন ও বন্ধুবান্ধবরা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত কাজের চাপ ও টক্সিক কাজের পরিবেশের কারণে হওয়া মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাকেই আন্নার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। আন্নার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর দাবি, কাজের বিষাক্ত পরিবেশের কারণে আন্নার অসুস্থ হওয়ার কথা আন্নার মা সংস্থার ম্যানেজার, অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজারকে জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি।
আন্নার পর কাজের অতিরিক্ত চাপ সহ্য না করতে পেরে গত বৃহস্পতিবার আত্মহত্যা করেছেন তামিলনাড়ুর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কার্তিকেয়ান। বছর ৩৮-এর ওই যুবক গায়ে বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
নবীন প্রজন্মের এমন মৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের সর্বস্তরকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা ভারতের নবীন প্রজন্ম কর্মাতঙ্কে ভুগছে। কর্মীদের অভিযোগ, আয় বাড়ে না অথচ কাজের চাপ বাড়িয়ে চলেছে সংস্থা। বাড়ছে কাজের সময়ও। ঘাড় গুঁজে কাজ করতে গিয়ে খেয়াল থাকে না কত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অফিসে ঢোকার নির্দিষ্ট সময় থাকলেও বেরোনর সময় থাকে না। হায়ার অ্যান্ড ফায়ার নীতিতে চলা এসব সংস্থার অতিরিক্ত কাজের চাপ কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন ও শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলছে।
আন্তর্জাতিক লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, একজন ভারতীয় কর্মী গড়ে সপ্তাহে ৪৬.৭ ঘণ্টা কাজ করেন। ভুটানের পর ভারত দ্বিতীয় দেশ যেখানে জনসংখ্যার ৫১% মানুষ সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টার বেশি পরিমাণে কাজ করে। ভুটানে ৬১% মানুষ সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টার বেশি পরিমাণে কাজ করে। সবচেয়ে বেশি কাজ করা দেশের তালিকায় প্রথম দশে রয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানও। চিন, ক্রোয়েশিয়া, জর্জিয়া, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুরের মানুষ সপ্তাহে গড়ে ৩৪.২ ঘণ্টা থেকে ৪৬.১ ঘণ্টা কাজ করে। সিআইআই ও মেডিবুলের রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে যেখানে ২০% মানুষ অতিরিক্ত কাজের চাপে ভুগছে সেখানে ভারতের সংখ্যাটা ৬২%।
লেবার অর্গানাইজেশনের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারতীয়রাই তাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি খেটে মরছে। যে সব দেশের মানুষ সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কাজ করে সেই তালিকায় ভুটান আর ভারত ছাড়াও আর যে সব দেশ রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ। সেখানকার ৪৭% মানুষ সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টার বেশি করে কাজ করে। পাকিস্তানে এই সংখ্যাটা ৪০%।
আইএলও-র রিপোর্ট বলছে, সাপ্তাহিক কাজের গড় ৫০.৯ ঘণ্টা সংযুক্ত আরব আমিরাশাহীতে। সে দেশে ৩৯% মানুষ এই অতিরিক্ত পরিমাণ কাজ করে। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের মানুষ গড়ে সপ্তাহে ৩১.৬ ঘণ্টা কাজ করে। নরওয়েতে সাপ্তাহিক কাজের গড় পরিমাণ ৩৩.৭ ঘণ্টা।
সপ্তাহে সবচেয়ে কম কাজ করে ওসিয়ানিয়া মহাদেশের ছোট্ট দেশ ভানুয়াতুতে। সেখানে মানুষ সপ্তাহে গড়ে মাত্র ২৪.৭ ঘণ্টা কাজ করে। জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশের মানুষরাও সপ্তাহে কম কাজ করে।