নয়াদিল্লি: লাদাখের অংশ অন্তর্ভুক্ত করে চিন হোতান প্রিফেকচারে দুটি নতুন প্রশাসনিক জেলা গঠন করেছে বলে জানতে পেরেছে ভারত। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত সরকার এবং কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে চিনের কাছে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার লোকসভায় এক লিখিত উত্তরে কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেন, “ভারত সরকার চিনের এই বেআইনি দখল কখনোই স্বীকার করেনি। নতুন জেলা গঠন ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না, বরং এটি চিনের বেআইনি ও বলপূর্বক দখলের বৈধতা দিতে পারে না।”
কূটনৈতিক প্রতিবাদ ও ভারতের অবস্থান
ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত অংশকে নিজেদের প্রশাসনিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করার চিনের এই পদক্ষেপকে “বেআইনি” আখ্যা দিয়ে ভারত সরকার বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকার জানিয়েছে, চিনের এই প্রশাসনিক সম্প্রসারণকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না এবং ভারতের সীমান্ত সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সীমান্তে চিনের পরিকাঠামো বৃদ্ধি ও ভারতের পাল্টা উদ্যোগ
ভারত সরকার স্বীকার করেছে যে চিন সীমান্ত অঞ্চলে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ভারতেরও সীমান্ত উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সীমান্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি কৌশলগত দিক বিবেচনায় রেখেই পরিকাঠামো নির্মাণে জোর দিয়েছে ভারত সরকার।
২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সীমান্ত পরিকাঠামোর বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
সীমান্ত সড়ক সংগঠন (BRO) বিগত এক দশকে আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।
সীমান্ত এলাকায় সড়ক, সেতু ও টানেলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল
ভারত সরকার চিনের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে প্রশাসনিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধমূলক কৌশল নিয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে এবং কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয়।
ভারতের বার্তা
চিনের সীমান্ত সম্প্রসারণ নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে ভারত জানিয়েছে, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক যে আরও তীব্র হচ্ছে, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট।
চিনের এই পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পরবর্তী কূটনৈতিক এবং সামরিক পদক্ষেপ কী হবে, তা এখন নজরকাড়া বিষয় হয়ে উঠেছে।