ভারত সরকার বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট (মালপত্র পরিবহণের মাধ্যমে) সুবিধা প্রত্যাহার করল, যা এতদিন বাংলাদেশের পণ্য ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানির জন্য দিল্লি ও অন্যান্য ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারত। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে ৮ এপ্রিল থেকে।
এমন এক সময়ে সরকার এই পদক্ষেপ করল, যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস সম্প্রতি চিনে এক ব্যবসায়িক সম্মেলনে মন্তব্য করেন যে, “ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য ‘ল্যান্ডলকড’ বা সমুদ্রবিচ্ছিন্ন এবং কেবলমাত্র বাংলাদেশের মাধ্যমেই তারা সমুদ্রে পৌঁছতে পারে।” দিল্লি এই মন্তব্যকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে জানান, “বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার ফলে আমাদের বিমানবন্দর ও বন্দরে অতিরিক্ত চাপ পড়ছিল। এতে রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ও খরচ বেড়ে যাচ্ছিল।” তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও নেপাল ও ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত দেশের জন্য বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশের সুবিধা অব্যাহত থাকবে, কারণ এটি WTO-র নীতিমালায় সুরক্ষিত।
আসাম মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ভারতের আঞ্চলিক ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২০ সালে প্রাথমিকভাবে শুরু হওয়া এই সুবিধা ২০২২ সালে সরকারিভাবে সম্প্রসারিত হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার রপ্তানি পণ্য দিল্লি সহ বিভিন্ন ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠাতে পারত।
এই উত্তেজনার মধ্যেই ৪ এপ্রিল ব্যাংককে BIMSTEC সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনুসের বৈঠক হয়। পরবর্তীতে ইউনুসের মুখপাত্র এক ফেসবুক পোস্টে জানান, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যু উত্থাপন করা হয়েছে এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া “নেতিবাচক ছিল না”। দিল্লির প্রশাসনিক কর্তারা এই বিবরণকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর” বলে আখ্যা দেন।
ভারতের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষ থেকে ওই বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, “যে কোনও বক্তব্য যা পরিবেশকে উত্তপ্ত করে, তা এড়ানো উচিত” এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিয়ে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করেছেন তিনি।
দেখুনএই বিষয় নিয়ে একটি ভিডিয়ো উপস্থাপনা