বিজয়ী বিশ্ব তিরঙ্গা প্যারা, ঝান্ডা উঁচা রহে হমারা…
শ্যামলাল গুপ্তের ঐতিহাসিক স্মৃতির সৌরভে আজও সুরভিত কানপুরের নরওয়াল শহর। তাঁর পরিচিতি ‘পার্ষদ’ হিসেবেই। ভারত মাতার গৌরব গাথাকে অবিস্মরণীয় করে তুলছে তাঁর কলম। দেশাত্মবোধের মন্ত্রে উজ্জীবিত স্বাধীনতার সৈনিকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল তাঁর এই অমর সৃষ্টি।
শৈশবেই দেশপ্রেমের অনুভূতি
১৮৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নরওয়ালে জন্মগ্রহণ করেন শ্যামলাল গুপ্ত (Shyamlal Gupta)। বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ ও কৌশল্যাদেবীর পাঁচ ছেলের মধ্যে শ্যামলাল ছিলেন কনিষ্ঠ। শৈশব থেকেই তাঁর মনে দেশপ্রেমের অনুভূতি জেগে ওঠে। ব্রিটিশ শাসনের আধিপত্যে তিনি বিচলিত। অন্য দিকে বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না।
মাধ্যমিক (তৎকালীন মিডিল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বিশারদ উপাধি লাভ করেন। পুরসভা ও জেলা পরিষদে শিক্ষকের চাকরি করলেও তিন বছরের মধ্যে বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯২১ সালে গণেশশঙ্কর বিদ্যার্থীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
আট বার জেলে পাঠিয়ে নির্যাতন
বিদ্যার্থীজির সংস্পর্শে আসার পর স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন শ্যামলাল। কানপুরের পাশাপাশি ফতেপুরকে নিজের কর্মক্ষেত্রে পরিণত করেছিলেন।
১৯২০ সালে ফতেপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হন। লবণ আন্দোলন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ফতেপুরে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার কারণে ১৯২১ সালের ২১ আগস্ট রানি যশোধরার প্রাসাদ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩০ সালে লবণ আন্দোলনের অভিযোগে তাঁকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও ১৯৪৪ সালেও গ্রেফতার হন। এ ভাবে মোট আটবারে ছ’বছর জেলে কাটান তিনি।
সহ্য করতে হয় অসহনীয় অত্যাচার। কিন্তু তিনি বিভ্রান্ত হননি। ভারত মাতাকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি নিরলস ভাবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯২১ সালেই এক প্রতিজ্ঞা করেন। স্থির করেন দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি খালি পায়েই হাঁটবেন। রোদ-বৃষ্টিতে ব্যবহার করবেন না ছাতা। ১৯৭৭ সালের ১০ আগস্ট প্রয়াত হন দেশমাতৃকার এই মহান সন্তান। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভাবে, ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও তিনি আর জুতো পরেননি একটি বারের জন্যেও।
গান্ধীজি দেন পার্ষদ উপাধি
বিজয়ী বিশ্ব তিরঙ্গা প্যারা, ঝান্ডা উঁচা রহে হমারা…গানটি ১৯২৪ সালে রচনা করেন শ্যামলাল। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণাতেই এই মহান সৃষ্টি। ১৯২৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর গান্ধীজির উপস্থিতিতে এই গানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কানপুরে কংগ্রেসের সম্মেলনে প্রথম বার এটি গাওয়া হয়েছিল।
১৯৫২ সালের ১৫ আগস্ট লালকেল্লায় এই গানটিকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন শ্যামলাল। ১৯৭৩ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত হন।
গণেশ বিদ্যার্থীর সঙ্গে দু’বার নরওয়ালের আশ্রমে আসেন গান্ধীজি। তাঁর দেখভালের জন্য শ্যামলালকে নিযুক্ত করেছিলেন বিদ্যার্থীজি। বাপুর প্রধান সেবক হওয়ার কারণে তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ মিলে যায় শ্যামলালের। গান্ধীজি তাঁকে ‘পার্ষদ’ উপাধি দেন।
আরও পড়তে পারেন: লতা মঙ্গেশকর গাইছেন ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো’, চোখে জল প্রধানমন্ত্রী নেহরুর, জানুন এই গানের ইতিহাস