কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মাত্র দুই মাস আগে পহেলগাঁও ও আশেপাশের অঞ্চলের উপগ্রহ চিত্রের চাহিদা রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মহাকাশপ্রযুক্তি সংস্থা ম্যাক্সার টেকনোলজির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পহেলগাঁও এলাকার জন্য অন্তত ১২টি চিত্রের অর্ডার আসে—যা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ।
এই সময়েই ম্যাক্সার তাদের নতুন সঙ্গী হিসাবে এক পাকিস্তানভিত্তিক ভূ-স্থানিক (geo-spatial) সংস্থা, বিজনেস সিস্টেমস ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড (BSI)-কে যুক্ত করে, যাদের প্রতিষ্ঠাতা ওবায়দুল্লাহ সায়েদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেছেন।
ওবায়দুল্লাহ অবৈধভাবে মার্কিন প্রযুক্তি পাকিস্তানের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের (PAEC) কাছে রপ্তানির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হন—এই সংস্থাই পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে।
যদিও ম্যাক্সারের পোর্টাল অনুযায়ী, পহেলগাঁওয়ের ছবিগুলোর অর্ডার কে দিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়, তবুও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘটনাগুলির সময়গত মিল এবং ম্যাক্সারের সঙ্গে পাকিস্তানি কোম্পানির যোগাযোগ অস্বাভাবিকভাবে সন্দেহজনক।
ভারতের এক প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে ইন্ডিয়ান স্পেস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে ভাট (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, “বিশ্বব্যাপী বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলির মাধ্যমে হাই-রেজোলিউশনের উপগ্রহ চিত্র সহজলভ্য হওয়ায়, এটি একদিকে গোয়েন্দা ও নজরদারির পক্ষে সহায়ক হলেও, অপর দিকে চরমপন্থী গোষ্ঠীর হাতে পড়লে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।”
অন্য দিকে, ম্যাক্সারের মাধ্যমে শুধু পহেলগাম নয়, জম্মু-কাশ্মীরের আরও বেশ কিছু সামরিক সংবেদনশীল অঞ্চল—পুলওয়ামা, অনন্তনাগ, রাজৌরি, পুঞ্চ এবং বারামুল্লার উপগ্রহ চিত্রেরও অর্ডার আসে।
চিত্রগুলির মূল্য শুরু হয় প্রতি ছবিতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা থেকে এবং রেজোলিউশন অনুযায়ী তা আরও বাড়ে। ৩০ সেন্টিমিটার রেজোলিউশনের ছবিতেই যে পরিমাণ স্পষ্টতা পাওয়া যায়, তা দিয়ে সামরিক পরিকাঠামো, যান চলাচল এমনকি সীমান্তে অনুপ্রবেশও নজরে রাখা সম্ভব।
ভারতের প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলি যেমন ISRO এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ম্যাক্সারের পরিষেবার গ্রাহক হলেও, ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা চাইছেন—এই ধরনের বেসরকারি সংস্থাগুলিকে পাকিস্তানের মতো দেশের সঙ্গে কাজ না করার ব্যাপারে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে চাপ দেওয়া হোক।
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঠিক ১০ দিন আগে, ১২ এপ্রিল, সর্বশেষ অর্ডার দেওয়া হয়েছিল পহেলগাওয়ের ছবির জন্য। হামলার পর, ২৪ এবং ২৯ এপ্রিল আরও দুটি অর্ডার আসে। তারপর থেকে আর কোনও অর্ডার নেই।
ISRO-র এক বিজ্ঞানী বলেন, “উচ্চ রেজোলিউশনের ছবিগুলি বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দা নজরদারিতে ব্যবহৃত হয়। যদিও এই চিত্রগুলি সরাসরি হামলার সঙ্গে যুক্ত কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়, ভারত সরকার ম্যাক্সারের কাছে তদন্ত দাবি করতে পারে।”
ম্যাক্সার টেকনোলজির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
আরও পড়ুন: আইপিএল ২০২৫: ভারত-পাক সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত