জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছুঁয়ে ফেললেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে বেগ পেতে হবে ভারতকে। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে এমনটাই দাবি করেছে সিটিগ্রুপ। সেই পূর্বাভাসকে খণ্ডন করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রক।
মন্ত্রক বলেছে সিটিগ্রুপের রিপোর্টটি “পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেএলইএমএস ডেটার মতো সরকারি উৎস থেকে পাওয়া ব্যাপক এবং ইতিবাচক পরিসংখ্যানগুলির পর্যবেক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে”।
সিটিগ্রুপের রিপোর্ট কী বলা হয়েছে
সিটিগ্রুপের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের পরিপ্রেক্ষিতে, এমনকি আনুমানিক ৭ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী দশকে চাকরির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম হবে না ভারত। আগামী এক দশকে ভারতকে বছরে ১.২ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি যা বলছে, তাতে বৃদ্ধির হার শুধুমাত্র ৮০-৯০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়ক।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সরকারি ভাবে বেকারত্বের হার মাত্র ৩.২ শতাংশ (16 শতাংশ যুব), বিশদ বিবরণগুলি কাজের গুণমান এবং সম্ভাব্য স্বল্প-বেকারত্ব সম্পর্কে গুরুতর সমস্যাগুলি প্রতিফলিত করে। সমস্ত কর্মসংস্থানের প্রায় ৪৬ শতাংশ কৃষি হলেও জিডিপি-তে তার অংশীদারিত্ব ২০ শতাংশেরও কম। যেখানে উৎপাদন এবং পরিষেবা, উভয় ক্ষেত্রই জিডিপি-তে উল্লেখযোগ্য অংশ নিলেও তুলনামূলক ভাবে শ্রমের ক্ষেত্রে সেগুলির অংশীদারিত্ব কম।
রিপোর্টটিতে আরও বলা হয়েছে, শ্রমশক্তির মাত্র ২১ শতাংশের কাছে “বেতনপ্রাপ্ত” চাকরি রয়েছে। যা কোভিড মহামারির আগে ছিল ২৪ শতাংশ। ২০১৮ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের অংশ প্রায় ৬৭ শতাংশে রয়ে গেছে। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।
শ্রমমন্ত্রকের পাল্টা দাবি
সোমবার মন্ত্রক বলেছে সিটিগ্রুপের রিপোর্ট ইতিবাচক প্রবণতা এবং সরকারী উৎস থেকে ব্যাপক তথ্য বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) এবং আরবিআই-এর কেএলইএমএস তথ্য অনুসারে, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত আট কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে ভারত। অর্থাৎ, প্রতি বছর গড়ে দু’কোটির বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে বিশ্ব জুড়ে কোভিড অতিমারি বহুমুখী ভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলা সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরিতে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাশাপাশি, ২০১৭-১৮ সালে যেখানে শ্রমিক জনসংখ্য়ার অনুপাত ছিল ৪৬.৮ শতাংশ, সেটাই ২০২২-২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৫৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৬ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালে সেটা কমে হয়েছে ৩.২ শতাংশ।
এই তথ্যকে সামনে রেখে মন্ত্রক বলেছে, এটি কর্মসংস্থানের উপর সরকারি নীতির ইতিবাচক প্রভাবের একটি সুস্পষ্ট সূচক। সিটিগ্রুপের রিপোর্টে একটি ভয়ানক কর্মসংস্থান পরিস্থিতির ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু সরকারি তথ্য ভারতীয় চাকরি বাজারের আরও আশাব্যঞ্জক ছবি তুলে ধরছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রক জোরের সঙ্গে বলেছে, সিটিগ্রুপের রিপোর্টে উদ্ধৃত ব্যক্তিগত তথ্য উৎসগুলিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থানের অ-মানক সংজ্ঞা এবং পিএলএফএস-এর মতো সরকারি তথ্য উৎসের মতো ততটা শক্তিশালী নমুনা পদ্ধতি নয়।
আরও পড়ুন: ২০২৪ আর্থিক বছরে সাড়ে ৪ কোটির বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে ভারত: আরবিআই রিপোর্ট