উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সংগমে মাসাধিক কাল ধরে চলছে মহাকুম্ভমেলা। প্রয়াগরাজে প্রতি ১২ বছর বসে পূর্ণকুম্ভমেলা। মাঝে হয় অর্ধকুম্ভমেলা। অর্থাৎ প্রতি ছয় বছর অন্তর প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা বসে। একটি পূর্ণকুম্ভমেলার ছয় বছর পরে বসে অর্ধকুম্ভমেলা। এবং অর্ধকুম্ভের ছয় বছর পরে ফের পূর্ণকুম্ভ। এ রকম ১২টি পূর্ণকুম্ভের পরে আসে মহাকুম্ভ যোগ। অর্থাৎ ১৪৪ বছর পরে আসে সেই বিরল যোগটি। এ বছরের পূর্ণকুম্ভমেলা সেই বিরল যোগের মহাকুম্ভমেলা।

চলছে পুণ্যস্নান। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
গত ১৩ জানুয়ারি পৌষী পূর্ণিমা থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রি পর্যন্ত। প্রায় দেড় মাসব্যাপী এই মহাকুম্ভমেলায় শাহী স্নান যোগ রয়েছে ছ’টি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার মাঘী পূর্ণিমার দিনটি ছিল পঞ্চম শাহী স্নানের যোগ। ষষ্ঠ তথা সর্বশেষ শাহী স্নানের যোগ রয়েছে ২৬ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রিতে।

নজরদারি চলছে সংগমে। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
এই বিরল যোগের মহাকুম্ভে ত্রিবেণিসংগমে পুণ্যস্নান করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও মানুষ ছুটে আসছেন। কোটি কোটি মানুষের সমাগম হচ্ছে ত্রিবেণিসংগমে। মহাকুম্ভমেলায় রাত্রিবাসের জন্য যেমন রাজ্য সরকারের তরফে বিলাসবহুল তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনই রয়েছে বিভিন্ন আশ্রম-আখড়ার ব্যবস্থাপনায় সাধারণ তাঁবু। এর বাইরেও বহু মানুষ খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন সাধু-সন্তরা। যেমন এসেছেন পরমার্থ নিকেতনের স্বামী চিদানন্দ সরস্বতী মহারাজ। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
মহাকুম্ভমেলায় তীর্থযাত্রী-পর্যটকদের যে সমাগম হচ্ছে তা বোধহয় সরকারি কর্তৃপক্ষেরও হিসেবের বাইরে ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুসজ ছুটে যাচ্ছেন ট্রেনে তো বটেই, নিজস্ব যানে। ফলে প্রয়াগরাজের বহু বহু আগে থেকেই হচ্ছে যানজট। সেই যানজটের দৈর্ঘ্য নাকি ৩০০ কিমি ছাড়িয়ে গিয়েছে। কুম্ভের ইতিহাসে এ রকম কখনও ঘটেছে বলে জানা যায়নি। ফলে বহু মানুষকে প্রয়াগরাজে ঢুকতে বিপুল বিলম্ব হচ্ছে। সমস্ত পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। তার পর প্রয়াগরাজে পৌঁছে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হচ্ছে সংগমে যাওয়ার জন্য। এত কষ্টের পরেও কিন্তু মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই।

কত মানুষ কত কামনা নিয়ে এসেছেন। বাদ যাননি ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরাও। তাঁদের ক্লাবের সাফল্য কামনা করে ডুব দিতে এসেছেন সংগমে। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
এরই মাঝে বিপত্তিও ঘটেছে মহাকুম্ভমেলায়। একাধিক বার বিভিন্ন তাঁবুতে আগুন লেগেছে। তাতে অবশ্য কোনও জীবনহানি হয়নি। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যার শাহী স্নানে ঘটে যায় পদপিষ্টের ঘটনা। সরকারি মতে সেই ঘটনায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়। তবে বেসরকারি হিসেবে, মৃতের সংখ্যাটা অনেক অনেক বেশি। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ব্যবস্থাপনার ত্রুটিতেই এত বড়ো দুর্ঘটনা ঘটল।
তবে এর পরেও মেলায় আসার ব্যাপারে পুণ্যার্থীদের উৎসাহে এতটুকু ভাটা পড়েনি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি, সাধু-সন্ত থেকে শুরু করে ভিআইপি – এই জনস্রোত চলবে অন্তত মহাশিবরাত্রি পর্যন্ত।