এপ্রিলের ২২ তারিখ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে। এই আবহে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা Moody’s এক কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে পাকিস্তানের ইতিমধ্যেই নড়বড়ে অর্থনীতি মারাত্মক ধসের মুখে পড়বে।
পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন কতটা সংকটে?
মুডিজ় জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত পাকিস্তানের বৃদ্ধির গতি রুখে দিতে পারে এবং তাদের রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করার পরিকল্পনাও ধ্বংস হয়ে যাবে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার এখন মাত্র ১৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ₹১,২৫,৫০০ কোটি), যা আগামী কয়েক বছরে তাদের আন্তর্জাতিক ঋণ শোধের জন্য যথেষ্ট নয়।
বিপরীতে, ভারতের রিজার্ভ রয়েছে ৬৮৮ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ₹৫৭,৫০,৮০০ কোটি) — যা অত্যন্ত মজবুত। মুডিজ় বলেছে, ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল, কারণ সরকারী বিনিয়োগ ও ব্যক্তিগত খরচের উপর নির্ভরতা রয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত খরচ রাজস্ব ঘাটতি কমানোর পথে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া
পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারত ইন্দাস জলের চুক্তি (Indus Waters Treaty) স্থগিত করেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ করেছে, আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে ভারতের রপ্তানি মোট রপ্তানির মাত্র ০.৫ শতাংশের কম, তাই এই উত্তেজনার ভারতীয় অর্থনীতিতে কোনও বড় প্রভাব পড়বে না।
পাকিস্তানের বাস্তব সংকট
২০২৩ সালে প্রায় ঋণখেলাপি হয়ে পড়ার পরে পাকিস্তান ৩ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ₹২৫,০০০ কোটি) মূল্যের IMF বেলআউট পেয়েছে। চিন, সৌদি আরব ও UAE-র সহায়তাও পেয়েছে ইসলামাবাদ। গত মাসে IMF আরও ১.৩ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ₹১০,৮০০ কোটি) মূল্যের ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ঋণ ও ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ₹৮,৩০০ কোটি) পরিশোধযোগ্য ঋণ মঞ্জুর করেছে।
তবে এসব সত্ত্বেও, পাকিস্তানের অর্থনীতি এখনও অত্যন্ত দুর্বল। প্রায় ৫০ শতাংশ সরকারি আয় সুদের কিস্তি শোধে খরচ হয় এবং পাবলিক ডেট (ঋণ) এখন GDP-র ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
‘সীমিত যুদ্ধ হলেও ভয়াবহ’ — মুডিজ়ের বার্তা
মুডিজ়ের মতে, এমন একটি পরিস্থিতিতে সামরিক সংঘাত, তা সীমিত আকারের হলেও, ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিমধ্যেই IMF-এর শর্ত ও বিদেশি ঋণের পুনর্গঠনের চাপে হাঁসফাঁস করছে পাকিস্তান। এর মধ্যে ভারত-পাক উত্তেজনা যদি সামরিক সংঘর্ষে পরিণত হয়, তাহলে গত ১৮ মাসে যেটুকু আর্থিক উন্নতি হয়েছে, তা পুরোপুরি উড়ে যেতে পারে। দেশটি ফের ঋণখেলাপির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে।