নাগপুরের মহাল এলাকায় সোমবার রাতে ছড়িয়ে পড়ে হিংসার ঘটনা। সেই ঘটনায় গ্রেফতার মাইনরিটিজ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) সভাপতি ফাহিম খান। পুলিশের ধারণা, হিংসার ঘটনায় অন্যতম উসকানিদাতা ফাহিম।
গণেশপেঠ থানার পুলিশ ফাহিম গ্রেফতার করে। তিনি যশোধরা নগর এলাকার বাসিন্দা। ফাহিম-সহ ২৬ জনকে ২১ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
অভিযোগ দায়েরের পর, গণেশপেঠ থানার বাইরে দাঁড়িয়ে পুলিশের ভূমিকা ও সংখ্যালঘু কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করেন ফাহিম। যা পরে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, শুরুতে এফআইআরে নাম ছিল না ফাহিমের। তবে জনতাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই জনতাই পরে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং শহরের কেন্দ্রে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মহাল এলাকা।
একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তিনি যদি মূল ষড়যন্ত্রকারী নাও হন, তবে নিশ্চিতভাবেই উসকানিদাতা ছিলেন। জনতাকে পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কানি দিতে দেখেছি আমরা।”
সোমবার গভীর রাতে ছড়িয়ে পড়া হিংসার ঘটনায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এই সংঘর্ষ আরএসএস সদর দফতরের মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে শুরু হয়, যেখানে ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন দাঙ্গা দমন কমান্ডো, দুই আইপিএস অফিসার ও দুই জন দমকলকর্মী আহত হন।
বিক্ষুব্ধ জনতা দুটি জেসিবি মেশিন, ৪০টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নাগপুর সংঘর্ষের রিপোর্ট চেয়েছে।
সূত্রের দাবি, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গুজব ছড়িয়ে পড়ায়। ডানপন্থী কর্মীরা মহাল গেটের কাছে শিবাজি মূর্তির সামনে ঔরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা এবং ধর্মীয় চাদর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে গুজব ছড়ায়।
বিক্ষোভকারীরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালে চিৎনিস পার্ক চকে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক পাথর ছোঁড়া হয়। হিংসা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের পক্ষ থেকে ১৬৩ ধারার আওতায় কারফিউ জারি করা হয়।
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হাজারেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, বিশেষ করে মহাল, চিৎনিস পার্ক ও ভলদারপুরা এলাকায়। ফোয়ারা চক, গান্ধী পুতলা চক ও বদকাস চক সিল করে দেওয়া হয়। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
নাগপুর পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (এটিএস) মিলে ঘটনার তদন্ত করছে। পুলিশের ধারণা, সংঘর্ষ ছড়ানোর পেছনে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত মিথ্যা তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এখন পর্যন্ত ছয়টি এফআইআরে ১,২০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের সদস্যরাও রয়েছেন। সংঘর্ষে ৭০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৪ জন পুলিশ সদস্য। দু’জন সাধারণ নাগরিক আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গণেশপেঠ থানায় দায়ের করা একটি এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংঘর্ষ চলাকালীন এক মহিলা পুলিশ অফিসারকে হেনস্থা করা হয়।
এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ওই অফিসারের পোশাক ও শরীরে হাত দেয় এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে।
পুলিশ জানিয়েছে, দাঙ্গাকারীরা সংঘর্ষের সময় পেট্রোল বোমা ও পাথর ছুড়ে মারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে।