অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে নিজের স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে স্থানীয় এক জনের ১০ কিমি রাস্তা হেঁটে যাওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। বেঙ্গালুরুতে ওড়িশার বিনিয়োগকারীদের এক সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নবীন বলেন, ওড়িশা সরকার এই বিষয় তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন নবীন।
প্রসঙ্গত বুধবার ভবানিপটনার সরকারি হাসপাতালে নিজের স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ার পর, তাঁর দেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও সাহায্য পাননি বছর বেয়াল্লিশের দানা মাঝি। ভবানিপটনা শহর থেকে ৬৭ কিমি দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম মেঘলার বাসিন্দা দানা নিজের যক্ষ্মা-আক্রান্ত স্ত্রী আমাঙ্গা দেইকে ভর্তি করিয়েছিলেন এই সরকারি হাসপাতালে। অল্প কিছু অর্থ জোগাড় করলেও, স্ত্রীর চিকিৎসাতেই সেই টাকা শেষ হয়ে যায়। দেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর কোনও টাকা ছিল না দানার কাছে। তিনি জানান, স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। এর পরই ১২ বছরের কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে হেঁটেই গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন দানা। এ রকম ভাবে প্রায় ১০ কিমি হাঁটার পর খবর যায় সংবাদমাধ্যমের কাছে। প্রশাসনের নজর আকর্ষণ করা হয়। ব্যবস্থা হয় অ্যাম্বুলেন্সের।
এই প্রসঙ্গে শুক্রবার নবীন বলেন, “এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এ রকমএ ঘটনা যাতে কখনও না ঘটে সেই দিকে নজর দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর জানিয়েছেন, মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্য দিকে, ওড়িশার মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনায় কালাহান্ডির জেলাশাসক আর জেলার প্রধান মেডিক্যাল অফিসারের থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শুক্রবার দানা মাঝির সঙ্গে দেখা করেন জেলাশাসক ব্রুন্ধা ডি। ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। দানার পরিবারকে ক্ষতিপূরণস্বরূপ ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস।
তবে এই ঘটনায়, ওড়িশায় আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের করুণ দশার ছবিটা আবার সামনে এল বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।