ওয়েবডেস্ক: এক জেডিইউ নেতা যখন বলেন, “নতুন সরকারে বিজেপি কী পায়নি? হেরো দল হলেও বেশ কিছু মন্ত্রিত্ব পেয়েছে, উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছে বিজেপি থেকে। বদলে আমরা কী পেলাম?” তখন এটাই বোঝা যায় যে কেন্দ্রীয় শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে জেডিইউর।
বিহারের মতো ‘পিছিয়ে পড়া’ রাজ্যকে বিশেষ শ্রেণিভুক্ত করার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই শরিক বিজেপির ওপরে চাপ বাড়াচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মঙ্গলবার এই মর্মে সুর আরও চড়িয়েছেন তিনি। অর্থ কমিশনের কাছে দুই পাতার চিঠি দিয়ে নীতীশ দাবি করেছেন, বিহারকে যেন একটু ‘বিশেষ’ ভাবে দেখা হয়।
এই সব ঘটনার পরেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে যে ভোলবদলে খ্যাত নীতীশ কি আরও একটা ‘ইউ-টার্ন’-এর পথে? গত বছর আগস্টে আরজেডি এবং কংগ্রেসকে নিয়ে তৈরি হওয়া মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে বিজেপির সঙ্গে ফের জোটবদ্ধ হয়েছিলেন নীতীশ।
জেডিইউ নেতারা যতই বলুন এখনই বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করা হবে না, রাজনৈতিক মহলের ধারণা বিজেপির আচরণে নীতীশ বেজায় ক্ষুব্ধ। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং শাসনব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রের শাসকের বিরুদ্ধে অসন্তোষ চরমে নীতীশের দলের।
জেডিইউর এক নেতার মতে, শরিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে আলোচনা করার বিশেষ প্রয়োজন মনে করে না বিজেপি। আপাতত এনডিএ-এর শরিক থাকলেও, বিরোধী দলগুলি যে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সে কথা জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক কেসি ত্যাগী। তিনি বলেন, “আমরা এখনও এনডিএতেই রয়েছি। কোনো অ-বিজেপি শক্তির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছি না। কিন্তু এখন কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং বামেদের তরফ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।”
সামনের বছর লোকসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতার ব্যাপারেও বিজেপি এবং জেডিইউয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বিহারে ৪০টি লোকসভা আসন রয়েছে। ২০১৩-তে এনডিএ থেকে জেডিইউ বেরিয়ে যাওয়ার আগে জেডিইউ এবং বিজেপির মধ্যে ২৫:১৫ ফর্মুলায় আসন সমঝোতা হত। এ বার এনডিএ-এর শরিক বিহারের আরও দুই দল রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি এবং উপেন্দ্র খুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি। সবাইকে সন্তুষ্ট করতে হলে জেডিইউ যে ২৫ আসন পাবে না সেটা ভালো করেই বুঝে গিয়েছে দল। কিন্তু তবুও তারা ২৫ আসনের থেকে একটু নামতে রাজি নয়।
এক নেতার মতে, “কেউ যদি বলে নীতীশের জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুল। ২০১৪-এর নির্বাচনের বিধানসভাভিত্তিক ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বিজেপি এগিয়ে ছিল ১৭৩টি আসনে। তার ঠিক পরের বছর নীতীশ মহাজোটে যোগ দিলে বিজেপির আসন কমে যায় মাত্র ৬০-এ।” সুতরাং নীতীশের প্রতি কোনো রকম ‘অসম্মান’ মেনে নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন ওই নেতা।
অতএব বিহারের নাটক এখন জনজমাট। আগামী দিনে গঙ্গা দিয়ে রাজনৈতিক জল কতটা গড়ায় সেটাই দেখার।