পটনা: জেডিইউয়ে বিভাজন সুস্পষ্ট। এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলছেন, ২০১৯-এর নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা কারও নেই, অন্য দিকে দলের বর্ষীয়ান নেতা শরদ যাদব বলেছেন, নীতীশের সিদ্ধান্তে বিহারের মানুষের রায়কে অসম্মান করা হয়েছে।
সপ্তাহ খানেক আগে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে বিহারে নতুন করে সরকার গড়ার পর সোমবারই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন নীতীশ কুমার। তিনি বলেন, ২০১৯-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পুনর্নির্বাচন অবধারিত। তাঁর মোকাবিলা করার ক্ষমতা কারওরই নেই।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং বিমুদ্রাকরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে নীতীশ বলেন, “তাঁর ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আশা করি, তিনি বেশ বড়ো রকম ভাবে বেনামী সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারবেন।”
জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা অস্বীকার করে নীতীশ বলেন, “জাতীয় রাজনীতিতে আমার ভূমিকা দেশের অন্যতম একটি বড়ো রাজ্যকে সেবা করায় সীমাবদ্ধ।”
চার বছর পর বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন নীতীশ কুমার। ২০১৩-য় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণার পর তিনি বিজেপি-র সঙ্গে এক দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসেন। একই সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভার বিজেপি মন্ত্রীদের প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দেন।
অসম্মান করা হয়েছে বিহারের রায়কে, বললেন শরদ যাদব।
বিজেপি-র গোষ্ঠীতে নীতীশের আবার ফিরে আসা ভালো ভাবে নেয়নি তাঁর দলের অনেকেই। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দলের প্রাক্তন সভাপতি শরদ যাদব।
সোমবার সংসদের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তে বিহারের মানুষের রায়কে অসম্মান করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই। এটা খুব হতাশাজনক। বিহারের জনগণ এর জন্য রায় দেননি। তাঁরা মহাজোটকেই ভোট দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিহারের মানুষকে অসম্মান করা হল।”
প্রসঙ্গত, গত বছরই শরদকে দলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে নিজেই ওই পদটি নেন নীতীশ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের সময়ে সমস্ত দলগত সিদ্ধান্ত যাতে তিনিই নিতে পারেন সে জন্যই এমনটি করেছিলেন নীতীশ, এমনই মত ছিল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। নীতীশের বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও, সূত্রের খবর, বিরোধী দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছিলেন শরদ। এমনকি রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বাছাইয়ের সময়েও বিরোধীদের বৈঠকে হাজির ছিলেন এই প্রবীণ নেতা।
শরদ যাদব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, এমন দাবি করেছেন আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁর কথায়, “উনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং আমাদের দিকে তিনি থাকবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।” এর পর শরদ যাদবের প্রতি আরও সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়ে লালু বলেন, “শরদজি আমাদের নেতা। আমি তাঁকে আবেদন জানাচ্ছি যে বিজেপির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে উনি আমাদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিন।”
এমনিতে গত কয়েক দিন ধরেই একের পর এক টুইটে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করতে ছাড়েননি এই জেডিইউ সাংসদ। রবিবার তিনি টুইটে জানান, “সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরানোর, কিন্তু সেটা তো হয়ইনি, আবার পানামা পেপারে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” এর আগের দিন, সেস কর নেওয়ার ব্যাপারেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তার আগের দিন শস্যবিমা যোজনা নিয়েও কেন্দ্রকে একহাত নেন শরদ।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।