কোভিড মহামারির সমস্যা সত্ত্বেও ভারতে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। অর্থনৈতিক ভাবে ভারতের শক্তি যেমন বাড়ছে, তেমনই দেশে দারিদ্র্যও কমছে। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে দেখা গেছে যে গত ১২ বছরে ভারতে দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। এই সময়কালের মাঝের বছরগুলিতে মহামারি হওয়া সত্ত্বেও এই সাফল্য যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
দারিদ্র্য নেমে এসেছে ৮.৫ শতাংশে
সংবাদ সংস্থা পিটিআই অর্থনৈতিক গবেষক সংস্থা এনসিএইআর-এর ‘রিথিঙ্কিং সোশ্যাল সেফটি নেটস ইন আ চ্যালেঞ্জিং সোসাইটি’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটির উদ্ধৃতি দিয়ে একটি রিপোর্টে বলেছে, ২০২২-২৪ সালে দেশে দারিদ্র্য ৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গবেষকরা বলেছেন, ২০১১-১২ সালে ভারতে এই দারিদ্র্যের হার ছিল ২১.২ শতাংশ। এর মানে হল গত ১০-১২ বছরে ভারতে দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। এটি এমন একটি সময়ে ঘটেছে যখন ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এ দেশের অর্থনীতির আকার এখন ৪,০০,০০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। সব মিলিয়ে এনসিএইআর-এর প্রতিবেদনে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, গত দুই দশকে ভারতে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
আইএইচডিএস-এর তথ্য
এনসিএইআর এই গবেষণাপত্রের জন্য ইন্ডিয়া হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সার্ভে (আইএইচডিএস) এর সর্বশেষ ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে। আইএইচডিএস-এর তথ্য অনুসারে, ২০০৪-০৫ সালে ভারতে দারিদ্র্যের অনুপাত ছিল ৩৮.৬ শতাংশ, যা ২০১১-১২ সালে ২১.২ শতাংশে নেমে এসেছিল। সেই হ্রাসের প্রবণতা সমানতালে বজায় রয়েছে। ফলে ২০২২-২৪ সালে দারিদ্র্যের অনুপাত ৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
আইএইচডিএস সম্প্রতি নতুন ডেটা (ওয়েভ-৩) তৈরি করেছে। গবেষণায় পুরনো তথ্যও (ওয়েভ-১ ও ওয়েভ-২) ব্যবহার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, গত ১০-১২ বছরে দারিদ্র্য হ্রাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ মাঝের বছরগুলি মহামারি প্রভাবিত হয়েছিল। মহামারির কারণে ভারত-সহ সারা বিশ্বে বিপুল সংখ্যক মানুষ আবারও দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়তে বাধ্য হয়েছে।
প্রয়োজন কৌশলী পদক্ষেপ
এনসিএইআর বলছে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি এবং দারিদ্র্য হ্রাস একটি গতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে, যে কারণে নতুন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণয়নের ঐতিহ্যগত কৌশল দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য দূরীকরণের উপর জোর দেয়। কিন্তু, ঐতিহ্যগত কৌশলগুলি বর্তমান পরিস্থিতিতে সে ভাবে কার্যকর না-ও হতে পারে। ফলে নীতি তৈরির ক্ষেত্রে আরও কৌশলী পদক্ষেপ করতে হবে। বদলে যাওয়া সমাজের দিকে তাকিয়ে সামাজিক প্রকল্প তৈরি করতে হবে বলেই পরামর্শ এনসিএইআর-এর।
গবেষণাপত্রটিতে দাবি করা হয়েছে, যখন অর্থনৈতিক বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং সুযোগগুলি ক্রমশ প্রসারিত হয়। এর ফলে দারিদ্র্যের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগুলির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসুস্থতা বা মৃত্যু, কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ সুযোগ, ইত্যাদি দারিদ্র্যের জন্য আরও সংবেদনশীল ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। এর মানে হল যে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, জন্মগত ভাবে পাওয়া দারিদ্র্য থেকে মুক্তি মিলতেই পারে। যে পরিবারগুলি আগে থেকেই দরিদ্র শ্রেণিতে ছিল, পরবর্তীতে তারা এর আওতার বাইরে চলে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমন অবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী সামাজিক কৌশল নিতে হবে সরকারকে।
আরও পড়ুন: ২৫০০০ টাকার মধ্যে ১০টি বাছাই মোবাইল