পটনা: বিহারের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন অধ্যায় সূচনা করলেন বিশিষ্ট নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর তিনি বুধবার নিজের ‘জন সুরাজ’ উদ্যোগকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করলেন। নতুন দলটি বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সমস্ত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রাক্তন ভারতীয় বিদেশ পরিষেবা অফিসার মনোজ ভারতী। দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, যদি তারা ক্ষমতায় আসে, তবে বিহারে চালু থাকা মদ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে এবং সেই রাজস্ব শিক্ষাখাতের উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে।
প্রশান্ত কিশোর নিজের দল জন সুরাজের মাধ্যমে রাজনীতির ধারা বদলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর মতে, বিহারের মানুষ বিগত ২৫-৩০ বছর ধরে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) বা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য ভোট দিয়ে আসছে। প্রশান্ত কিশোর বলেন, “এই বাধ্যবাধকতা বন্ধ হওয়া উচিত। বিকল্প থাকতে হবে। বংশ পরম্পরা ক্রমে আসা ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নয়, উচিত যাঁরা বাস্তবিক পরিবর্তন আনতে চায়, তাঁদের সুযোগ দেওয়া।”
গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত কিশোর বিহার জুড়ে যাত্রা করে আসছেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য। তাঁর মতে, এই যাত্রার মূল উদ্দেশ্য হল জনগণের সামনে এমন একটি নির্বাচনী এজেন্ডা উপস্থাপন করা যা রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেবে। ভোটাররা শুধুমাত্র জাতি বা নির্বাচনী প্রলোভনের প্রেক্ষিতে ভোট দেবেন না। কিশোরের বিশ্বাস, ভোটের লক্ষ্য হওয়া উচিত বিহারের ভবিষ্যৎ গঠনে সহযোগিতা করা।
প্রশান্ত কিশোর জন সুরাজ শুরু করেছিলেন একটি ‘যাত্রা’ দিয়ে এবং এখন এই দলটিকে একটি রাজনৈতিক রূপ দেওয়া হল। তিনি বলেন, এটি তাঁর রাজনৈতিক যাত্রার শুধুমাত্র অর্ধেক পথ। বিহারের প্রতিটি গ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কিশোর বলেন, তিনি গ্রামবাসীদের জীবনের মান উন্নত করতে এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎকে উন্নত করার বিষয়ে সচেতন করবেন। তিনি লোকজনকে উৎসাহিত করতে চান যাতে তারা ভুল নেতাদের চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে এবং বিহারের উন্নতির জন্য ভোট দেয়। তাঁর মতে, শিক্ষাক্ষেত্র, কৃষি এবং কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠিতে বিহারের উন্নতি ঘটাতে হবে।
এর আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল ইউনাইটেডে (জেডিইউ) কিছুদিন ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। এর পরে তাঁর কংগ্রেসেও যোগ দেওয়ার আলোচনা হয়েছিল। তবে কংগ্রেসের প্রস্তাবিত ‘এমপাওয়ারড অ্যাকশন গ্রুপ’-এ যোগ না দিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে কংগ্রেসের কাছে দলীয় গঠনমূলক সমস্যা সমাধানে “সমষ্টিগত ইচ্ছাশক্তির অভাব” রয়েছে।
জানা গিয়েছে, জন সুরাজের পরবর্তী পর্যায়ে প্রশান্ত কিশোর বিহারের সমস্যাগুলোর জন্য একটি সমাধানের রূপরেখা তৈরি করবেন। তাঁর লক্ষ্য রাজ্যের উন্নয়নের পথে চলতে জনগণকে শিক্ষিত করা এবং বাস্তবসম্মত পরিবর্তন আনতে কাজ করা।