পুরীর পবিত্র ঐতিহ্য রক্ষায় এবার কপিরাইটের পথে শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসন। দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরকে ‘জগন্নাথ ধাম’ বলায় ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক।
সোমবার পুরীতে শ্রীজগন্নাথ মন্দির পরিচালন কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘শ্রীমন্দির’, ‘জগন্নাথ ধাম’, ‘মহাপ্রসাদ’, ‘শ্রীক্ষেত্র’, ‘পুরুষোত্তম ধাম’ ও ‘শ্রীমন্দিরের লোগো’– এই শব্দ ও প্রতীকগুলির উপর কপিরাইটের জন্য আবেদন করা হবে।
SJTA-র মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাধী জানান, “জগন্নাথ মন্দিরের পবিত্রতা ও পরিচিতি রক্ষার জন্যই এই আইনগত পদক্ষেপ। এসব শব্দের নির্বিচার ব্যবহার রুখতেই এই উদ্যোগ।”
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন করে সেটিকে ‘জগন্নাথ ধাম’ বলে উল্লেখ করেন। এই নামকরণ ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওড়িশার বহু জগন্নাথভক্ত, কারণ ধর্মগ্রন্থ ও আদিশঙ্করাচার্যের মতে, চার ধামের একটি হল পুরী। সেই ‘ধাম’ শব্দ দিঘার মতো স্থানের জন্য ব্যবহারে অনেকেই মনে করছেন, পুরীর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন পুরীর মহারাজা গজপতি দিব্যসিংহ দেবও। তিনি SJTA এবং রাজ্য সরকারকে তৎপর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “‘শ্রীক্ষেত্র’, ‘নীলাচল ধাম’, ‘শ্রীমন্দির’ বা ‘জগন্নাথ ধাম’ শব্দগুলি শুধুই পুরীর জন্য প্রযোজ্য। এই নাম অন্যত্র ব্যবহার বিশ্বাসীদের হৃদয়ে আঘাত হানে।”
দৈতাপতি নিযোগ-এর সম্পাদক রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র দাবি করেছেন, দিঘার মন্দিরে ব্যবহৃত প্রতিমাগুলির কাঠ পুরীর নবকলেবর অনুষ্ঠানের অব্যবহৃত কাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটিও অনেকের মতে অবমাননাকর। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীও একই দাবি করেছিলেন। কিন্তু সেই দাবি ইতিমধ্যেই খারিজ হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই দাবির তীব্র সমালোচনা করেছেন।
রাজনৈতিক চাপানউতোরও কম নয়। বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র ও শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মন্দির নির্মাণ ও নামকরণ করেছে।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, দিঘার মন্দির থেকে ‘জগন্নাথ ধাম’ নামটি বাদ দেওয়া হোক। তবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই দাবিতে কর্ণপাত করেননি।
ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনীতির টানাপোড়েনে পুরী বনাম দিঘা দ্বন্দ্ব এখন জাতীয় স্তরের বিতর্কে রূপ নিচ্ছে। এর মধ্যেই ‘শ্রীমন্দির’ ও ‘জগন্নাথ ধাম’–এর পবিত্রতা রক্ষায় পুরীর কপিরাইট পদক্ষেপ নতুন বিতর্ক তৈরি করবে?