সোমবার রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাংবাদিক বৈঠকের সময়। ছবি : রাজীব বসু
নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ড ও চিকিৎসকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হল। শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার বিষয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংয়ের মধ্যে এই বিষয়ে তর্ক বাঁধতে দেখা দেয়।
শুনানির মাঝে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল প্রশ্ন তোলেন, “কবে কাজে ফিরবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা?” তাঁর বক্তব্য ছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই আশ্বাস দিয়েছেন এবং এ নিয়ে আরও কিছু চাইলে সেটা পরিষ্কার করতে হবে। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, “চিকিৎসকরা কাজে ফিরতে চান। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ভয় কাজ করছে, কারণ যারা এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তারা এখনও হাসপাতালে ঘোরাফেরা করছে। ফলে কাজে ফেরার পরও তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।”
ইন্দিরা জয়সিং আরও বলেন, “আমরা কাজে ফিরতে চাই, কিন্তু ফিয়ার সাইকোসিস (ভয়ের পরিবেশ) কাজ করছে। যদি নিশ্চয়তা পাওয়া যায় যে, অপরাধীরা শাস্তি পাবে এবং চিকিৎসকরা নিরাপদে কাজ করতে পারবেন, তাহলে আমরা কাজে ফিরব।” এই মন্তব্যে রাজ্যের আইনজীবী সিব্বল পাল্টা প্রশ্ন করেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিবৃতি দিয়েছেন যে, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তাহলে আর কী চাই?”
কিন্তু সিব্বলের এই সওয়াল কার্যত ধোপে টেকেনি ইন্দিরার সামনে। ইন্দিরা জয়সিং স্পষ্ট জানান, “চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনও দৃঢ় ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি, এবং তাঁরা নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না।”
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী আশ্বাস দিয়েছেন, তা জানতে চান। সিব্বল জানান, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এছাড়াও, জুনিয়র ডাক্তাররা জেনারেল বডি মিটিং (জিবি মিটিং) করেই কাজে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে ইন্দিরা জয়সিং স্পষ্ট করে বলেন, “কবে জিবি মিটিং হবে, আমি এখনই তার কোনও নির্দিষ্ট তারিখ দিতে পারছি না।”
শুনানির শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, পূর্ববর্তী নির্দেশ, যা চিকিৎসকদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল, তা বহাল থাকবে। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন যে, এই নির্দেশ কার্যকর করতে হলে চিকিৎসকদের মতামতের ওপরই নির্ভর করতে হবে। তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে, যাতে তাঁরা নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেন।”