শৈশব থেকেই মূক ও বধির হওয়ায় একাকিত্বকে তীব্র ভাবে অনুভব করেছেন দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা রূপমণি ছেত্রী। সেসময় দার্জিলিংয়ে কোনো মূক ও বধিরদের নির্দিষ্ট স্কুল ছিল না। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার প্রতিষ্ঠান ছিল না দার্জিলিংয়ে। তাই রূপমণিকে বাধ্য হয়ে স্পিচ থেরাপি করতে হয়। তাঁর মতো অন্য কাউকে যাতে অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয় তার জন্য সাইনেবল কমিউনিকেশনস্ (Signable Communications) নামে বিশেষ মোবাইল অ্যাপ খুলেছেন রূপমণি।
রূপমণির নিজের কথায়, “মূক ও বধির হওয়ায় পরিবারে বৈষম্যের শিকার হই। কেউ আমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলত না। স্কুলে শিক্ষকরা যা বলতেন শুনতে পেতাম না, তাই ভালো করে বুঝতে পারতাম না।”
রূপমণির বাবা নিরাপত্তারক্ষী। সামান্য যা আয় ছিল তাতেই মেয়েকে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেন। সহপাঠীদের নোটস দেখে নিজে নিজেই পড়াশোনা করতেন রূপমণি। বয়স যখন ন’-দশ বছর তখন থেকেই নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে কাজ করতে শুরু করেন রূপমণি। নবম শ্রেণির পরই দিল্লির বাসিন্দা তাঁরই মতো এক মূক ও বধির যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় রূপমণি ছেত্রীর। দিল্লিতে চলে আসার পর সাহসের সঙ্গে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেন রূপমণি। তাঁর বিয়ে টেকেনি। পরিজনদের পাশে পাননি।
২০১১ সালে রূপমণির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর নিজের পায়ে দাঁড়াতে ফের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করার পর সমাজবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হন। দিল্লিতে থাকার সময় অন্য মূক ও বধির ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রূপমণির। শারীরিক দিক থেকে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করা গীতা শর্মা ও জাভেদ আবিদির সঙ্গে দেখা হয় রূপমণির। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার ইচ্ছে জাগে রূপমণির। তিনি নয়ডা ডেফ সোসাইটি ও দ্য ওয়ে ডেফ নামক সংস্থার সাহায্যে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখেন।
ন্যাশনাল অ্যাসেসিয়েশন অফ দ্য ডেফ নামক সংস্থার সঙ্গে ছ’ বছর কাজ করতে গিয়েই তিনি ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পান। তিনি দেখেন ভিডিও রিলে সার্ভিসের মাধ্যমে বিশেষ ভাবে উপকৃত হন মূক ও বধিররা। সেই ভাবনা থেকেই বিশেষ অ্যাপ তৈরির কথা ভাবেন। এমন এক অ্যাপ যার সাহায্যে সবকিছুই খুব কম খরচে আঙুলের ডগায় থাকবে মূক ও বধির ব্যক্তিদের।