খবর অনলাইন: রাজনৈতিক ডামাডোলে রাজ্যপালদের চোখ-কান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি ‘ঘোড়া কেনাবেচা’ চললেও রাজ্যপাল নাক গলাবেন না যত ক্ষণ মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। অরুণাচল প্রদেশের ঘটনাবলিতে রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়ার ভূমিকার সমালোচনা করে এ ভাবেই রাজ্যপালদের স্বাধীন ক্ষমতায় লাগাম পরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি জে এস খেহর, বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি মদন বি লকুর, বিচারপতি পি সি ঘোষ এবং বিচারপতি এন ভি রমান্নাকে নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ তাদের সর্বসম্মত রায়ে বলেছে, “একটা দলের ভেতরের কার্যকলাপ দলীয় কর্মীদের মধ্যে যতই আলোড়ন বা অশান্তি সৃষ্টি করুক তা নিয়ে রাজপালের চিন্তা করার কিছু নেই। কোনও রাজনৈতিক ঝামেলায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলা রাজ্যপালের কাজের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। কোনও রকম ঘোড়া কেনাবেচা, নোংরা রাজনৈতিক ধান্দাবাজি, নীতির দিক থেকে তা যতই বিতৃষ্ণাদায়ক হোক, রাজ্যপালকে তা থেকে দূরে থাকতে হবে। কে দলের নেতা হবেন বা হবেন না, সেটা রাজনৈতিক প্রশ্ন, দলই সেটা ঠিক করবে। এই সব প্রশ্নগুলোকে রাজ্যপাল তাঁর বিবেচনার বিষয় করতে পারেন না।”
শীর্ষ আদালত বলেছে, “জনগণের প্রতিনিধিদের উপরে কর্তৃত্ব ফলানোর ক্ষমতা রাজ্যপালের থাকতে পারে না।” স্পিকারের অপসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য বিধানসভার অধিবেশন এগিয়ে আনার যে যুক্তি রাজ্যপাল দিয়েছেন তা খণ্ডন করে আদালত বলেছে, “স্পিকারের অপসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যপালের ভূমিকা বোধের বাইরে এবং তা মেনে নেওয়া যায় না। এই ভূমিকাকে অন্যায় বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।”
বেঞ্চ বলেছে, “রাজ্যপাল স্পিকারের গাইড বা গুরু নন। রাজ্যপাল সংবিধানগত ভাবে যে রকম মনে করবেন, স্পিকার সে ভাবে কাজ করবেন, তা হয় না। রাজ্যপাল ও স্পিকার, উভয়েরই স্বাধীন সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে।” বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কদের প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল রাজখোয়া বিধানসভার অধিবেশন ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৪ ডিসেম্বর এগিয়ে এনেছিলেন। রাজ্যপালের এই ভূমিকার সমালোচনা করে বেঞ্চ বলেছে, “স্পিকারের অপসারণের প্রক্রিয়ায় রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা নেই।” বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কদের পক্ষ নেওয়ায় রাজ্যপালকে ভর্তসনা করে বেঞ্চ বলেছে, “কোনও দলের মধ্যে বিরোধ বা বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে বিরোধ মেটানোর কোনও ক্ষমতা সংবিধান রাজ্যপালকে দেয়নি। ওই বিরোধ মেটানোর জন্য নিজের সাংবিধানিক পদের মাধ্যমে নিজের সাংবিধানিক কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা রাজ্যপালের ক্ষমতার বাইরে।”
শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ যদি বিধানসভায় আস্থা হারায় এক মাত্র সে ক্ষেত্রেই রাজ্যপাল সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদ মোতাবেক তাঁর স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। টুকি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন, এ কথা রাজ্যপাল জে পি রাজখোয়া তাঁর রিপোর্টে লেখেননি। সুতরাং বিধানসভার অধিবেশন এগিয়ে আনার ব্যাপারে রাজ্যপাল তাঁর স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।