সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ (Socialist) ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (Secularism) শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনটি দায়ের করেছিলেন প্রাক্তন রাজ্যসভা সদস্য সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় এবং বলরাম সিং। উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে সংবিধানের ৪২তম সংশোধনের মাধ্যমে এই শব্দগুলি প্রস্তাবনায় যুক্ত হয়।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এই মামলার রায়ে স্পষ্ট করে বলেন, সংবিধান, এমনকি তার প্রস্তাবনাও সংশোধন করার অধিকার সংসদের রয়েছে। বেঞ্চ আরও জানায় যে, ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দগুলি ভারতের মূল কাঠামোর অংশ এবং এগুলি ভারতীয় প্রেক্ষাপটে যথাযথ। পশ্চিমী ধাঁচে এই শব্দগুলির অর্থ ব্যাখ্যা করা উচিত নয় বলেও মত দেয় আদালত।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর যুক্তি ছিল, সংবিধানের প্রস্তাবনা কোনোভাবেই সংশোধনযোগ্য নয়। তবে আদালত জানায়, ১৯৪৯ সালে সংবিধান গৃহীত হওয়ার বিষয়টি প্রস্তাবনার সংশোধনযোগ্যতায় কোনো প্রভাব ফেলে না। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “যে যুক্তিতে প্রস্তাবনার এই সংশোধনটি অবৈধ বলা হচ্ছে, সেই যুক্তি মানলে সংবিধানের সব সংশোধনী প্রশ্নের মুখে পড়বে।”
‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দগুলির অর্থ
প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি ভারতীয় রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার প্রতি প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে। এটি একটি মিশ্র অর্থনীতির ধারণাকে বোঝায়, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র একসঙ্গে কাজ করবে। অন্যদিকে, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি বোঝায় যে ভারত কোনো সরকারি ধর্ম গ্রহণ করে না। এটি সমস্ত ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি মেনে চলে।
ওয়াকবিহাল মহলের মতে, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের মূল নীতিগুলিকে সুরক্ষিত রাখার গুরুত্ব আবারও এক বার তুলে ধরল।