নয়াদিল্লি: এক দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রক্ষণশীল নেতার মার্কিন মসনদে বসা, অন্য দিকে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে তেলের দাম কমে যাওয়া। এই দুয়ের প্রভাবে বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের কাজ হারানোর আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। এমনই জানা গিয়েছে ‘নিয়োগ এবং অর্থপ্রেরণ’ সংক্রান্ত তথ্যে।
ওই তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, পশ্চিম এশিয়ার ছ’টি দেশে ২০১৫-তে যত ভারতীয় চাকরি পেয়েছিলেন, ২০১৬-তে সেই সংখ্যা প্রায় ৩৩ শতাংশ কমে গিয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ার দেশে কর্মরত ভারতীয়রা তাঁদের বাড়িতে অর্থাৎ ভারতে টাকা পাঠান। এর ফলে ভারতের অর্থনীতিও লাভবান হয়। কিন্তু চাকরি পাওয়ার প্রবণতা কমার ফলে কমছে এ দেশে পাঠানো অর্থের পরিমাণও। বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি তথ্য বলছে, ২০১৫-এর তুলনায় পরের ২০১৬-তে এ দেশে পাঠানো অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে।
উল্লেখ্য ২০১৪-তে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির থেকে ভারতে আসা মোট টাকার পরিমাণ ছিল ৬৯৬০ কোটি ডলার, ২০১৫-এ তা কমে হয় ৬৮৯০ কোটি ডলার। ২০১৬-তে সেটা কমে হয়েছে ৬২৭০ কোটি।
কেরলনিবাসী সতীশ কুরুপের কথায়, “গত দু’বছরে সৌদি আরবে দু’বার চাকরি খোয়ানোর পর বাড়ি ফিরে আসারই সিদ্ধান্ত নিলাম।” উল্লেখ্,য ২০১৫-তে সৌদি আরবে চাকরি পেয়েছিলেন তিন লক্ষের কিছু বেশি ভারতীয়। পরের বছর সে সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় দেড় লক্ষের কিছু বেশিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশে কর্মরত ভারতের এক কূটনীতিক বলেন, “ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলারেরও নীচে এখন তেলের দাম। এর ফলে এটা হওয়ারই ছিল। যে ভারতীয়রা এখানে চাকরি হারাচ্ছেন, আমরা সব রকম ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।”
প্রভাব ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় রক্ষণশীল নীতিও।
এর পাশাপাশি পশ্চিমের দেশগুলিতে ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে বিশ্বায়ন-বিরোধী মনোভাব।
চাকরি ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন মার্কিন নাগরিকরা, তাঁর নির্বাচনী প্রচারে এই ইস্যুর ওপরেই জোর দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি মসনদে বসার পর এখন বেশির ভাগ বেসরকারি সংস্থা ভারতীয়দের চাকরিতে নেওয়ার পথে হাঁটছে না। তার ওপর রয়েছে এইচ ওয়ানবি ভিসা সংক্রান্ত ট্রাম্পের নীতি। কিছু দিন আগে এইচ ওয়ানবি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে অন্য নানা প্রস্তাবের পাশাপাশি ওই ভিসাধারীদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকা) করার প্রস্তাবও ছিল। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ভারতীয়দের ওপর কোপ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ প্রস্তাবিত বেতনের অনেক কম বেতনেই চাকরি করতেন ভারতীয় নাগরিকরা। বেতন যদি বাড়াতে হয়, তা হলে ভারতীয়দের চাকরি দেওয়ার ঝোঁক কিছুটা কমবে বলেই আশঙ্কা।
শিল্পসংস্থা অ্যাসোচেমের মতে, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত এইচ ওয়ানবি ভিসাধারীদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই ভারতীয়। এই সংখ্যাটি ৬০ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
অন্য দিকে নিজেদের ভিসা সংক্রান্ত নিয়মাবলি অনেক কঠিন করেছে অস্ট্রেলিয়া-সহ আরও কয়েকটি দেশ। যদিও এই সব দেশের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র, কিন্তু কোনো সুসংবাদ পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে না। বিদেশি রাষ্ট্রের নিয়মাবলির পাশাপাশি কেন্দ্রের কিছু নীতিও ভারতীয়দের বিদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।