ওয়াকফ সংশোধনী বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে বিলটি লোকসভায় পাশ হয়। বৃহস্পতিবার রাত ২টো ৩৪ মিনিটে রাজ্যসভাতেও তা পাশ হয়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সই হলেই এই বিলটি আইনে পরিণত হবে। নতুন আইন কার্যকর হলে ৭০ বছরের পুরনো আইন বদলে যাবে।
বিল পাশের সংখ্যা গরিষ্ঠতা
রাজ্যসভায় ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিতর্কের পর রাত ২টো ১৯ মিনিটে ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫’ পাশ করানোর প্রস্তাব রাখেন সংসদীয় বিষয়ক এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। ধ্বনিভোটে বিরোধীরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় বিভাজন (ডিভিশন) ভোট হয়। ফলাফলে দেখা যায়, বিলের পক্ষে ১২৮টি ভোট এবং বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়ে।
বিরোধীদের আপত্তি
বিরোধী দলগুলোর দাবি, ওয়াকফ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। বিশেষ করে বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধানকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাঁধে। মন্ত্রী কিরেন রিজিজু স্পষ্ট করেন যে, ২২ সদস্যের বোর্ডে সর্বাধিক ৪ জন অমুসলিম সদস্য থাকতে পারবেন।
সরকারের অবস্থান
মন্ত্রী কিরেন রিজিজু দাবি করেন, ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এই সংশোধনীর প্রয়োজন ছিল। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে আয় যথেষ্ট পরিমাণে না হওয়ার কারণেই নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০০৬ সালে সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪.৯ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা আয় হওয়ার কথা থাকলেও তা মাত্র ১৬৩ কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ ছিল।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মতামত
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়া বিলকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, এই বিল মুসলিম সমাজের দরিদ্র অংশকে সুরক্ষা দেবে। তিনি আরও বলেন, নতুন আইন মুসলিমদের ধর্মাচরণে কোনও প্রভাব ফেলবে না।

বিতর্কের সূত্রপাত
বিরোধী দলের নেতারা দাবি করেন, নতুন আইন ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব করবে এবং তা সংখ্যালঘুদের অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে। তবে রিজিজুর পাল্টা যুক্তি, এটি কোনওভাবেই সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করবে না বরং স্বচ্ছতা আনবে।
ভোটাভুটির ফলাফল
রাজ্যসভায় এনডিএর সদস্যসংখ্যা ১১৭ থাকলেও নির্দল ও মনোনীত সদস্যদের সমর্থনে বিল পাশ হয়। সরকারের পক্ষে ১২৮টি ভোট পড়ায় বিল পাশ করতে কোনও বাধা থাকেনি।
বিলের প্রতিবাদ
ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে দেশে বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম সংগঠনগুলি শুক্রবার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ওয়াকফ বিলের সংশোধন আসলে সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করা। কলকাতার পার্ক সার্কাসে আজ একটি প্রতিবাদ সমাবেশ রয়েছে। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রতিবাদ জানানো হবে।