বৃহস্পতিবার (২৭ জুন, ২০২৪) লোকসভায় নিজের ভাষণে দেশের কাছে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রায় এক ঘণ্টার ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার গত ১০ বছরে সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে। প্রতিরক্ষা খাত এবং সেনাবাহিনীর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একাধিক সাফল্য অর্জনের কথা বলা হলেও একটিবারের জন্য তিনি অগ্নিবীর যোজনার নাম মুখে আনেননি।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে অগ্নিবীর যোজনার উল্লেখ না থাকায় নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে হচ্ছে কেন্দ্রকে। কারণ সরকার এই সেনা নিয়োগ প্রকল্পকে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছিল। বলা হয়েছিল ভবিষ্যতের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করার জন্য এটি একটি মাস্টার স্ট্রোক।
রাষ্ট্রপতি নিজের ভাষণে অগ্নিবীরের নাম নিতে পারেন বা নাও নিতে পারেন। এর জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটা সরকারের ইচ্ছা। কিন্তু যখন সরকারের সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা কথা বলা হচ্ছে তখন অগ্নিবীরকে বক্তৃতা থেকে বাদ দেওয়া হলে প্রশ্ন তো উঠবেই। কারণ এটা দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণের ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। মোদী সরকার যখন থেকে এই প্রকল্প কার্যকর করেছে তখন থেকেই সেনাবাহিনীর স্বল্পমেয়াদী পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যখন অগ্নিবীর যোজনা শুরু হয়েছিল, তখন সরকারের তরফে এই যোজনা সম্পর্কে প্রচুর প্রচার হয়েছিল, কিন্তু এখন সরকারের সাফল্যে এর কোনো উল্লেখ নেই। এটা তো অবাক হওয়ার মতই বিষয়।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু লোকসভায় ৫২ মিনিটের দীর্ঘ ভাষণ দেন। পুরো ভাষণে রাষ্ট্রপতি কৃষি সংস্কার, নারী ক্ষমতায়ন, অর্থনীতি, নির্বাচন কমিশন, জরুরি অবস্থা, গণপরিবহন, প্রশ্নপত্র ফাঁস-সহ অনেক বিষয়ে কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি নিজের ভাষণে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড সেনাবাহিনী নিয়েও বক্তব্য রাখেন। প্রতিরক্ষা খাতে সরকারের সাফল্যের কথা জানালেও ওই ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে অগ্নিবীরের নাম একবারও উচ্চারিত হয়নি।সমস্ত বৈপ্লবিক পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্তের মধ্যে, অগ্নিবীর যোজনা কোথায় হারিয়ে গেল? যুবসমাজের ক্ষোভ ও বিরোধীদের বিরোধিতায় সরকার কি অগ্নিবীরকে নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে? এই প্রকল্প নিয়ে কি বিড়ম্বনায় পড়েছে কেন্দ্র? বক্তৃতায় অগ্নিবীরের থেকে দূরত্ব এমনই অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।
প্রথম প্রশ্ন হল সরকার কি অগ্নিবীর থেকে নিজেকে দূরে রাখতে শুরু করেছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সরকার কি মনে করে অগ্নিবীরের ওপর তরুণদের ক্ষোভ বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে? তৃতীয় প্রশ্ন, অগ্নিবীর ইস্যুতে সরকার কি শরিকদের চাপে আছে? আর চতুর্থ প্রশ্ন, সরকার কি অগ্নিবীর প্রকল্পে কোনো পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে?
জানা যায়, অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা করা হয়েছিল। এই সমীক্ষায় অগ্নিবীর যোজনা সম্পর্কিত অনেক ত্রুটি প্রকাশ্যে এসেছে। ঠিক ৪ বছরের চাকরির মতো নয়। পুরো চাকরিতে মাত্র ২৫ শতাংশ পদোন্নতি দেওয়াও ঠিক নয়, এ কারণে অগ্নিবীররা প্রশিক্ষণে কম মনোযোগ দিচ্ছেন। চার বছর পর নতুন চাকরিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন তিনি। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য সৈন্যদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বাড়ানোও, কিন্তু অগ্নিবীরের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। অগ্নিপথের কারণে, ২০৩৫ সালের মধ্যে, সেনাবাহিনীতে কারিগরি কর্মীদের প্রচুর সংখ্যক সিনিয়র পদ শূন্য হবে। সমীক্ষায় আরও জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা কম।
অগ্নিবীরের বিরোধিতাকারী বিরোধীরা এই ধরনের ত্রুটির ভিত্তিতে এই সেনা নিয়োগ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। এটা সরকারের জন্য স্বস্তির বিষয় যে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনকারী দলগুলো এখন অগ্নিবীর প্রকল্পটি বন্ধ না করে পরিবর্তন বিবেচনা করার দাবি জানাতে শুরু করেছে। অগ্নিবীরকে ইস্যু বানিয়ে যে দলগুলো নির্বাচনে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করে রেখেছিল, তারাও এখন এই ইস্যুতে নীরবতা পালন করেছে। বিরোধী দলের এক নম্বর দল হোক বা শেষ অবস্থানে থাকা দল। নির্বাচনের সময় প্রতিটি বিরোধী দলের ইশতেহারে ছিল অগ্নিবীর প্রসঙ্গ। সবার একই অবস্থান ছিল তাদের সরকার গঠিত হলে এই সেনা নিয়োগ প্রকল্প প্রত্যাহার করা হবে। বিরোধী দলগুলো আবার বিরোধী আসনে বসলেও এখন তাদের এজেন্ডায় অগ্নিবীর ইস্যু নেই।