খবর অনলাইন: এ বছর ভারতে ফেরার কোনও পরিকল্পনাই নেই বিতর্কিত ইসলামি ধর্মগুরু জাকির নাইকের। তিনি অভিযোগ করেছেন, সংবাদ মাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে কাটছাঁট করা ভিডিও দেখেই তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ করছে। তাঁর দাবি, তিনি কখনওই কোনও সন্ত্রাসমূলক কাজে উৎসাহ দেননি।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জাকির মাইক বলেন, তিনি ‘শান্তির দূত’। জিহাদের নামে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা ইসলামে দ্বিতীয় বড়ো পাপ। “এটা ইসলামে নিষিদ্ধ, হারাম”—মন্তব্য জাকির নাইকের।
জাকির নাইক বৃহস্পতিবার সৌদি আরব থেকে স্কাইপের মাধ্যমে ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন। “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, পিস টিভিতে দেওয়া আমার পুরো ভাষণগুলো কেউ দেখাক। তারপরে বলুক যে কোন অংশটা ভারত বা বাংলাদেশের জন্য অশান্তি তৈরি করতে পারে?” প্রশ্ন জাকির নাইকের।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন রিপোর্ট পরীক্ষা না করেই, আধখানা বাক্য দেখিয়ে, ভিডিও কাটছাঁট করে, প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে বিবৃতি দেখিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আমার কুৎসা করছে, আমার বিচার করছে।”
একটি বক্তৃতায় জাকির নাইক বলেছেন, ইসলামে আত্মঘাতী বোমা হানার অনুমোদন রয়েছ। এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি নিরপরাধ মানুষ খুন করা হয়, তা হলে হারাম। আর যদি যুদ্ধের কৌশল হিসাবে এটি ব্যবহার করা হয়, তা হলে তা অনুমোদনযোগ্য। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান এটিকে যুদ্ধের কৌশল হিসাবে ব্যবহার করেছিল।
তাঁর বক্তৃতা নিয়ে মুম্বই পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানানো হলে জাকির নাইক বলেন, “তাদের তদন্তে সাহায্য করার জন্য গত ৮-৯ দিনে কোনও সরকারি সংস্থা এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা যোগাযোগ করলে আমি স্বাগত জানাব। অতীতে সরকার বা পুলিশের সঙ্গে আমার কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। যে কোনও তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে আমি সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।”
জাকির নাইক জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি আগামী বছর দেশে ফিরবেন। এ বছর ভারতে ফিরছেন না। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, স্কাইপে বা ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অনেক সহজ। আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি না। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হচ্ছে। এই নিয়ে আমি ব্যস্ত।”
তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি ভারতে আটক এক যুবকের বাবা অভিযোগ করেছেন যে তাঁর ছেলে জাকির নাইকের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করেছিল। এ ছাড়াও আই এসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ভারতে আরও কয়েক জনের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের ছেলেপুলেরা জাকির নাইকের বক্তব্য দেখেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে জাকির নাইক বলেন যে তিনি প্রতি মাসে কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে দেখা করেন। তারা তার সঙ্গে ছবিও তোলেন। “জ্ঞাতসারে আমি কোনও সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গে দেখা করিনি। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের মধ্যে যদি এমন ব্যক্তি কেউ থেকে থাকেন যিনি সন্ত্রাসবাদী, তা হলে তো সেটা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়!”
জাকির নাইকের দাবি, তাঁর ‘পিস টিভি’ ভারতে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু চ্যানেল চালানোর প্রয়োজনীয় অনুমতি তাঁরা পাননি। তাঁর মন্তব্য, “আমার মনে হয় এটা মুসলিমদের বলে, ইসলামি চ্যানেল বলে অনুমতি পাওয়া যায়নি”।
জাকির নাইকের বক্তৃতা নিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। এ ব্যাপারে মুম্বই পুলিশ একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করেছে।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।