জল নেই, রুজিতে টান, আতান্তরে কলমকারি শিল্পীরা : জলছবি/৭

0

খবর অনলাইন : মানুষের বেঁচে থাকার জন্য, দৈনন্দিন সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য জল মিলছে না, এর ওপর আবার হস্তশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে জল! কিন্তু কী করা যাবে। সেই হস্তশিল্প বাঁচলে, শিল্পীদের সংসারে টাকা আসবে, টাকা এলে রুটির সংস্থান হবে আর প্রয়োজনে পয়সা দিয়ে ট্যাংকারের জল কিনতে পারবে। মানুষের স্বার্থেই তো সেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জল চাই। কিন্তু কোথা জল। তাঁরা তো হা জল, হা জল করে মরছেন।

সত্যিই আজ জলের অভাবে এই অবস্থা কলমকারি শিল্পের।

অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার মছলিপত্তনম, পেদানা আর গুদুরুর হাজার হাজার  কলমকারি শিল্পীর আজ মাথায় হাত। তাঁদের এই রঞ্জনশিল্প তো জল-নির্ভর। কিন্তু প্রয়োজনীয় জল তাঁরা পাচ্ছেন না। ফলে শিল্পসৃষ্টি হচ্ছে না। রুজিতে পড়ছে টান। সংসারে হাঁড়ি চড়ানো দায় হয়ে উঠেছে। সব কিছুর মূলে জলের নিদারুণ অভাব।

কৃষ্ণা নদী থেকে কাটা বান্ধার সেচ ক্যানাল ও রামরাজুপালেম ব্রাঞ্চ ক্যানালের উপর নির্ভর করেন কলমকারি শিল্পীরা। এই শিল্পে তাঁতের কাপড়ে জৈব রং প্রয়োগ করা হয়। তার পর তা বহমান জলে চোবাতে হয় বা ধুতে হয়। এই ধোয়ার কাজ চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। তার পর তা শুকোতে হয় পুরো একটা দিন ধরে। এতে কাপড় থেকে অবাঞ্ছিত রং ধুয়ে যায়।

পেদানার এক মহিলা শিল্পী মানগনা  জানালেন, কৃষ্ণা নদীতে জলের অভাবে দু’টি ক্যানালই এ বছর গরম পড়ার আগেই প্রায় শুকিয়ে গেছে। এখন এই দু’টি ক্যানাল বা আশেপাশের ছোটখাটো জলপ্রবাহে কলমকারি শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকর্ম ধুলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। অনেক শিল্পী চলে গেছেন ১০০ কিমি দূরের উন্দিতে, পশ্চিম গোদাবরী জেলায়। সেখানে গোদাবরীর উন্দি ক্যানালের জলে তাঁরা কাজ করছেন। অনেকে বিজয়ওয়াড়ার শহরতলি পেনামালুরু বা দিবসিমার পুলিগাদ্দায় চলে যাচ্ছেন। প্রকাশম ব্যারাজের জন্য এখানে কৃষ্ণা নদীতে জল আছে। সেখানেই কলমকারি ধোয়ার কাজ চালাচ্ছেন। শিল্পীরা ভ্যানে তাঁদের শিল্পকর্ম চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, নির্দিষ্ট জায়গায় কয়েক দিন থাকছেন, কাজ সারছেন। কিন্তু এ ভাবে সংসার-পরিবার ফেলে নিয়মিত যাওয়া কি সম্ভব ? বহু কলমকারি শিল্পী মহিলা। সংসার ফেলে তাঁদের বাইরে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

শুধু তা-ই নয়। পেনামালুরুতে গিয়ে বালি ঠিকাদারদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন শিল্পীরা। বচসা হচ্ছে, সেখান থেকে হাতাহাতি। ঠিকাদারদের অভিযোগ, কলমকারি শিল্পীরা অনেকটা জায়গা জুড়ে শিল্পকর্ম ধোয়া ও শুকোনোর কাজ করছেন। তার ফলে তাঁদের বালি তুলতে অসুবিধা হচ্ছে। কলমকারি শিল্পীরা যাতে নিজেদের কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন তার জন্য পেনামালুরু থানার দ্বারস্থ হয়েছেন।

কলমকারি কাজের পোশাক, বিছানার চাদর, ঘরসাজানোর উপকরণের বিশাল চাহিদা রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। পেদানার এক শিল্পীপরিবার থেকে উঠে আসা স্থানীয় সাংবাদিক নন্দম রাম রাও জানালেন, শিল্পীরা কলকাতার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে নীল সংগ্রহ করেন। এই নীল থেকে পাওয়া নীল রং তাঁরা কলমকারির কাজে ব্যবহার করেন। শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো আবার চলে যায় কলকাতার ব্যবসায়ীদের হাতে। সেখান থেকে বিদেশে। কলকাতার যাঁরা এই শিল্পকর্ম বিদেশে রফতানি করেন, তাঁরা চাইছেন এই হস্তশিল্পের এক একটি কাজে দু’টি রং ব্যবহার করা হোক। কারণ এ ধরনের কাজেরই চাহিদা বেশি বিদেশে। যত বেশি রং ব্যবহার করা হয়, তত বেশি ধোয়ার প্রয়োজন হয়। আর ঠিকঠাক ধোয়া না হলে কাজ নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু জল কোথায় ? চিন্তায় আকুল মছলিপত্তনমের ১৫ হাজার কলমকারি শিল্পী।

“কৃষ্ণায় জল না-থাকার দরুন যখন সেচ ক্যানাল সেচেরই জল সরবরাহ করতে পারছে না, তখন কলমকারি কাজ ধোয়ার জন্য জল কোথা থেকে পাওয়া যাবে ?”—কিছুটা ঠাট্টার সুরে বললেন ‘অন্ধ্রপ্রদেশ রায়তঙ্গ সমাখ্যা’র প্রেসিডেন্ট ইয়ারনেনি নগেন্দ্রনাথ। সেচের ও পানীয় জলের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বান্ধার ক্যানালে এক হাজার কিউসেক জল থাকার কথা। এ বার এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সেই ক্যানাল থেকে শুধুমাত্র পানের জন্য ১০০ কিউসেক জল মিলেছে।

কৃষ্ণায় জল নেই, তাই জল নেই ক্যানালে। “কর্ণাটক যে দিন কৃষ্ণার উপরে আলমাটি ড্যাম তৈরি করেছে সে দিন থেকেই কৃষ্ণা অববাহিকা অঞ্চলে দুর্দিন নেমে এসেছে” – আক্ষেপ করছিলেন নগেন্দ্রনাথ।

সৌজন্যে  টাইমস অফ ইন্ডিয়া

dailyhunt

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

বিজ্ঞাপন