ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ রোধে এবার লম্বা ফসলের চাষে নিয়ন্ত্রণ আরোপের পথে বিএসএফ। এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও সমস্ত জেলা শাসকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। চিঠিতে বলা হয়েছে, কৃষি দফতর ও কৃষকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আখ, পাট, সর্ষে ও কলার মতো লম্বা ফসলের চাষ সীমিত করতে হবে, যাতে অনুপ্রবেশকারীরা সহজে লুকিয়ে থাকতে না পারে।
বৃহস্পতিবার বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ইনভেস্টিচার অনুষ্ঠানে এক সিনিয়র বিএসএফ আধিকারিক বলেন, “লম্বা ফসল সীমান্তে নজরদারি ব্যাহত করে এবং নিরাপত্তার জন্য বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। চোরাচালানকারীরা এই ধরনের ঘন ফসলকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের জওয়ানদের উপর হঠাৎ আক্রমণ চালায়। তাই আমরা চাইছি, রাজ্য সরকার কৃষকদের বিকল্প ফসল চাষে উৎসাহিত করুক।”
সীমান্তের কৃষিজমি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
বিএসএফ জানিয়েছে, সীমান্ত বেড়া শূন্য রেখা থেকে ১৫০ মিটার দূরে অবস্থিত। সেই বেড়া পেরিয়ে থাকা কৃষিজমিগুলিতে চাষ করতে গেলে কৃষকদের নির্দিষ্ট পরিচয় যাচাইয়ের পর নির্ধারিত গেট দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এইসব এলাকায় লম্বা ফসল থাকায় অনুপ্রবেশকারীদের গা ঢাকা দেওয়ার সুযোগ বাড়ছে। বিএসএফ নিয়ম অনুযায়ী, এই এলাকায় গাছের উচ্চতা ২ ফুটের বেশি হওয়া উচিত নয়।
বিএসএফ আধিকারিক আরও বলেন, “বর্ডার এলাকার কৃষকরা নিয়ম না মেনে লম্বা ফসল ফলান, যা নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয়ভাবে বিষয়টি কার্যকর করার আবেদন জানিয়েছি।”
সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থান
দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৯১৩.৩ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৩৬৪ কিলোমিটার নদীবাহিত এলাকা। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে ৯৩৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ৩৭৫ কিলোমিটার বেড়া-বিহীন। এর ফলে, এই বিশাল অংশে নিরাপত্তা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
বিএসএফ ইস্টার্ন কমান্ডের অতিরিক্ত ডিজি রবি গান্ধী বলেন, “সীমান্তের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, সামাজিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে পরিবর্তিত কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে বিএসএফ জওয়ানরা দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করছেন।”
রাজ্য ও কেন্দ্রের সহযোগিতার বার্তা
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় রাজ্য সরকার ও বিএসএফ-এর মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “সীমান্ত সুরক্ষায় রাজ্য সরকারসহ সমস্ত অংশীদারদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং অনুপ্রবেশ রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সীমান্তরক্ষায় বিএসএফ জওয়ানদের সম্মাননা
অনুষ্ঠানে ৩৩ জন বিএসএফ কর্মীকে পুলিশ মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিস (PMMS) দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
সীমান্তের নিরাপত্তা বাড়াতে বিএসএফ-এর এই সিদ্ধান্ত কি কৃষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে? আপনাদের মতামত জানান কমেন্টে।