প্রকৃতি নিজেকে ঢেলে সাজিয়েছে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে। আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীনে আর পাঁচটা আদিবাসী গ্রামের মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট্ট গ্রাম পানিঝোড়া। এই পানিঝোড়া গ্রামেই গড়ে উঠেছে বাংলার প্রথম বইগ্রাম। অতি সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন পানিঝোড়া গ্রামকে বইগ্রাম হিসাবে ঘোষণা করেছে।
আলিপুরদুয়ার সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে মূলত নেপালি, দুকপা, গারো, মেচ, রাভা, মুন্ডা, ওরাঁও সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। গ্রামে ৭২টি পরিবারের ৩২০ জন বাসিন্দা বাস করেন।
পানিঝোড়া দেশের মধ্যে গড়ে ওঠা তৃতীয় বইগ্রাম। এর আগে কেরলের পেরুমকালাম, মহারাষ্ট্রের ভিলারেও একইভাবে গড়ে উঠেছে বইগ্রাম। গ্রামের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে ১৫টি ছোটো গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে। একটি বড়ো কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে মাঝেরডাবরি চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধরের তত্ত্বাবধানে।
গোটা গ্রামকেই আস্ত বইগ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলা। তিনি বলেন, “পানিঝোড়া গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের গ্রামকে বইগ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার বিষয় উৎসাহিত হন। তাঁরা আমাদের কাছে গ্রন্থাগার তৈরি করার আর্জি জানান। বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আশা করি পানিঝোড়া এক সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে। এই উদ্যোগ গ্রামে ইতিবাচক বদল আনবে। দেশবিদেশের পর্যটকরা এই গ্রামে আসবে। গ্রামে ৮০ জন পড়ুয়া রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দা পর্যটনের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত।”
‘আপনকথা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন একসঙ্গে মিলে পানিঝোড়াকে বইগ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘আলোকবর্তিকা’। গ্রামের প্রবেশপথে একটি কাঠের তোরণদ্বার আছে। তাতে লেখা বইগ্রাম। গ্রামের বাড়িতে কাঠের গ্রন্থাগার তৈরি করা হয়েছে। নানান রকমের বই রাখা আছে বইগ্রামে। নানান রকম পাঠ্যপুস্তক ও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বইও আছে।
গ্রামের ১০ জন বাসিন্দা গ্রন্থাগারের দেখাশোনা করেন, কাকে কোন বই পড়তে দেওয়া হয়েছে তার রেকর্ড রাখেন। প্রতিমাসে একবার করে কম্পিউটার ক্লাস ও নাচ, গান, কবিতার ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গ্রামের ৫০টি বাড়ির দেওয়ালে আঁকা থাকবে শিক্ষা সংক্রান্ত নানা বার্তা। বক্সা, জয়ন্তী ও আলিপুরদুয়ারের ইতিহাসসংক্রান্ত বইও আছে গ্রন্থাগারে।
আরও পড়ুন