বাঁকুড়া
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ইন্দাসের তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটে

খবরঅনলাইন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে আরও এক বিধায়কের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে মৃত্যু হল করোনা সংক্রমণের কারণে। মাত্র ৫২ বছর বয়সেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। জানা গিয়েছে, করোনার পাশাপাশি তাঁর কোমর্বিডিটিও ছিল।
২০১১ সালে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট প্রার্থী হিসেবে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম বার জয়ী হয়েছিলেন গুরুপদবাবু। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
বাঁকুড়া জেলায় দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন গুরুপদবাবু। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
টুইটে শোকবার্তায় মমতা জানিয়েছেন, “বাঁকুড়া জেলার কো-অর্ডিনেটর এবং দুই বারের নির্বাচিত বিধায়ক গুরুপদ মেটে। তাঁর অতুলনীয় সেবার কথা বাংলার নাগরিকরা মনে রাখবেন। তাঁর নিকটাত্মীয় ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই।”
বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘সকলের কাছের মানুষ ছিলেন গুরুপদবাবু। এলাকায় সকলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’’
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন ফলতার বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের মৃত্যু হয়েছিল করোনার কারণে। এর কিছু দিনের মধ্যে এগরার বিধায়ক সমরেশ দাসও কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ বার গুরুপদবাবুর মৃত্যু হল।
করোনা সংক্রমণের কারণে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষনেতা, মন্ত্রী এবং বিধায়ক অসুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়ও কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন।
খবরঅনলাইনে আরও পড়তে পারেন
নতুন আক্রান্তের সংখ্যা স্থিতিশীল, তবে সুস্থতার সংখ্যা কিছুটা কমায় দেশে বাড়ল সক্রিয় রোগী
ইতিহাস
চল্লিশের দশকে বাংলার এক গণ্ডগ্রামে নারী শিক্ষার আলো দেখিয়েছিলেন তিনি, নারী দিবসে স্মরণ করি সেই বীরাঙ্গনাকে
বর্ধমান-বাঁকুড়ার সীমানায় আকুই গ্রাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষে ছিল কৃষিজীবী প্রধান এবং শিক্ষায় অনগ্রসর। গ্রামীণ সমাজও ছিল রক্ষণশীল। এই পরিবেশেই জন্ম হয় ননীবালার, ১২৯৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে।

শ্রয়ণ সেন
—- “আমি ভিক্ষে চাইতে এসেছি, দেবে?”
—- “ভিক্ষে! এবং আপনি! কেন?”
—- “না, যেটা ভাবছ সেটা নয়। টাকাপয়সা ভিক্ষে আমি করছি না। ছাত্রীভিক্ষে। আমার বাড়িতে গড়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ছাত্রী চাই। আমার স্বপ্ন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করে তোলা।”
নিশ্চিত করে জানা যায় না, কিন্তু ননীবালা গুহ এবং এই প্রতিবেদকের প্রপিতামহী এমিলাসুন্দরী সেনের মধ্যে হয়তো এই ধরনের কথোপকথনই হয়েছিল।
১৯৩৯ সাল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন তখন মধ্য গগনে। ঠিক তখনই ৫২ বছরের এক প্রৌঢ়া আকুই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার দোরে দোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিক্ষার আলোয় মেয়েদের আলোকিত করে তুলবেন বলে।

বর্ধমান-বাঁকুড়ার সীমানায় আকুই গ্রাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষে ছিল কৃষিজীবী প্রধান এবং শিক্ষায় অনগ্রসর। গ্রামীণ সমাজও ছিল রক্ষণশীল। এই পরিবেশেই জন্ম হয় ননীবালার, ১২৯৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে।
শত প্রতিকূলতায় ভরা তাঁর জীবন। মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিধবা হন তিনি, লেখাপড়াও জানতেন না। জানা যায়, অনেক বছর পর নিজের নাম স্বাক্ষর করতে শিখেছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ আমল, বাল্যবিধবা, নিরক্ষর এবং রক্ষণশীল গ্রামীণ সমাজ — এই চার প্রতিকূলতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি ননীবালাকে, যিনি এখনও ‘ননী পিসিমা’ নামে পরিচিত গ্রামের প্রবীণদের কাছে।
আকুইয়ের প্রবীণরা — এই প্রতিবেদকের জেঠু রমাপ্রসাদ সেন, আকুইয়ের বিশিষ্ট মানুষ দিলীপ কুমার দাঁ-রা কেন ননীবালাকে ‘ননী পিসিমা’ বলতেন?
কারণ এঁদের বাবা-কাকারা তিরিশ-চল্লিশের দশকে ননীবালার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
সালটা ১৯৩০। ননীবালা তখন সদ্য চল্লিশ পেরিয়েছেন। এই বছরই জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পান তিনি। আইন অমান্য আন্দোলনের আহ্বান শুনে দেশসেবার কাজে ব্রতী হন। আকুইয়েরই দত্ত পরিবারের ছেলে জগদ্বন্ধুর নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ননীবালাও স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ননীবালার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে নিজের রক্ষণশীল সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন মতিবালা দত্ত, সুশীলা দে, রাধারানি ঘোষ, করুণাময়ী দলুই প্রমুখ। এঁরা সবাই বাল্যবিধবা।
ব্রিটিশ ভারতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ‘বন্দেমাতরম’ গাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল। কিন্তু ননীবালা ছিলেন সাহসিনী। ১৯৩০ সালেই জাতীয় পতাকা উত্তোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন।
এর পরের বছর আকুইয়ের পাশের গ্রাম বামুনিয়ায় ‘চৌকিদারি কর বন্ধ আন্দোলন’ প্রবল আকার ধারণ করে। সার্কেল ক্রোক অফিসার গাড়ি নিয়ে আসার চেষ্টা করলে নারী সত্যাগ্রহীদের প্রবল বাধার মুখে পড়েন। ননীবালার নেতৃত্বে নারী সত্যাগ্রহীরা মাটিয়ে শুয়ে পড়ে তাঁর পথ আটকান।
শোনা যায়, তিন দিন ধরে মাটিতে শুয়ে এ ভাবেই পথ আটকে রেখেছিলেন তাঁরা। এর পর বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক ও পদস্থ পুলিশ অফিসারদের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপরে ব্যাপক লাঠি চালায় পুলিশ। ননীবালা-সহ অনেকেই আহত হন। তাঁকে এবং অন্যান্য সত্যাগ্রহীকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৩১ সালে ফের একবার গ্রেফতার হন ননীবালা। তিন মাস কারাদণ্ড ভোগের পর মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে তিনি মুক্তি পান ১৯৩২ সালের ১১ মার্চ।
শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, গঠনকর্মীও ছিলেন ননীবালা। আকুই গ্রামে চরকা কেন্দ্র স্থাপন, সুতোকাটা, খদ্দর ব্যবহারের জন্য গ্রামের নারীপুরুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাঁর।
এর পাশাপাশি ননীবালা ছিলেন বাঁকুড়া জেলার নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। নিজে নিরক্ষর হয়েও মহিলাদের পড়াশোনার গুরুত্ব তিনি বুঝেছিলেন এবং গ্রামের মানুষদের বুঝিয়েছিলেন।
ননীবালার জন্মস্থান আকুই গ্রামের পুবপাড়ায়। ১৯৩৯ সালে নিজের বাড়িতেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন তিনি। এই কর্মসূচিতে তাঁকে সাহায্য করেন জগদ্বন্ধু দত্ত এবং আকুই ইউনিয়ন বোর্ডের তৎকালীন সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত। তাঁর লক্ষ্য ছিল, মেয়েদের তিনি পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করবেনই এবং সেই কারণেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘ছাত্রীভিক্ষা’ করতেন।
কিন্তু সেখানেও ছিল বাধা। পুবপাড়াটি ছিল সে অর্থে অনগ্রসর। সামাজিক রক্ষণশীলতা অনেক বেশি ছিল এই পাড়ায়। ছোটো বয়সে ‘বিধবা’ ননীবালাকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে এখানে। বিভিন্ন বাড়িতে তাঁর প্রবেশের ওপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই পাড়ার বাসিন্দারা যে তাঁদের মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরোতে দেবেন না, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান।
অন্য দিকে, তৎকালীন পশ্চিমপাড়া ছিল সে অর্থে তুলনামূলক ভাবে উদার। তাই পশ্চিমপাড়াতেই যান তিনি। প্রথমেই আসেন এই প্রতিবেদকের প্রপিতামহীর কাছে। ননীবালাদেবীর কথায় রাজি হয়ে যান এমিলাসুন্দরী সেন এবং এক কথায় তাঁর ছোটো মেয়ে মমতাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়ে দেন। পশ্চিমপাড়ার আরও চারটি বাড়ি তাঁদের মেয়েদের পাঠায় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

অর্থাৎ, গ্রামের যে পাঁচ মহিলা প্রথম বার বাড়ির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই প্রতিবেদকেরই পিসি-ঠাকুমা।
১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়ে ফের একবার গ্রেফতার হন ননীবালা। মেদিনীপুর জেলে বন্দি থাকেন তিনি। কারাবাসের মধ্যেও ননীবালার মন পড়ে থাকত তাঁর তৈরি প্রাথমিক বিদ্যালয়তেই। জেলে বসেই কৃষ্ণচন্দ্র দত্তকে চিঠি পাঠান ননীবালা। বয়ান ছিল, “আমি যে বিদ্যালয়টি তৈরি করেছি, সেখানে পশ্চিমপাড়া থেকে মেয়েরা আসছে তো?”
বিনা বিচারে আট মাস বন্দি থাকার পর অবশেষে ছাড়া পান এবং আকুই ফিরে আসেন ননীবালা।
দেশ স্বাধীন হতেই গ্রামবাসীদের কাছে ‘মাতঙ্গিনী হাজরা’ হয়ে ওঠেন ননীবালা। গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে এই নামেই ডাকতেন। যদিও এই ডাক শুনেই অসম্ভব লজ্জায় পড়তেন। প্রতিবাদ করতেন। বলতেন, “ধুর, কার সঙ্গে কার তুলনা করছিস তোরা!”
পশ্চিমপাড়ার প্রমোদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে গ্রামের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আড্ডা বসত। সেই আড্ডায় প্রতি দিন সন্ধ্যায় যোগ দিতেন ননীবালাও। দেশ তখন পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত।
স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ননীবালার এক কালের সহকর্মীরাই এ বার ঠিক করলেন তাঁর নামে হাইস্কুল তৈরি করবেন।
প্রস্তাব দেওয়া হল ননীবালাকে। তাতেও প্রতিবাদ এই বীরাঙ্গনার। হাইস্কুলে তৈরিতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু নিজের নামে কিছুতেই সেই স্কুলের নামকরণ করতে দেবেন না। কিন্তু সেই আপত্তি আর টিকল না।
স্কুল তো হবে, কিন্তু তার জমি দেবে কে? সেই দায়িত্ব নিলেন প্রমোদবাবুই। একটি জমি চিহ্নিত হল। জমিটি পশ্চিমপাড়ারই বাসিন্দা দেব এবং রায়দের।
প্রমোদবাবু ছিলেন দেব এবং রায়দের দীক্ষাগুরু। মেয়েদের জন্য হাইস্কুল হবে, তাই জমি দরকার—এই আবেদন নিয়ে সটান দেব এবং রায়দের কাছে আবেদন করে বসেন তিনি। তাঁরাও এক কথায় রাজি হয়ে যান। মেয়েদের স্কুল তৈরির জন্য জমি দিয়ে দেন তাঁরা।

বলতে কিঞ্চিৎ গর্ব হয়, এই প্রতিবেদকের ঠাকুমা শিবানী সেন পশ্চিমপাড়ার এই দেব পরিবারেরই মেয়ে।
জেলবন্দি থাকাকালীন অনেক প্রভাবশালী স্বাধীনতা সংগ্রামীর সংস্পর্শে আসেন ননীবালাদেবীরা। পরবর্তীকালে এঁরাই সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেন, কেউ কেউ মন্ত্রীও হন। কিন্তু ননীবালাদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ।
ননীবালাদেবীর আবেদনেই আকুই গ্রামে আসেন এমনই কয়েক জন মানুষ। তাঁদের হাত ধরেই ‘আকুই ননীবালা গার্লস হাইস্কুল’-এর প্রাথমিক ভিত তৈরি হয়। মাটির ঘরে তৈরি হওয়া এই হাইস্কুল ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে।
এখন এই গার্লস হাইস্কুলটি শুধুমাত্র আকুই নয়, বাঁকুড়া জেলায় অন্যতম জনপ্রিয় স্কুল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে এখানকার ছাত্রীরা দুরন্ত ফলাফল করে তাক লাগিয়ে দেয়।
১০৪ বছর বেঁচে ছিলেন ননীবালা। পরমায়ুর দিক দিয়ে এ রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে তাঁর স্থান দ্বিতীয়। শেষ বয়স পর্যন্তও নারীশিক্ষা নিয়ে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। মেয়েদের পড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরব হয়েছেন তিনি।
দেশের গ্রামাঞ্চলে যখনও সে ভাবে নারীশিক্ষার আলো ফোটেনি, তখনই এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন ননীবালা। কিছু বাধাবিপত্তি থাকলেও আকুই গ্রামকে পাশে পেয়েছিলেন তিনি। আকুই গ্রাম তাই আজও ননীবালাময়। গ্রামের স্কুল মোড়ে তৈরি হয়েছে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তিও।

বছরের ৩৬৫টা দিনই নারীদের দিন হওয়া উচিত। কিন্তু একটা বিশেষ দিন যখন রয়েছেই, সেই দিনে এমন এক বীরাঙ্গনার পায়ে শতকোটি প্রণাম জানাই।
বাঁকুড়া
সোনামুখীর দে বাড়ির ১১৫ বছরের সরস্বতীপুজো
সোনামুখীতে এই পুজো শুরু করেন স্বর্গীয় অধরচন্দ্র দে মহাশয় ১৯০৬ সালে।

শুভদীপ রায় চৌধুরী
সামনেই সরস্বতীপুজো। প্রতিটি পুজোমণ্ডপ থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে চলছে পুজোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি। এ বার যে পুজোর কথা বলছি, তা হল বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী শহরের ১১৫ বছরের প্রাচীন সরস্বতীপুজো।
এই পুজোর বিশেষত্ব হল, এখানে শুধুমাত্র দেবী সরস্বতীই থাকেন না, সঙ্গে থাকেন তাঁর তিন ভাই-বোন অর্থাৎ লক্ষ্মী, কার্তিক এবং গণেশ। সোনামুখীতে এই পুজো শুরু করেন স্বর্গীয় অধরচন্দ্র দে মহাশয় ১৯০৬ সালে, যা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন দে বাড়ির সদস্যরা।
অধরচন্দ্রকে সোনামুখীর জমিদারি প্রদান করেন বর্ধমানের রাজা। অধরচন্দ্রবাবু নারীশিক্ষার প্রতি নিজের সদর্থক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটাতে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেই মন্দিরটির নাম সরস্বতীমন্দির।

কথা হচ্ছিল এই বাড়ির সদস্যা নীলয়া দে মহাশয়ার সঙ্গে। তিনি জানালেন, স্বর্গীয় অধরচন্দ্র দে মকরসংক্রান্তির দিনে এক স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তার সূত্র ধরেই তিনি এই মন্দির তৈরি করেন ও দেবী সরস্বতীর সঙ্গে তাঁর আরও তিন ভাই-বোনেরও পুজোর ব্যবস্থা করেন।
কথায় কথায় জানা যায়, অধরচন্দ্রের আট সন্তান ছিল। তিনি চেয়েছিলেন এই আট সন্তানের মধ্যে যেন ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট থাকে। তাই একচালায় বাগদেবীর সঙ্গে লক্ষ্মী, কার্তিক এবং গণেশের পুজোর প্রচলন করেন। সোনামুখীর এই দে বাড়িতে এখনও সেই প্রাচীন নিয়ম মেনেই পুজো হয়ে আসছে।

প্রতি বছর মকরসংক্রান্তির পরে এই বাড়ির উঠোনে অনুষ্ঠিত হয় ‘এখেন লক্ষ্মীপুজো’। এই পুজোর পর ধানের জমি থেকে মাটি ও খড় দিয়ে প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয়। একচালার সাবেকি প্রতিমায় চার ভাই-বোন যেন এক সূত্রে বাঁধা থাকেন, এমনটাই চেয়েছিলেন অধরবাবু। পারিবারিক গহনা দিয়ে সাজানো হয় প্রতিমা। ডাকের সাজের উজ্জ্বল প্রতিমা সোনামুখীর ঐতিহ্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
শুক্লপঞ্চমীতিথিতে সরস্বতীপুজোর সঙ্গে সঙ্গে দে পরিবারে রান্নাপুজোও অনুষ্ঠিত হয়। পরিবারের সদস্যরা পুজোর অঞ্চলি দেওয়ার পর মাছ খান, এটাই রীতি দে বাড়িতে। তবে দেবীকে নানান রকমের ফল, লুচি, ভাজা, মিষ্টি ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। রান্নাপুজোয় বিভিন্ন রকমের পদ রাঁধা হয়, যেমন সাদাভাত, শুক্তোনি, মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপির তরকারি, মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, মাছের আরও নানা পদ ইত্যাদি। পরের দিন পরিবারে রান্না হয় না। আগের দিনের তৈরি রান্নাই পরের দিন খান পরিবারের সদস্যরা।

অধরচন্দ্র দের সরস্বতী মন্দিরের পাশাপাশি পরিবারের কুলদেবতা শ্রীদামোদরজিউ-এর আলাদা মন্দির রয়েছে। তবে পুজোর দিন তিনি এই সরস্বতী মন্দিরেই অবস্থান করেন।
এ বছর করোনার কারণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ মেনেই পুজো হচ্ছে দে বাড়িতে। প্রতি বছর পুজোর ভোগ ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা এক সঙ্গে খিচুড়িভোগ খান। সেই প্রথাটি এ বছর বন্ধ রাখা হয়েছে। বিসর্জনের শোভাযাত্রাও হবে না এ বছর, অর্থাৎ প্রশাসনের সমস্ত নিয়ম মেনেই পুজো হবে সোনামুখীর দে বাড়িতে।
আরও পড়ুন: বাগুইআটির ‘অভিন্দ্রা’ সরস্বতীপুজোয় তুলে ধরে এক অনন্য কাহিনি, এ বছর ‘ধারা’
বাঁকুড়া
রবিবার শুরু হচ্ছে কোতুলপুর বইমেলা, চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত
মেলার পাঁচ দিনই নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিনিধি, খবরঅনলাইন: রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে কোতুলপুর বইমেলা। এই নিয়ে দ্বিতীয় বছরে পড়ল এই বইমেলা। মেলা চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
কোতুলপুর বইমেলা কমিটি আয়োজিত এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে কোতুলপুর হাইস্কুল ফুটবল ময়দানে। মেলা উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. শ্যামল সাঁতরা।
বইমেলা উপলক্ষ্যে রবিবার কোতুলপুরে এক বর্ণময় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। সেই শোভাযাত্রার থিম হল ‘বইকে ভালবেসে হাঁটুন’। ওই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়েই মাননীয় মন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন করবেন।
মন্ত্রী ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জয়রামবাটির রামকৃষ্ণ মিশন সারদা সেবাশ্রমের স্বামী জ্যোতির্ময়ানন্দ, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্ম্মু, বিষ্ণুপুরের অতিরিক্ত জেলা বিচারপতি জনাব আতাউর রহমান, বাঁকুড়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ আইএএস, বাঁকুড়ার আরক্ষাধ্যক্ষ কোটেশ্বর রাও আইপিএস, জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং বিধায়করা।
মেলার পাঁচ দিনই নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্মরণিকা প্রকাশ, গ্রন্থ প্রকাশ, আলোচনাসভা, কবি সম্মেলন, সংগীত-নৃত্য-আবৃত্তি পরিবেশনা, জিমন্যাস্টিক্স প্রদর্শন, যাত্রাপালা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে ৩ দিনের জেলা লোকসংস্কৃতি মেলা জয়নগরে
-
রাজ্য2 days ago
কেন তড়িঘড়ি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ তৃণমূলের, সরব পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য
-
রাজ্য2 days ago
লড়াই মুখোমুখি! নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী
-
রাজ্য2 days ago
অস্বস্তি বাড়াচ্ছে রাজ্যের করোনা সংক্রমণ, কলকাতাতেও বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা
-
রাজ্য1 day ago
বিজেপির ব্রিগেড: বাংলা চায় প্রগতিশীল বাংলা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী