হায়দরাবাদের পর এ বার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় দেশের দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরি হল৷ সিউড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রপুর গ্রামে দেশের দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স। ছ’ দশক আগে হায়দরাবাদে গড়ে উঠেছিল দেশের প্রথম বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। এর পর দীর্ঘ ৬৩ বছর পর বীরভূমের চন্দ্রপুর গ্রামে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থার উদ্যোগে তৈরি হল দেশের দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র।
প্রথম দিনই একটি বেলুন উৎক্ষেপণ করা হয় কেন্দ্রটি থেকে৷ মাটি থেকে প্রায় ১০০ ফুট ব্যাসের একটি বেলুন উৎক্ষেপণ করা হয়৷ কমপক্ষে ৪০ কিলোমিটার উঁচুতে ওঠার পর সক্রিয় হয় বেলুনটি৷ খুলে যায় বেলুনের ‘পেলোড’৷ বিজ্ঞানীদের আশা, মহাকাশ থেকে অতি সহজে তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে গবেষকদের নতুন দিশা দেখাবে এই বিশেষ বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র৷
কী এই বেলুন? কী ভাবে কাজ করে এই বিশেষ রকমের বেলুন?
সাত মাইক্রনের পলিথিন দিয়ে তৈরি ন’ কেজি ওজনের এই বেলুনে রয়েছে অত্যাধুনিক নানা যন্ত্রাংশ৷ একে ‘হাই অল্টিটিউড বেলুন’ও বলা হয়৷ হাইড্রোজেন গ্যাস ভরে এই বেলুন উৎক্ষেপণ করা হয়৷ বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের দিকে উঠে যায় এই বেলুন৷ মাটি থেকে কমপক্ষে ৪০ কিলোমিটার উপরে ওঠার পর বেলুনের ‘পেলোড’ খুলে যায়৷ বায়ুমণ্ডলে কী ধরনের গ্যাস রয়েছে, সূর্যরশ্মি কোন উচ্চতায় কতটা সক্রিয়, মহাজাগতিক কোনও কণা রয়েছে কি না, এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেয় এই বেলুন৷ একইসঙ্গে, আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা তথ্যও সংগ্রহ করে এই বিশেষ রকমের বেলুন৷
১৯৬১ সালে হায়দরাবাদে হোমি জাহাঙ্গির ভাবার উদ্যোগে দেশে প্রথম বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়৷ এই কেন্দ্রকে ‘বেলুন ফেসিলিটি’ বলা হয়৷ ৬৩ বছর পর দেশের দ্বিতীয় বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র চালু হল বাংলায়৷ রাঢ়বঙ্গের জেলা বীরভূমের চন্দ্রপুর গ্রামে ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (ICSP)-এর উদ্যোগে ‘হাই অল্টিটিউড বেলুন ফেসিলিটি’ তৈরি করা হল৷ সিউড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এই স্থান দিয়ে বিমান চলাচল না-করায়, এলাকাটিকে বেলুন উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (আইসিএসপি)-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী।
মহাকাশ বিজ্ঞানী সন্দীপবাবু আরও জানান, মহাকাশ থেকে অতি সহজে তথ্য সংগ্রহ করতে এই বেলুনের গুরুত্ব অপরিসীম৷ ভবিষ্যতে এমন গবেষণাকেন্দ্র বাংলার বিজ্ঞানীদের নতুন দিশা দেখাবে৷ এই কেন্দ্র থেকে ২০ থেকে ১০০ ফুট ব্যাসার্ধের বেলুন উৎক্ষেপণ করা হবে।
সন্দীপবাবু জানান, এর মধ্যেই এই সংস্থা ১১৪ বার বেলুন উৎক্ষেপণ করেছে৷ তবে সংস্থার স্থায়ী ও নিজস্ব কোনও বেলুন উৎক্ষেপণকেন্দ্র ছিল না৷ এ বার সেই সমস্যার সমাধান হল৷ এই স্থান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত দূরে। ফলে বেলুনের তথ্য নিয়ে ফিরে আসার ক্ষেত্রে সুবিধা রয়েছে৷ এ ছাড়া নদীও নেই আশেপাশে। এই সকল বিষয় দেখেই বীরভূমের চন্দ্রপুরের ফাঁকা জায়গাটি গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে এখানে পড়ুয়ারা এসে মহাকাশ গবেষণা করতে পারবেন।