রাজ্য
রাজ্যে উপ নির্বাচন কমিশনার, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির ইঙ্গিত
সিবিএসই-র পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হতে পারে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন।

কলকাতা: রাজ্য সফরে রয়েছেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। দফায় দফায় বৈঠক করছেন নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিভাগের সঙ্গে। এরই মধ্যে সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে।
রাজ্যে ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসেছেন জৈন। বুধবার কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে প্রথমে সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার ও কমিশনারেট কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জৈন। এ বারের ভোটে বাড়তি সংযোজন করোনা সংক্রমণ এড়িয়ে নির্বিঘ্নে ভোট পরিচালনা। সে দিকে তাকিয়েই বৃহস্পতিবার তিনি কোভিড টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। জানা গিয়েছে, মাস পেরোলেই বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে কমিশন।
কমিশন সূত্রে খবর, এই মাসেই রাজ্যে আসছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই ভোটপর্ব মিটিয়ে ফেলতে চাইছে কমিশন। কারণ ৪ মে থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। স্বাভাবিক ভাবেই ভোটগ্রহণের জন্য যাতে পরীক্ষায় কোনো রকমের ব্যাঘাত না ঘটায়, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছে কমিশন।
এমনিতে রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, উপ নির্বাচন কমিশনার যত শীঘ্র সম্ভব জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলি কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে। একই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে প্রশাসনিক কর্তাদের রুটিন মাফিক কমিশনে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে শোনা গিয়েছিল, এপ্রিলের গোড়ায় শুরু করে মে মাসে ১৫ তারিখের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে পারে কমিশন। কিন্তু সিবিএসই পরীক্ষার বিষয়টিকে তুলে ধরেই এখন তা এগিয়ে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্যে এলে তবেই নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে বলে জানা গিয়েছে। চলতি মাসেই ফুল বেঞ্চ রাজ্য আসতে পারে।
সূত্রের খবর, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বস্তরের অফিসারদের রীতিমতো সতর্ক করে দিয়েছেন জৈন। জানিয়ে দিয়েছেন, ন্যূনতম গাফিলতিতেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সব মিলিয়ে ভোট প্রক্রিয়া যে অন্যবারের থেকে এগিয়ে আসছে, সেটা একপ্রকার নিশ্চিত।
আরও পড়তে পারেন: অগ্নিকাণ্ডে গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেবে পুরসভা, বাগবাজারে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্য
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকের পদ ছাড়ছেন ফিরহাদ হাকিম
এর ফলে ভেঙে যাবে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ড।

খবরঅনলাইন ডেস্ক: বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, তাই নিয়ম মেনেই কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের পদ ছাড়তে হচ্ছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে যাবে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ড।
তা হলে ফিরহাদের পর কলকাতা পুরসভার দায়িত্বে কে? এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্যই নিয়ম মেনে পদত্যাগ করব। বোর্ড ভেঙে গেলে কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব সামলাবেন পুর কমিশনার এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব।”
তিনি বলেন, অন্যান্য পুরসভার প্রশাসক যাঁরা বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদেরও মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে পদত্যাগ করতে হবে। ফলে, শিলিগুড়ি প্রশাসক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে অশোক ভট্টাচার্যকে। এখনও পর্যন্ত বামফ্রন্ট শিলিগুড়ির প্রার্থী তালিকার ঘোষণা না করলেও অশোকবাবুই যে সেখান থেকে প্রার্থী হবেন তা নিশ্চিত।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান ছাড়াও আরও তিন সদস্য অতীন ঘোষ, দেবাশিস কুমার, দেবব্রত (মলয়) মজুমদার এ বার বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন। অতীনবাবুর কথায়, “বিধানসভা ভোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র পেশ করার আগেই ফিরহাদ হাকিমকে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তখনই নিয়ম মাফিক বোর্ড ভেঙে যাবে। তাই, মনোনয়নপত্র পেশ করার জন্য আমাদের আর আলাদা করে পুরবোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে হবে না।”
তবে কোনো পুরসভার ক্ষেত্রে যদি প্রশাসক বোর্ডের অন্য কোনো সদস্য প্রার্থী হন, সে ক্ষেত্রে গোটা বোর্ড ভেঙে যাবে না। সে ক্ষেত্রে শুধু ওই সদস্যকেই পদত্যাগ করতে হবে।
খবরঅনলাইনে আরও পড়তে পারেন
ফসল বাঁচানোর জন্য বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দক্ষিণবঙ্গ, যদিও সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ
রাজ্য
ফসল বাঁচানোর জন্য বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দক্ষিণবঙ্গ, যদিও সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ
আগামী দিনে গরম আরও বাড়বে।

খবরঅনলাইন ডেস্ক: গত বছর নভেম্বরের পর থেকে দক্ষিণবঙ্গে সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। আর তার জেরে ফসলে বেশ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি যা তাতে আগামী ১০ দিনেও উল্লেখযোগ্য কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
অন্যান্য বার মার্চের এই দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দু’ তিনটে কালবৈশাখী হয়ে যায় দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু এ বার একটাও হয়নি। গরমও সে ভাবে বাড়ছে তা-ও নয়, ভোরের দিকে ঠান্ডা ঠান্ডা ব্যাপার এখনও রয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। কিন্তু বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে।
এ বার বিশ্বে ‘লা নিনা’ অনেক বেশি শক্তিশালী। সে কারণে উত্তর ভারত থেকে বয়ে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝাগুলি ছোটোনাগপুর মালভূমি এবং সন্নিহিত দক্ষিণবঙ্গে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারছে না। আর সে কারণেই বৃষ্টি নেই দক্ষিণবঙ্গে। যদিও উত্তরবঙ্গ, সিকিম এবং সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতে বৃষ্টিপাত ঠিকঠাকই হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই আমের মুকুল এসে গিয়েছে। আমের রেকর্ড ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দু’ একবার বৃষ্টি না হলে প্রচুর মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষতি হতে পারে ধান চাষেও।
তবে ১২ থেকে ১৪ মার্চের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে অল্প ঝড়বৃষ্টি হতে পারে, এমনই মনে করছেন বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা ওয়েদার আল্টিমার কর্ণধার রবীন্দ্র গোয়েঙ্কা। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তুলনায় হালকা ঝড়বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা এবং সন্নিহিত অঞ্চলে। তবুও বৃষ্টিহীন অবস্থার থেকে কিছুটা বৃষ্টি হওয়া তো ভালোই।
তবে আগামী দিনে গরমের দাপট ক্রমশ বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। বর্তমানে কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। চলতি সপ্তাহের শেষে সেটা ৩৭-৩৮ ডিগ্রিতে উঠে যেতে পারে।
খবরঅনলাইনে আরও পড়তে পারেন
ইতিহাস
চল্লিশের দশকে বাংলার এক গণ্ডগ্রামে নারী শিক্ষার আলো দেখিয়েছিলেন তিনি, নারী দিবসে স্মরণ করি সেই বীরাঙ্গনাকে
বর্ধমান-বাঁকুড়ার সীমানায় আকুই গ্রাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষে ছিল কৃষিজীবী প্রধান এবং শিক্ষায় অনগ্রসর। গ্রামীণ সমাজও ছিল রক্ষণশীল। এই পরিবেশেই জন্ম হয় ননীবালার, ১২৯৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে।

শ্রয়ণ সেন
—- “আমি ভিক্ষে চাইতে এসেছি, দেবে?”
—- “ভিক্ষে! এবং আপনি! কেন?”
—- “না, যেটা ভাবছ সেটা নয়। টাকাপয়সা ভিক্ষে আমি করছি না। ছাত্রীভিক্ষে। আমার বাড়িতে গড়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ছাত্রী চাই। আমার স্বপ্ন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করে তোলা।”
নিশ্চিত করে জানা যায় না, কিন্তু ননীবালা গুহ এবং এই প্রতিবেদকের প্রপিতামহী এমিলাসুন্দরী সেনের মধ্যে হয়তো এই ধরনের কথোপকথনই হয়েছিল।
১৯৩৯ সাল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন তখন মধ্য গগনে। ঠিক তখনই ৫২ বছরের এক প্রৌঢ়া আকুই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার দোরে দোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিক্ষার আলোয় মেয়েদের আলোকিত করে তুলবেন বলে।

বর্ধমান-বাঁকুড়ার সীমানায় আকুই গ্রাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষে ছিল কৃষিজীবী প্রধান এবং শিক্ষায় অনগ্রসর। গ্রামীণ সমাজও ছিল রক্ষণশীল। এই পরিবেশেই জন্ম হয় ননীবালার, ১২৯৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে।
শত প্রতিকূলতায় ভরা তাঁর জীবন। মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিধবা হন তিনি, লেখাপড়াও জানতেন না। জানা যায়, অনেক বছর পর নিজের নাম স্বাক্ষর করতে শিখেছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ আমল, বাল্যবিধবা, নিরক্ষর এবং রক্ষণশীল গ্রামীণ সমাজ — এই চার প্রতিকূলতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি ননীবালাকে, যিনি এখনও ‘ননী পিসিমা’ নামে পরিচিত গ্রামের প্রবীণদের কাছে।
আকুইয়ের প্রবীণরা — এই প্রতিবেদকের জেঠু রমাপ্রসাদ সেন, আকুইয়ের বিশিষ্ট মানুষ দিলীপ কুমার দাঁ-রা কেন ননীবালাকে ‘ননী পিসিমা’ বলতেন?
কারণ এঁদের বাবা-কাকারা তিরিশ-চল্লিশের দশকে ননীবালার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
সালটা ১৯৩০। ননীবালা তখন সদ্য চল্লিশ পেরিয়েছেন। এই বছরই জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পান তিনি। আইন অমান্য আন্দোলনের আহ্বান শুনে দেশসেবার কাজে ব্রতী হন। আকুইয়েরই দত্ত পরিবারের ছেলে জগদ্বন্ধুর নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ননীবালাও স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ননীবালার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে নিজের রক্ষণশীল সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন মতিবালা দত্ত, সুশীলা দে, রাধারানি ঘোষ, করুণাময়ী দলুই প্রমুখ। এঁরা সবাই বাল্যবিধবা।
ব্রিটিশ ভারতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ‘বন্দেমাতরম’ গাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল। কিন্তু ননীবালা ছিলেন সাহসিনী। ১৯৩০ সালেই জাতীয় পতাকা উত্তোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন।
এর পরের বছর আকুইয়ের পাশের গ্রাম বামুনিয়ায় ‘চৌকিদারি কর বন্ধ আন্দোলন’ প্রবল আকার ধারণ করে। সার্কেল ক্রোক অফিসার গাড়ি নিয়ে আসার চেষ্টা করলে নারী সত্যাগ্রহীদের প্রবল বাধার মুখে পড়েন। ননীবালার নেতৃত্বে নারী সত্যাগ্রহীরা মাটিয়ে শুয়ে পড়ে তাঁর পথ আটকান।
শোনা যায়, তিন দিন ধরে মাটিতে শুয়ে এ ভাবেই পথ আটকে রেখেছিলেন তাঁরা। এর পর বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক ও পদস্থ পুলিশ অফিসারদের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপরে ব্যাপক লাঠি চালায় পুলিশ। ননীবালা-সহ অনেকেই আহত হন। তাঁকে এবং অন্যান্য সত্যাগ্রহীকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৩১ সালে ফের একবার গ্রেফতার হন ননীবালা। তিন মাস কারাদণ্ড ভোগের পর মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে তিনি মুক্তি পান ১৯৩২ সালের ১১ মার্চ।
শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, গঠনকর্মীও ছিলেন ননীবালা। আকুই গ্রামে চরকা কেন্দ্র স্থাপন, সুতোকাটা, খদ্দর ব্যবহারের জন্য গ্রামের নারীপুরুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাঁর।
এর পাশাপাশি ননীবালা ছিলেন বাঁকুড়া জেলার নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। নিজে নিরক্ষর হয়েও মহিলাদের পড়াশোনার গুরুত্ব তিনি বুঝেছিলেন এবং গ্রামের মানুষদের বুঝিয়েছিলেন।
ননীবালার জন্মস্থান আকুই গ্রামের পুবপাড়ায়। ১৯৩৯ সালে নিজের বাড়িতেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন তিনি। এই কর্মসূচিতে তাঁকে সাহায্য করেন জগদ্বন্ধু দত্ত এবং আকুই ইউনিয়ন বোর্ডের তৎকালীন সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত। তাঁর লক্ষ্য ছিল, মেয়েদের তিনি পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করবেনই এবং সেই কারণেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘ছাত্রীভিক্ষা’ করতেন।
কিন্তু সেখানেও ছিল বাধা। পুবপাড়াটি ছিল সে অর্থে অনগ্রসর। সামাজিক রক্ষণশীলতা অনেক বেশি ছিল এই পাড়ায়। ছোটো বয়সে ‘বিধবা’ ননীবালাকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে এখানে। বিভিন্ন বাড়িতে তাঁর প্রবেশের ওপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই পাড়ার বাসিন্দারা যে তাঁদের মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরোতে দেবেন না, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান।
অন্য দিকে, তৎকালীন পশ্চিমপাড়া ছিল সে অর্থে তুলনামূলক ভাবে উদার। তাই পশ্চিমপাড়াতেই যান তিনি। প্রথমেই আসেন এই প্রতিবেদকের প্রপিতামহীর কাছে। ননীবালাদেবীর কথায় রাজি হয়ে যান এমিলাসুন্দরী সেন এবং এক কথায় তাঁর ছোটো মেয়ে মমতাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়ে দেন। পশ্চিমপাড়ার আরও চারটি বাড়ি তাঁদের মেয়েদের পাঠায় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

অর্থাৎ, গ্রামের যে পাঁচ মহিলা প্রথম বার বাড়ির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই প্রতিবেদকেরই পিসি-ঠাকুমা।
১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়ে ফের একবার গ্রেফতার হন ননীবালা। মেদিনীপুর জেলে বন্দি থাকেন তিনি। কারাবাসের মধ্যেও ননীবালার মন পড়ে থাকত তাঁর তৈরি প্রাথমিক বিদ্যালয়তেই। জেলে বসেই কৃষ্ণচন্দ্র দত্তকে চিঠি পাঠান ননীবালা। বয়ান ছিল, “আমি যে বিদ্যালয়টি তৈরি করেছি, সেখানে পশ্চিমপাড়া থেকে মেয়েরা আসছে তো?”
বিনা বিচারে আট মাস বন্দি থাকার পর অবশেষে ছাড়া পান এবং আকুই ফিরে আসেন ননীবালা।
দেশ স্বাধীন হতেই গ্রামবাসীদের কাছে ‘মাতঙ্গিনী হাজরা’ হয়ে ওঠেন ননীবালা। গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে এই নামেই ডাকতেন। যদিও এই ডাক শুনেই অসম্ভব লজ্জায় পড়তেন। প্রতিবাদ করতেন। বলতেন, “ধুর, কার সঙ্গে কার তুলনা করছিস তোরা!”
পশ্চিমপাড়ার প্রমোদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে গ্রামের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আড্ডা বসত। সেই আড্ডায় প্রতি দিন সন্ধ্যায় যোগ দিতেন ননীবালাও। দেশ তখন পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত।
স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী ননীবালার এক কালের সহকর্মীরাই এ বার ঠিক করলেন তাঁর নামে হাইস্কুল তৈরি করবেন।
প্রস্তাব দেওয়া হল ননীবালাকে। তাতেও প্রতিবাদ এই বীরাঙ্গনার। হাইস্কুলে তৈরিতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু নিজের নামে কিছুতেই সেই স্কুলের নামকরণ করতে দেবেন না। কিন্তু সেই আপত্তি আর টিকল না।
স্কুল তো হবে, কিন্তু তার জমি দেবে কে? সেই দায়িত্ব নিলেন প্রমোদবাবুই। একটি জমি চিহ্নিত হল। জমিটি পশ্চিমপাড়ারই বাসিন্দা দেব এবং রায়দের।
প্রমোদবাবু ছিলেন দেব এবং রায়দের দীক্ষাগুরু। মেয়েদের জন্য হাইস্কুল হবে, তাই জমি দরকার—এই আবেদন নিয়ে সটান দেব এবং রায়দের কাছে আবেদন করে বসেন তিনি। তাঁরাও এক কথায় রাজি হয়ে যান। মেয়েদের স্কুল তৈরির জন্য জমি দিয়ে দেন তাঁরা।

বলতে কিঞ্চিৎ গর্ব হয়, এই প্রতিবেদকের ঠাকুমা শিবানী সেন পশ্চিমপাড়ার এই দেব পরিবারেরই মেয়ে।
জেলবন্দি থাকাকালীন অনেক প্রভাবশালী স্বাধীনতা সংগ্রামীর সংস্পর্শে আসেন ননীবালাদেবীরা। পরবর্তীকালে এঁরাই সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেন, কেউ কেউ মন্ত্রীও হন। কিন্তু ননীবালাদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ।
ননীবালাদেবীর আবেদনেই আকুই গ্রামে আসেন এমনই কয়েক জন মানুষ। তাঁদের হাত ধরেই ‘আকুই ননীবালা গার্লস হাইস্কুল’-এর প্রাথমিক ভিত তৈরি হয়। মাটির ঘরে তৈরি হওয়া এই হাইস্কুল ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে।
এখন এই গার্লস হাইস্কুলটি শুধুমাত্র আকুই নয়, বাঁকুড়া জেলায় অন্যতম জনপ্রিয় স্কুল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে এখানকার ছাত্রীরা দুরন্ত ফলাফল করে তাক লাগিয়ে দেয়।
১০৪ বছর বেঁচে ছিলেন ননীবালা। পরমায়ুর দিক দিয়ে এ রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে তাঁর স্থান দ্বিতীয়। শেষ বয়স পর্যন্তও নারীশিক্ষা নিয়ে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। মেয়েদের পড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরব হয়েছেন তিনি।
দেশের গ্রামাঞ্চলে যখনও সে ভাবে নারীশিক্ষার আলো ফোটেনি, তখনই এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন ননীবালা। কিছু বাধাবিপত্তি থাকলেও আকুই গ্রামকে পাশে পেয়েছিলেন তিনি। আকুই গ্রাম তাই আজও ননীবালাময়। গ্রামের স্কুল মোড়ে তৈরি হয়েছে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তিও।

বছরের ৩৬৫টা দিনই নারীদের দিন হওয়া উচিত। কিন্তু একটা বিশেষ দিন যখন রয়েছেই, সেই দিনে এমন এক বীরাঙ্গনার পায়ে শতকোটি প্রণাম জানাই।
-
রাজ্য3 days ago
পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল
-
রাজ্য3 days ago
বিধান পরিষদ গঠন করে প্রবীণদের স্থান দেওয়া হবে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বললেন মমতা
-
রাজ্য2 days ago
কেন তড়িঘড়ি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ তৃণমূলের, সরব পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য
-
রাজ্য2 days ago
লড়াই মুখোমুখি! নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী