পরিবেশ
নাব্যতা বাড়াতে মুড়িগঙ্গায় শুরু হল ড্রেজিং
ওয়েবডেস্ক: প্রতিবছর গঙ্গাসাগর যাওয়ার সময়ে এই সমস্যায় ভোগেন পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীরা। সমস্যাটা মুড়িগঙ্গার নাব্যতা। ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্যতা কমে যায় মুড়িগঙ্গার। ফলে পারাপারের জন্য জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হতো। তাই মুড়িগঙ্গার নাব্যতা সমস্যার সমাধান করতে আগে থেকেই উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ইতিমধ্যে মুড়িগঙ্গায় ড্রেজিং শুরু করা […]

ওয়েবডেস্ক: প্রতিবছর গঙ্গাসাগর যাওয়ার সময়ে এই সমস্যায় ভোগেন পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীরা। সমস্যাটা মুড়িগঙ্গার নাব্যতা। ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্যতা কমে যায় মুড়িগঙ্গার। ফলে পারাপারের জন্য জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হতো।
তাই মুড়িগঙ্গার নাব্যতা সমস্যার সমাধান করতে আগে থেকেই উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ইতিমধ্যে মুড়িগঙ্গায় ড্রেজিং শুরু করা হয়েছে। হল্যান্ড থেকে দু’টি ড্রেজিং যন্ত্র এনে এই কাজ শুরু হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী ড্রেজিং শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটা সংস্থা এই ড্রেজিং করছে। তারাই আগামী আট বছর (নাব্যতার বিষয়টি) দেখভাল করবে।” পুরো প্রকল্পটির জন্য ওই সংস্থার সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি করা হয়েছে বলে জানান সেচমন্ত্রী।
সেচমন্ত্রী জানান, গঙ্গাসাগরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। পর্যটকদের জন্য ইতিমধ্যেই একাধিক সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই এখন পর্যটকরা বছরভরই গঙ্গাসাগরে পাড়ি দিচ্ছেন। মুড়িগঙ্গায় পলি জমার জন্য তাঁদেরও সমস্যায় পড়তে হতো। তাই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয় রাজ্যের পর্যটন দফতর এবং সেচ দফতর।
এর ফলে আগামী দিনে গঙ্গাসাগরে পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে বলে আশাপ্রকাশ করেন সেচমন্ত্রী।
পরিবেশ
Air Pollution: বায়ুদূষণ ও শিশুমৃত্যু: এক ভয়ংকর ভবিষ্যতের আখ্যান
প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠার পরিবর্তে প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন সব শিশুর ভাগ্যে জুটছে হাজারো রোগ, দেখা যাচ্ছে অস্বাভাবিকতা, অপ্রাকৃতিকতা।


সন্তোষ সেন
বায়ুদূষণের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে বিশ্ব জুড়ে চালানো সমীক্ষা/গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে অতি সম্প্রতি। ‘বৈশ্বিক বায়ুর অবস্থা ২০২০’ (State of Global Air, 2020) শীর্ষক ওই রিপোর্টের নির্যাস – ২০১৯ সালেই সারা পৃথিবীতে কম করে পাঁচ লক্ষ নবজাতকের প্রাণ কেড়েছে দূষিত বায়ু, যাদের মধ্যে অধিকাংশই আবার ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে।
উদ্বেগ বহু গুণ বাড়িয়ে রিপোর্ট বলছে, মাতৃগর্ভে থাকা শিশুদের ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলছে বায়ুদূষণ। যার ফলে সময়ের আগেই কম ওজনের শিশুদের জন্মের হার বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশুমৃত্যু। বয়স্কদের উপর বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা বলে চলেছেন। কিন্তু শিশুমৃত্যুর ওপর বিশ্ব জুড়ে এই ধরনের বিস্তারিত সমীক্ষা এই প্রথম।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
বিভিন্ন দেশে অসংখ্য গবেষণার মাধ্যমে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ‘হেলথ্ এফেক্টস ইনস্টিটিউট’-এর (Health Effects Institute) সভাপতি ড্যান গ্রিনবাউম (Dan Greenbaum) লিখছেন, “শিশুদের জন্ম হচ্ছে অতি উচ্চ মাত্রার দূষণের মধ্যে। কম ওজনের নবজাতকের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া-সহ নানা ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে। তাদের ফুসফুসের গঠন ও বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে না।”
অতিমারি সংক্রান্ত গবেষক বিজ্ঞানী ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটে রিৎজ (Beate Ritz) অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছেন, “ভারত এবং দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ঘরের ভিতরের বায়ুদূষণ ভিক্টোরিয়ান যুগের লন্ডনের সমতুল।” তিনি আরও বলছেন, “আক্রান্ত শিশুরা বেঁচে গেলেও তাদের মস্তিষ্ক-সহ দেহের নানা যন্ত্রাংশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সুতরাং বায়ুদূষণের সমাধান যে কোনো মূল্যে আমাদের করতেই হবে।”
ঘরের ভিতরের দূষণের সঙ্গে কারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত কালো বিষাক্ত গ্যাস, ধোঁয়া এবং অত্যধিক জনঘনত্ব এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বিশ্বে কম করে ৬৭ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন শুধুমাত্র বায়ুদূষণ এবং তার কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মধুমেহ, ক্যানসার-সহ ফুসফুসের অনেক জটিল রোগ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায়। ভারতবর্ষের ১২২টি বড়ো শহরের মধ্যে ৫৯টি শহরের ২.৫ পার্টিকুলেট ম্যাটারের তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে নয়ডা ও দিল্লি বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে। ওখানকার পরিস্থিতি ভয়ানক। বাকি দূষিত শহরগুলোর মধ্যে গাজিয়াবাদ, মুজফ্ফরপুর, কানপুর, চণ্ডীগড়, হাওড়া ও কলকাতার অবস্থাও ভয়ংকর (তথ্যসূত্র: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৯.১০.২০)।

এর মধ্যে আর একটি রিপোর্ট সামনে এসেছে – চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট-এর (Energy Policy Institute, University of Chicago) ‘বায়ুর মান জীবন সূচক ২০২০’ (Air Quality Life Index, 2020)। এই রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, গাঙ্গেয় উপত্যকায় বসবাসকারী ভারতের এক চতুর্থাংশ মানুষের আয়ু গড়ে দশ বছর করে কমে যাচ্ছে ব্যাপক বায়ুদূষণের কারণে।
অন্য দিকে অতি সম্প্রতি (২২.১২.২০২০) ‘দ্য ইন্ডিয়া স্টেট-লেভেল ডিজিজ বার্ডেন ইনিশিয়েটিভ-এর (The India State-level Disease Burden Initiative) রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উপর কী প্রভাব পড়েছে সেই সংক্রান্ত গবেষণার রিপোর্টে হাড় কাঁপানো তথ্য সামনে এসেছে। যার মূল প্রতিপাদ্য – ২০১৯ সালে শুধুমাত্র বায়ুদূষণের কারণেই ভারতে মৃত্যু হয়েছে ১৭ লক্ষ মানুষের, যা দেশের মোট মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এবং এই কারণে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মোট ২.৬ লক্ষ কোটি টাকার। পাঠকরা ভাবুন কোন ভয়ংকর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
বায়ুদূষণ ও মানসিক স্বাস্থ্য
ডাক্তার, গবেষকরা স্বীকার করেছেন, ফুসফুস, হার্ট-সহ শরীরের প্রায় সব ক’টি অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত করে বায়ুদূষণ। কিন্তু বায়ুদূষণের অন্য একটি দিকও আছে। গবেষণায় জানা যাচ্ছে, ডিজেল চালিত যানবাহন থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড মানসিক সমস্যার কারণ ৩৯ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এটা ঠিক যে, মানসিক রোগের ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু কারণ আছে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা, সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে এটা স্পষ্ট, উন্নত দেশগুলোর প্রত্যেকটি শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের অনেক উপরে এবং পৃথিবীর ৯০% মানুষই দূষিত বায়ু পান করেন। ফলে শিশু-সহ মানুষের একটা বড়ো অংশের মধ্যে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ, হতাশা বাড়ছে। এমনকি এই কারণে আত্মহত্যার ঘটনাও বাড়ছে। এই গবেষণার বিষয় সোশ্যাল সাইকোলজি অ্যান্ড সাইকিয়াট্রিক এপিডেমিওলজি’-তে (Social Psychology and Psychiatric Epidemiology) প্রকাশিত হয়েছে।
সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠায় প্রকৃতি ও মায়ের ভূমিকা
সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাণু শুধুমাত্র নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করার কাজে লাগে। পুরুষের এইটুকু ভূমিকার পর সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পুরোটাই নারীদের অপরিসীম অবদান। আর এই প্রক্রিয়ায় যোগ্য সঙ্গত করে প্রকৃতি-পরিবেশ।
বিজ্ঞান বলছে, একটি মানুষের শরীরে ৩৯ ট্রিলিয়ন (৩৯ লক্ষ কোটি) উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই কোটি কোটি অনুজীব মানুষের নাক-কান-মুখ দিয়ে অন্ত্রে প্রবেশ করে। এর একটা অংশ নিয়ে গড়ে ওঠে প্লেসেন্টাল মাইক্রোবায়োম। নারীর গর্ভে অমরার (placenta) জলীয় স্তরে ভ্রূণ ভেসে থাকে, যাকে পুষ্টির জোগান ও সমস্ত রকমের সুরক্ষা দেয় প্লেসেন্টাল মাইক্রোবায়োম। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রক্রিয়ায় এই সব উপকারী বন্ধু-ব্যাকটেরিয়ার দল বাসা বাঁধে মায়ের স্তনে। তৈরি হয় প্রকৃতির অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ কলোস্ট্রাম (colostrum)। যার উপকার বলে শেষ করা যায় না। প্রথমত: সদ্যোজাতদের পেটে জমা হয় প্রচুর পরিমাণ বিলুরুবিন। সদ্যোজাতকে মায়ের বুকের প্রথম দুধ খাওয়ালে এই সব উপজাত শিশুর মলের (meconium) সঙ্গে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত: প্রোটিন ও পুষ্টির জোগান দেওয়ার পাশাপাশি কোলোস্ট্রাম বাচ্চাদের শরীরে প্রতিষেধক ও অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে, যা একটি শিশুর সুস্থ-সবল ভাবে বেড়ে ওঠার প্রধান কারিগর। কম ওজনের নবজাতককে কোলোস্ট্রাম খাওয়ালে তার ওজন বৃদ্ধিতেও প্রভূত সাহায্য করে। আর শিশুদের ছয় মাস ধরে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাইয়ে গেলে তাদের পুষ্টি বৃদ্ধি, শারীরিক গঠনে তা যে অসাধ্য সাধন করে তা পাঠকদের কমবেশি জানা।

সমস্যা ঠিক কোথায়
জল-বাতাসের দূষণ, সামুদ্রিক দূষণ, সামুদ্রিক শ্যাওলার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (অ্যালগাল ব্লুম) ও ডেড-জোনের কবলে পড়ে কোটি কোটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে। মুষ্টিমেয় মানুষের মুনাফা ও ব্যবসার স্বার্থে নির্বিচারে অরণ্যনিধন ও জঙ্গল জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণে জুনোটিক ভাইরাসের দল জঙ্গল ছেড়ে পঙ্গপালের মতো মানুষের শরীরে হানা দিচ্ছে, যার সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি বেশি করে ঘটবে। এমনটাই আশঙ্কা বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের। মায়েদের শরীরে ও গর্ভজাত ভ্রূণের ওপরও যার প্রভাব পড়ছে।
অন্য দিকে আবার বর্তমান কর্পোরেট পরিচালিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও বেবিফুডের রমরমা শিশুদের বঞ্চিত করছে কোলোস্ট্রাম-সহ মাতৃদুগ্ধ পান থেকে, যার ফল পাচ্ছি আমরা হাতেনাতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপ্রাকৃতিক অস্বাভাবিক খাদ্যাভাস। মায়ের দুধের পরিবর্তে কৌটোর দুধ, ভাত রুটি ডাল সবজি ফলমূল মাছ ডিমের পরিবর্তে গাদা গাদা চকলেট চিপস ঠান্ডা পানীয় পিৎজা বার্গারের মতো জাঙ্ক ফুড ও ফাস্ট ফুড খেয়ে খেয়ে শিশুরা হয়ে পড়ছে ওবেসিটির শিকার। যার ফল হল অকাল স্থূলতা, হজমের সমস্যা, ডায়াবেটিসের রমরমা।
বাতাস-মাটি-জল, ফুল-ফল-পাখিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে শিশুদের বড়ো করা হচ্ছে জীবাণুনাশক ও সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুইয়ে ঝকঝকে তকতকে মার্বেলের বদ্ধ ঘরে; শীততাপযন্ত্র চালিত ঘরে, গাড়িতে ও বিদ্যালয়ে। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠার পরিবর্তে প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন এই সব শিশুর ভাগ্যে জুটছে হাজারো রোগ, দেখা যাচ্ছে অস্বাভাবিকতা, অপ্রাকৃতিকতা। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।
(লেখক বিজ্ঞানশিক্ষক, বিজ্ঞান ও পরিবেশ কর্মী। যোগাযোগ: [email protected])
আরও পড়ুন: Goa Environment Movement: গোয়া আওয়াজ তুলেছে, ‘কয়লার বিরুদ্ধে গোয়া’, ‘আমাদের নদী আমাদের অধিকার’
পরিবেশ
Goa Environment Movement: গোয়া আওয়াজ তুলেছে, ‘কয়লার বিরুদ্ধে গোয়া’, ‘আমাদের নদী আমাদের অধিকার’
পরিবেশকর্মীদের সক্রিয়তা ও সচেতন নাগরিক সমাজের সারাক্ষণের সতর্ক নজরদারি উন্নয়ন-মাফিয়াদের হাত থেকে আজকের গোয়াকে বাঁচানোর একমাত্র ভরসা।


কৃষ্ণা মীরা রায়
সম্প্রতি গোয়া সরকার কয়লা পরিবহণ করার জন্য রাজ্যের মর্মুগাঁও বন্দর থেকে উত্তর কর্নাটকের ইস্পাত কারখানার মধ্যে রেল ও নদীপথে কয়লা করিডোর তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। গোয়ার ১৮৩টি গ্রামের ৫৪টি গ্রামসমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের এলাকার মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহন করা যাবে না। গোয়ার অধিবাসীরা মনে করছেন যে এই প্রকল্পের ফলে দূষণের মাত্রা এত বেশি হবে যে তা তাদের জীবন ও জীবিকার উপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে প্রতি বছর ১২০ লক্ষ টন কয়লা এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। গোয়ার এই এলাকার মধ্য দিয়ে কয়লা আমদানির কুফল ইতিমধ্যেই ভোগ করছেন মর্মুগাঁও বন্দর লাগোয়া ভাসকো শহরের বাসিন্দারা।
মর্মুগাঁও বন্দরে কয়লা আমদানির বিষয় জেএসডব্লু (JSW) ও আদানি পোর্টস (Adani Ports) তদারকি করে। সম্প্রতি বেদান্ত রিসোর্সেস (Vedanta Resources) এখানে একটি কয়লা টার্মিনাল তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছে। সাউথ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আসে এবং সেই কয়লা রেল ওয়াগন, ট্রাক, বার্জ ইত্যাদিতে চাপিয়ে শুধু ত্রিপল ঢাকা দিয়ে কর্নাটকে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার কয়লার আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫১০ লক্ষ টন করতে চায়।
আর এই আমদানি করা কয়লা পরিবহণের জন্য সরকার যে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে তা হল –
(১) পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মধ্য দিয়ে জোড়া রেললাইন (Double-tracking) পাতা;
(২) বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন বসানো;
(৩) চার লেনের জাতীয় সড়ক তৈরি করা;
(৪) ছ’টি নদীপথকে ড্রেজিং করে জাতীয় জলপথ তৈরি করা;
(৫) নদীর ধারে জেটি তৈরি করা ও নদীর তীর বাঁধানো; এবং
(৬) ভাসকো ডা গামা উপসাগর, বন্দরের সমস্ত ক্যানেল ড্রেজিং করে গভীর করা।

‘কয়লার বিরুদ্ধে গোয়া'(‘গোয়া এগেন্সট কোল’, Goa Against Coal) প্রচার আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য প্রভু দেশাইয়ের কথায়, “দৈত্যের মতো এই ভয়াবহ প্রকল্পগুলি সম্পর্কে গোয়াবাসীরা অন্ধকারে রয়েছেন। কারণ এই প্রকল্পগুলি এক সঙ্গে জানানো হচ্ছে না। এক বার পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলে বলা হবে, এত টাকা লগ্নি করা হয়ে গেছে, আর কিছু করার নেই। গোয়াবাসীদের এটা মেনে নিতে হবে।”
সরকারের এই উদ্যোগের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি প্রচারমঞ্চ গড়ে উঠেছে গোয়ায় – যেমন, ‘গোয়া এগেন্সট কোল’, ‘আওয়ার রিভার্স আওয়ার রাইটস’ (আমাদের নদী আমাদের অধিকার, Our Rivers Our Rights)। এই দু’টি মঞ্চের পক্ষ থেকে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে কয়লা আমদানি ও পরিবহন বন্ধ করার জন্য স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
গোয়াবাসীরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন
২০১৬ সালে যখন কেন্দ্রীয় সরকার সাগরমালা রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে মর্মুগাঁও-সহ দেশের সব বন্দর উন্নত করার জন্য মাস্টারপ্ল্যানের রূপরেখা রাখা হয়েছিল, তখন সবার আগে ‘ফেডারেশন অফ রেনবো ওয়ারিওর্স’ (Fedaration of Rainbow Warriors) এবং ন্যাশানাল ফিসওয়ার্কার্স ফোরাম (National Fishworkers Forum) এই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে জানতে পারে। তারা বুঝতে পারে সরকার ইতিমধ্যেই টুকরো টুকরো করে মর্মুগাঁও বন্দর উন্নত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে।
বন্দরের নিচু এলাকায় বসবাসকারী মৎস্যজীবীদের বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে বন্দর ড্রেজিং প্রকল্প বন্ধ করার জন্য ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসেই উক্ত ফোরাম দু’টি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালে (National Green Tribunal) আবেদন জানায়। কিন্তু এক মাস পরেই পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছ থেকে এই বন্দর সম্প্রসারণের প্রকল্প পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পেয়ে যায় এবং গণশুনানি থেকে অব্যাহতিও পায়।

আলকাতরায় মাখামাখি গোখরো সাপ। মাড়গাঁও বন দফতরের কর্মীরা এটিকে উদ্ধার করে। এর একটি চোখ, নাক এবং চোয়ালের কিছুটা পরিষ্কার করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছিল। ছবি ‘গোয়া এগেন্সট কোল’-এর ফেসবুকে পেজ থেকে নেওয়া।
ন্যাশনাল ফিসওয়ার্কার্স ফোরাম এই ছাড়পত্রকে গ্রিন ট্রাইবুনালে চ্যালেঞ্জ করে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাইবুনাল ফোরামের পক্ষে রায় দেয় এবং প্রস্তাবিত সব প্রকল্পের বিষয়ে গণশুনানির নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টও ট্রাইবুনালের এই নির্দেশ বহাল রাখে।
ভাসকো শহরে ২০১৭-এর মে মাসে আট দিন ধরে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। সম্ভবত এ দেশে গণশুনানির ইতিহাসে এটি সব চেয়ে দীর্ঘ শুনানি। এখানে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সবাই সাক্ষ্য দিয়েছেন – সক্রিয় পরিবেশকর্মী, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, মৎস্যজীবী ( নৌকা বা ট্রলার), ছাত্রছাত্রী, তরুণতরুণী, ঠাকুমা-দিদিমা, রোমান ক্যাথলিক যাজক, কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, স্থানীয় ছোটো ছোটো পার্টির প্রতিনিধিরা, এমনকি গোয়া রাজ্যের শাসক ভারতীয় জনতা পার্টির একজন বিধায়কও।
গণশুনানিতে একজনও প্রকল্পগুলির পক্ষে বলেননি। গণশুনানির প্রথম দিন সাক্ষ্য দিতে ১৫০০-রও বেশি মানুষ এসেছিলেন। শুনানি সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে রাত একটায় শেষ হয়।
শুনানিতে একের পর এক বক্তা বন্দর কর্তৃপক্ষ-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও দফতরের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সামনে প্রকল্পের ত্রুটিগুলি উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরেন। যেমন, একজন সাক্ষী বলেন ‘বিপর্যয় মোকাবিলা পর্যবেক্ষণ’ (Disaster Management Studies) নিজেই ‘মূর্তিমান বিপর্যয়’, কারণ পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে কয়লার স্তূপে মাঝে মাঝে আগুন ধরে যায়। অথচ পর্যবেক্ষণে এটা বলা হয়নি যে এই কয়লার স্তূপের ২০০ মিটারের মধ্যে সহজদাহ্য অ্যামোনিয়া ট্যাঙ্ক মজুত করা হয়েছে।
সামুদ্রিক বিজ্ঞানী পূজা মিত্র বলেন, এই বন্দরের আরও সম্প্রসারণ হলে হাম্পব্যাক ডলফিন (humpback dolphin) ও প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি হবে।
রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক কার্লোস আলমেইডা গণশুনানিতে দাঁড়িয়ে কয়লা সংক্রান্ত সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার দাবি করেন। তিনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে প্রশ্ন করেন, “যদি বায়ুদূষণ এত বেশি মাত্রায় দেখা যায়, তা হলে এই কাজের জন্য দেওয়া লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে না কেন? আর দূষণের মাত্রা যদি ইতিমধ্যেই এত বেশি হয়ে থাকে তা হলে আরও কয়লা কেন আনা হচ্ছে?”
স্থানীয় সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিল এক জন স্কুলপড়ুয়ার সাক্ষ্য, সে আন্তঃপ্রজন্ম সমতার (intergenerational equity) দাবি করেছিল।
ভাসকো শহরের সেন্ট অ্যান্ড্রিউ’স চার্চের যাজক শেরউইন কোরিয়া তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, গির্জা কয়লার গুঁড়োয় ঢেকে যাচ্ছে। সে জন্য গির্জার ভবন ও চত্বর নিয়মিত জল দিয়ে ধুতে হচ্ছে।
রেল করিডোর তৈরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
কর্নাটকের হসপেট পর্যন্ত কয়লা পরিবহণের উদ্দেশ্যে ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দক্ষিণ-পশ্চিম রেল করিডোর তৈরির জন্য দু’ জোড়া রেললাইন পাতার নকশা রাখা হয় ২০১৬ সালের সাগরমালা রিপোর্টে। ওই বছরেরই ডিসেম্বরে রেললাইন পাতার প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার সময় থেকেই গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ শুরু করেন।

চান্দোর এলাকায় জোড়া রেললাইন পাতার কাজ শুরু হওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল ২০২০ সালের ২ নভেম্বর। ১ নভেম্বরের মধ্যরাত থেকে হাজার হাজার গ্রামবাসী চান্দোর এলাকায় জড়ো হয়ে রেললাইন পাতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। ২ নভেম্বর ভোর ৫টা পর্যন্ত তাঁরা এলাকা পাহারা দে্ন। বিক্ষোভকারীরা সারা রাত ধরে মোমবাতি হাতে নিয়ে, ড্রাম বাজাতে বাজাতে মিছিল করেন, স্লোগানে স্লোগানে নিস্তব্ধ রাত্রি মুখর হয়ে ওঠে্ন। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই সময় রেললাইন অবরোধ করে রাখেন এবং গভীর রাত্রে যে সব কয়লাবাহী ট্রেন ওই পথে যাতায়াত করে সেগুলো তাঁরা আটকে দেন।
জোড়া রেললাইন পাতার বিরোধিতা করার জন্য গড়ে ওঠা মঞ্চ ‘গোয়েনচো একভট’-এর ( Goencho Ekvott) আহ্বায়ক ক্রেসন এন্টাও বলেন, “এই রেললাইন পাতার কাজ বন্ধ করার জন্য আমরা ডেপুটি কালেক্ট্ররকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি।”
তিনি দাবি করেন, এই রেল প্রকল্প সম্পূর্ণ বেআইনি কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। ভগবান মহাবীর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (Bhagwan Mahavir Wildlife Sanctuary) এবং মোলেম জাতীয় উদ্যানের (Mollem National Park) জঙ্গল ও জীববৈচিত্র্যের উপর এই প্রকল্পের অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্রেসন এন্টাও আরও বলেন, জোড়া রেললাইন বসানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এখানে ৪০০ কেভির ট্রান্সমিশন লাইন বসানো হবে। এ ছাড়া চার লেনের জাতীয় সড়ক তৈরি হবে। কয়লার গুঁড়ো গোয়ার পর্যটনশিল্পকে শেষ করে দেবে। মৎস্যশিল্প ও কৃষির প্রভূত ক্ষতি করবে।
মোদ্দা কথা, বিশ্বের ৩৬টি উৎকৃষ্ট জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চলের অন্যতম যে পশ্চিমঘাট, সেই পশ্চিমঘাটের অপূরণীয় ক্ষতি করবে প্রস্তাবিত রেল, জাতীয় সড়ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন।
ছ’টি নদীকে জাতীয় জলপথ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা
কয়লা পরিবহনের জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক গোয়ার ছ’টি নদী মান্ডবী, জুয়ারি, মাপুসা, চাপোরা, সাল ও কুম্ভরজুয়া এবং একটি ক্যানেলকে জাতীয় জলপথে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গোয়াবাসীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। গোয়া বিধানসভায় গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির পক্ষ থেকে এই প্রকল্প সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিধানসভার নির্দল বিধায়ক বিজয় সরদেশাই বলেন, এই প্রকল্পের ফলে জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক সম্পদের প্রভূত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং অচিরেই গোয়া ‘মৎস্যহীন’ হয়ে পড়বে।

গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রভাকর টিম্বলে সমস্ত রাজনৈতিক পার্টির কাছে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।‘ গোয়া এগেন্সট কোল’ আন্দোলনের কর্মী প্রভু দেশাই বলেন, “এই সব নদী গোয়ার সাধারণ মানুষের সম্পদ ও ঐতিহ্যের ধারক। সরকার সেই নদী বিক্রি করে দিচ্ছে আদানি, জিন্দালদের কয়লা পরিবহনের জন্য। যে গোয়াকে আজ আমরা চিনি এই প্রকল্প সেই গোয়াকে চিরদিনের মতো শেষ করে দেবে।”
গণশুনানির পর কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক মর্মুগাঁও বন্দর উন্নত করার প্রকল্প পিছিয়ে দেয়। কারণ মন্ত্রক মনে করে, পরিবেশ দূষণের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। প্রবল প্রতিরোধের মুখে গোয়া সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার এই তিনটি প্রকল্প নিয়েই ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করেছে।
তিন দশকের আন্দোলন
গোয়া রাজ্যে আজকের বিক্ষোভ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই রাজ্যে প্রায় তিন দশক ধরে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন চলছে।
১৯৯৫ সালে গোয়ার পন্ডা তালুকে থাপার ডুপন্ট নাইনল প্ল্যান্ট ৬.৬ তৈরির সময় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা কারখানায় পৌঁছোনোর সব রাস্তা বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়। একজন মারা যান।

২০০০ সালে মিরামার বিচকে ব্যাক্তি মালিকানার অধীনে আনার পরিকল্পনা করা হয়। ‘নিও’ (দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশিয়ানোগ্রাফি, The National Institute of Oceanography) এবং ‘টেরি’র (দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট, The Energy and Resources Institute) বৈজ্ঞানিকদের সহায়তায় স্থানীয় মানুষ এই প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য করে্ন।
২০০৬ সালে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সক্রিয়তার ফলে ৩৫,০০০ কোটি টাকার আকরিক লোহার খনি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে এবং খনিতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৬ সালেই গোয়ার ভূখণ্ড-চিত্র রক্ষা করার জন্য ‘গোয়া বাঁচাও অভিযান’ এক বিশাল সমাবেশ করে। তার ফলে অনেক সরকারি প্রকল্প স্থগিত হয়ে আছে।
পরিবেশকর্মীদের সক্রিয়তায় নাজেহাল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ সিং রানে এক সময় বলেছিলেন, “পরিবেশকর্মীদের গোয়া থেকে বার করে দেওয়া উচিত। এদের কোনো কাজ নেই, এরা যে কোনো অজুহাতে কোর্টে চলে যায়, আর প্রকল্পগুলোর উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে।”
গোয়ার ভূখণ্ড-চিত্র বাঁচাতে পরিবেশ-সচেতন নাগরিকদের কাছে কোর্টের স্থগিতাদেশ চাওয়া ও বিক্ষোভ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া গোয়াকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর আর কোনো পথ খোলা নেই। ফলে পরিবেশকর্মীরা তাঁদের সক্রিয়তার জন্য কায়েমীস্বার্থের চক্র এবং সরকারের কোপের মুখে পড়ছেন। এমনকি সক্রিয় পরিবেশকর্মীদের চোরাগোপ্তা পথে খুন করার অভিযোগও উঠছে। এ রকমই একটি অভিযোগের উল্লেখ এখানে করা যেতে পারে।

২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর সক্রিয় পরিবেশকর্মী ফাদার বিসমার্ক ডায়াসের দেহ মান্ডবী নদীতে ভেসে ওঠে। পুলিশ প্রথমে এই ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ফাদারের পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেন। জমি-মাফিয়ারা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে ফাদার ডায়াস থানায় এফআইআর করেছিলেন। তিনি একটি ভিডিও রেকর্ডও করে যান যেখানে যারা তাঁকে খুনের হুমকি দিচ্ছে এমন কিছু ব্যাক্তির নাম উল্লেখ করা আছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট না হয়ে এই মৃত্যুকে হত্যার ঘটনা হিসাবে তদন্ত করার জন্য হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ অবশেষে এটিকে খুনের ঘটনা হিসাবে ধরে তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তিন বছর পর ফাদার ডায়াসকে সমাধিস্থ করা হয়।
পরিবেশকর্মীদের সক্রিয়তা ও সচেতন নাগরিক সমাজের সারাক্ষণের সতর্ক নজরদারি উন্নয়ন-মাফিয়াদের হাত থেকে আজকের গোয়াকে বাঁচানোর একমাত্র ভরসা।
তথ্যসূত্র: Scroll.in, thecitizen.in, downtoearth.org.in, The Hindustan Times, The Indian Express এবং Wikipedia
কলকাতা
ব্রিটেন, হিডকোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তিন কোভিডযোদ্ধাকে সম্মান জানাল গো-জিরো মবিলিটি
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোভিডযোদ্ধাদের হাতে স্বচ্ছ ও দূষণহীন পরিবহণের সরঞ্জাম তুলে দিয়ে সম্মানিত করা হয়।


খবর অনলাইন ডেস্ক: কলকাতায় ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (WBHIDCO) এবং ব্রিটেনের গো-জিরো মবিলিটি (GoZero Mobility UK) একত্রিত হয়ে অতিমারি চলাকালীন তিন কোভিডযোদ্ধার (COVID Warriors) নিরলস প্ররিশ্রমের স্বীকৃতি দিল।
মঙ্গলবার নিউটাউনের ইকো পার্কে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে স্বচ্ছ ও দূষণহীন পরিবহণের সরঞ্জাম তুলে দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
ব্রিটিশ সরকার চলতি বছরের নভেম্বর মাসে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের গঠনমূলক সম্মলেন ‘সিওপি২৬’ (COP26) আয়োজন করবে। এই “জলবায়ু সম্মেলন”-এর মূল অগ্রাধিকার হল কার্বনশূন্য পরিবহণ। এটি শক্তি সুরক্ষা সরবরাহ করবে এবং পরিবহণ ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ এবং নির্গমন উভয়ই হ্রাস করবে। সিওপি২৬-এর প্রচারে ব্রিটিশ সরকার শহর, ব্যবসা-বাণিজ্য, গবেষণা সংস্থা, সৃজনশীল সংস্থা এবং অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে বৈদ্যুতিন গতিশীলতা বাড়িয়ে তুলতে এবং নতুনত্ব প্রদর্শনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
ব্রিটেন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি যৌথ শক্তি হিসাবে কাজ করছে এবং এ জাতীয় বিভিন্ন সহযোগিতামূলক উদ্যোগের মধ্যে এটি একটি অন্যতম উদ্যোগ।
গো-জিরো মবিলিটি একটি ব্রিটিশ সংস্থা। বৈদ্যুতিন সাইকেল প্রস্তুতকারক সংস্থাটির সদর দফতর বার্মিংহামে। কলকাতাকে কেন্দ্র করে দেশের ৬০টির বেশি শহরে উপস্থিতি রয়েছে তাদের।
মঙ্গলবার যে তিন জন কোভিডযোদ্ধাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাঁরা হলেন পূর্ণিমা সেন দাস (এনকেডিএ-তে রক্ত সংগ্রহ সহায়ক), সৌমিতা ঘোষ ( টাটা মেডিকেল সেন্টারের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড পলিসি, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের প্রধান) এবং অনুপকুমার ঘোষ (ইকো পার্কের ওয়েলফেয়ার ও স্যানিটেশন টিম)।

হিডকো চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “নিউটাউন বাংলার ‘সাইকেল’ রাজধানী হয়ে ওঠার আশাবাদী। আমরা সাধারণ মানুষকে সাইকেল ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে পেরে খুশি। সাইকেল ব্যবহার একটি সঠিক পদক্ষেপ এবং আমরা এই বিষয়ে ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করে খুশি।
কলকাতায় ব্রিটিশ ডেপুটি হাই-কমিশনার নিক লো বলেন, “নিউটাউন কলকাতার সেরা প্রথমসারির কর্মীদের মধ্যে তিনজনকে সম্মান জানাতে এই অনুষ্ঠানে এসে আমি খুব আনন্দিত। যে তিন জন কোভিডযোদ্ধা আজ সম্মানিত হলেন তাঁরা প্রকৃতঅর্থে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য”।
গো-জিরো মবলিটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও অঙ্কিত কুমার বলেন, “এই অনুষ্ঠানটি ‘মেডেল অব অনার’ অনুষ্ঠানের অংশ। গো-জিরো গতিশীলতার মাধ্যমে সমাজসেবা করছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে এই উদ্যোগে শামিল করতে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিন সাইকেলের বিক্রি তীব্র গতিতে বাড়ছে”।
আরও পড়তে পারেন: রয়্যাল এনফিল্ড হিমালয়ান ২০২১ বাজারে আসছে, জেনে নিন চমকদার কিছু বৈশিষ্ট্য
-
রাজ্য5 hours ago
Bengal Polls Live: ৪টে পর্যন্ত ভোট পড়ল প্রায় ৭০ শতাংশ
-
গাড়ি ও বাইক2 days ago
Bajaj Chetak electric scooter: শুরু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেই বুকিং বন্ধ! কেন?
-
রাজ্য1 day ago
Coronavirus Second Wave: আজ কমিশনের ডাকে সর্বদলীয় বৈঠক, ভোট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আশায় রাজ্যবাসী
-
দেশ1 day ago
Delhi Riots 2020: পুলিশি তদন্তে অসঙ্গতি, জেএনইউয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদের জামিন