তিতাস পাল : অন্য আর পাঁচটা রবিবারের মতো এ দিনটা আয়েস করে কাটাতে পারল না আমজনতা। সৌজন্যে নোট বাতিল। সপ্তাহান্তে এই একটা দিন একটু রিল্যাক্স করার মুডে থাকেন সকলেই। কিন্তু নোট বাতিল ঘোষণার পর প্রথম রবিবারটি হয়তো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে আমজনতার কাছে।
সাধারণত এই ছুটির দিনটিতে সকালেই বাজারে ছোটেন সকলে। তাজা তরিতরকারি, মাছভর্তি ব্যাগ নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু এই ‘আনলাকি থার্টিন’ রবিবারটি ‘আনলাকি’ হয়েই থেকে গেল আমজনতার মনে।
বিবার সকালে বাজারমুখী না হয়ে সকলেই ছুটলেন ব্যাঙ্ক অথবা এটিএম-এর লাইনে দাঁড়াতে। পকেটে নগদ-নারায়ণ না থাকলে বাজারের ব্যাগ যে ভর্তি হবে না। ফলে রবিবারের বাজার থেকে গেল প্রায় ফাঁকা। খদ্দেরের আশায় পসরা সাজিয়ে সারা দিন বসেই থাকলেন জলপাইগুড়ির দীনবাজারের মাছ, মাংস, বা সবজি ব্যাবসায়ীরা। একই চিত্র আলিপুরদুয়ারের স্টেশন বাজার বা কোচবিহারের বউবাজারেও। জলপাইগুড়ি দীনবাজারের সবজিবিক্রেতা বৃন্দা সা জানালেন, সাধারণত হাজার দশেক টাকার বিক্রিবাটা হয় রবিবারে। কিন্তু আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার টাকার বিকিকিনি হয়েছে। একই বক্তব্য মাছবিক্রেতা অশোক সাউ বা মাংসবিক্রেতা নিজামুদ্দিনের।
অনেক লড়াই-যুদ্ধ করে শনিবার যাঁরা টাকা তুলতে পেরেছিলেন, আজ তাঁদের দেখা গেল বিজয়ীর হাসি নিয়ে বাজারে যেতে। দোকানদাররাও তাঁদের প্রায় অতিথি আপ্যায়নের ভঙ্গিতে খাতিরদারি করলেন। অন্য দিনের থেকে একটু কম দামেই একটু বেশি জিনিস দিয়ে দিলেন তাঁরা। ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে সেই বিজয়ীরা যখন কোনো ব্যাঙ্কের সামনে দিয়ে ঘরে ফিরছিলেন, দেখা গেল ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই করুণ চোখে তাকিয়ে আছেন তাঁদের দিকে। বাজারের ব্যাগ থেকে ঝকঝকে রুই মাছের মাথাটা দেখতে পেয়ে কারো চোখে আবার একটু ঈর্ষাও ছায়া ফেলল বোধহয়। ইস, তিনিও তো ভেবেছিলেন দু’ রকমের মাছ, মাংসের পদ দিয়ে দুপুরের ভুরিভোজ সেরে বেশ একটি দিবানিদ্রা দেবেন।
শান্তিপাড়ার দীপক চক্রবর্তীর বাড়িতে সকালেই আত্মীয়রা এসেছেন, কিন্তু হাতে নগদ টাকা তেমন ছিল না। অগত্যা ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে, টাকা তুলে বিকেলে বাজার করে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। অতিথিকে তো আর না খাইয়ে রাখা যায় না।
আমআদমির ভালোর জন্য নেওয়া নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও এই পরিস্থিতির জন্য যে কেউ তৈরি ছিলেন না তা স্পষ্টতই জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। ৫০০, ১০০০-এর নোট বাতিলের ‘উপহার’ হিসেবে পাওয়া এই রবিবারটি সত্যিই যে ‘আনলাকি থার্টিন’, তা-ও জানিয়েছেন উত্তর থেকে দক্ষিণের ভুক্তভোগী মানুষ।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।