খবরঅনলাইন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার-বুধবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আগামী দু’তিন দিনের পূর্বাভাস নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে রাজ্যের কয়েকটি জেলায়।
অতিবৃষ্টি এবং ডিভিসির জল ছাড়ার কারণে রবিবার থেকে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরে। বীরভূমেও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে ইতিমধ্যেই সেনা নামানো হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ৩ জনের মৃত্যুরও খবর পাওয়া গিয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই শিলাবতীর জলে প্লাবিত পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা। এক জন মারা গিয়েছেন কেশপুরে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর ১টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭৭৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। তার পরে পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে জল ছাড়া হয় এক লক্ষ ৫১ হাজার ৩৫০ কিউসেক হারে। এই পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে সোমবার হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার আরও বাড়তি জল এসে পৌঁছোতে পারে।
খানাকুলে উদ্ধারে সেনা
রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে যাওয়ায় হুগলির খানাকুল-২ ব্লক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এখানকার দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। রবিবার রাতেই সেনাবাহিনীর ২৪ জনের একটি দল খানাকুলে আসে। সোমবার ভোর ৫টা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
বানভাসি হয়েছে হুগলির জাঙ্গিপাড়া-সহ আরও বেশ কিছু জায়গা। দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ ভাঙায় প্লাবিত আরামবাগের একাধিক জায়গা। প্রশাসনের হিসেবে, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১৩০০ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মোট ১৭টি ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে।
চিন্তায় আমতা-উদয়নারায়ণপুর
দামোদরে বন্যা হলে প্রতি বারই পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায় আমতা-উদয়নারায়ণপুরের। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দামোদরের জলে এই জেলার উদয়নারায়ণপুরের ৬টি পঞ্চায়েত এলাকাও ডুবেছে। অবস্থা খারাপ হয়েছে অন্যত্রও। আমতার বেশ কিছু জায়গাও প্লাবিত।
শনিবার সকালে ডিভিসি ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছেড়েছিল। সেই জলেই ডুবেছে উদয়নারায়ণপুর। আমতা-চাঁপাডাঙা রোডের অনেকটা অংশ এক কোমর জলের নীচে। ১৯টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।
ডিভিসির হিসেব বলছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে আরও বাড়তি জল দামোদর হয়ে চলে আসবে আমতায়। সে ক্ষেত্র বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
বানভাসি ঘাটাল
বন্যা হলেই ভেসে যায় ঘাটাল। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। এ ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের আরও অনেক জায়গার অবস্থা খারাপ। জলের প্রবল চাপে শিলাবতীর একাধিক নদীবাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে বাঁধ রক্ষায় প্রশাসনের সঙ্গে সমানে লড়াই চালিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
শেষমেশ বাঁধ বাঁচলেও শনিবার গভীর রাতে মহকুমাশাসকের দফতরের প্রাচীর ভেঙে জলের তলায় চলে যায়। ভেসে যায় গোটা ঘাটাল শহর। মহকুমাশাসকের দফতর আপাতত সরিয়ে বিদ্যাসাগর হাইস্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জলমগ্ন ঘাটাল উপ-সংশোধনাগার থেকে ৬১ জন বিচারাধীন বন্দিকে মেদিনীপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ঘাটাল মহকুমাতেই বন্যার কারণে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদের কিছু এলাকাও প্লাবিত হয়েছে বন্যার কারণে।
আগামী দু’তিন দিনের পূর্বাভাস
নিম্নচাপ বিদায় নেওয়ার পর থেকে গত তিন দিন সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু আগামী দু’তিন দিনের পূর্বাভাস বানভাসি এলাকাগুলির ক্ষেত্রে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করবে।
মৌসুমি বায়ু নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠছে দক্ষিণবঙ্গে। সে কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিম বর্ধমানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় অল্প সময়ের ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন কোভিড কমছে উত্তরপূর্ব ভারতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সব রাজ্যেই হাজারের নীচে সংক্রমণ
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।