হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকায় পাইপলাইন সংস্কারের কাজ চলাকালীন হঠাৎ করেই ধস নামে, যার ফলে আশপাশের বহু বাড়িতে ফাটল ধরেছে। বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। তিন দিন কেটে গেলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। এদিকে, প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিভাজিত মতামত ধসের প্রকৃত কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়িয়েছে।
ধসের সম্ভাব্য কারণসমূহ:
১. পাইপলাইনের সংস্কারের গাফিলতি
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাইপলাইনের সংস্কার করতে গিয়ে মাটি খোঁড়া হলে তার তলায় থাকা ভূগর্ভস্থ স্তর নরম হয়ে যায়, যার ফলে ধস নামে। প্রকৌশল বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি পর্যাপ্ত সমর্থন কাঠামো তৈরি না করেই পাইপ বসানো হয়, তাহলে আশপাশের মাটি আলগা হয়ে যেতে পারে এবং তা ভবনের ভীতকেও দুর্বল করে দিতে পারে।
২. ভাগাড়ে জমে থাকা মিথেন গ্যাসের বিস্ফোরণ
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেলগাছিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভাগাড় জমে থাকায় সেখানে প্রচুর পরিমাণে জৈব বর্জ্য পচেছে। এর ফলে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়, যা মাটির নিচে চাপা থাকে। অত্যধিক গ্যাস জমে গেলে তা মাটির চাপ সহ্য করতে না পেরে ফাটল ধরাতে পারে এবং ধসের কারণ হতে পারে।
৩. অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও পুর পরিষেবার ব্যর্থতা
হাওড়ার বেলগাছিয়া রোডে পুর পরিষেবার দীর্ঘদিনের অব্যবস্থার অভিযোগ রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে ভাগাড় তৈরি, সঠিক নিকাশি ব্যবস্থার অভাব এবং পর্যাপ্ত নির্মাণ মানদণ্ড মেনে কাজ না করাই এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও বাসিন্দাদের ক্ষোভ
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে পারদ চড়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী অরূপ রায় এই ঘটনাকে ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ হিসেবে দেখালেও বিরোধীরা এর পেছনে প্রশাসনের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছে। অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন এবং বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
সমাধানের উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
- ভূগর্ভস্থ ভাগাড়ের বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করা দরকার।
- পাইপলাইন সংস্কারের সময় মাটি পরীক্ষা করে উপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।
- মিথেন গ্যাস নির্গমন রোধে বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
- ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় রোধে শহরের পরিকল্পিত পুনর্গঠনের প্রয়োজন।
এই বিপর্যয়ের আসল কারণ কী, তা জানতে রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যাচ্ছে। তবে আপাতত হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বাসিন্দারা দিন-রাত আতঙ্কে কাটাচ্ছেন, আর সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছেন।