আলিপুরদুয়ার: ভুটানের দিক থেকে নেমে আসা বালি, পাথরে ক্রমশ উঁচু হচ্ছে জয়ন্তী নদীবক্ষ। নদীর তটে নীচে বসে যাচ্ছে জয়ন্তী গ্রাম। তাই এখনই কিছু ব্যবস্থা না নিলে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে জয়ন্তী নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে গোটা জনপদ। সংকটে পড়তে পারে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পও।
জয়ন্তীর ল্যান্ডমার্ক ১৯১৫ সালে তৈরি হওয়া একটি সেতু। ১৯৯৩ সালে ভয়াবহ বন্যার সেই সেতুটি ভেঙে পড়লেও তার খাম্বাগুলো ছিল জয়ন্তীর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সেই বন্যার ২৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, এখন শুধু খাম্বার চুড়োগুলোই ভালো করে দেখতে পাওয়া যায়।
এই বিষয়ে বিশিষ্ট এক পরিবেশবিদ বলেন, “সেতুর চূড়া দেখলেই বোঝা যায় জয়ন্তীর ভবিষ্যৎ খাদের কিনারায়। আগামী দিনে আরও উঁচু হবে নদীবক্ষ। জনবসতি ঢুকে যাবে আরও নীচে। নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে বইতে শুরু করবে জনবসতি দিয়ে। হারিয়ে যাবে জনবসতি। সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সরকার, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেতে জয়ন্তীর বেশি সময় লাগবে না।”
আরও পড়ুন ভুটানের তোলা পাঁচিলে সমস্যায় পড়তে পারে বক্সার বন্যপ্রাণীরা, চিন্তায় রাজ্য বন দফতর
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, যে ভাবে নদীবক্ষ উঁচু হয়ে গিয়েছে, তাতে সামনের বছর বর্ষাতেও যদি ভুটানের দিক থেকে হড়পা বান নেমে আসে, তা হলেই ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে জয়ন্তী।

জয়ন্তী নদীর সংস্কারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও, এখনও কোনো কাজ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন জয়ন্তী গ্রাম উন্নয়ন সভার সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য। তাঁর কথায় “মুখ্যমন্ত্রী যখন জয়ন্তী এসেছিলেন, তখন তাঁকে এই বিষয়ে সমস্ত জানানো হয়েছে। তিনি প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছিলেন। তবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। জয়ন্তী নদীকে তিনটি ভাগে ভাগ করে বালি, পাথর সরানোর কাজ শুরু করা উচিত। না হলে আগামী তিন থেকে চারটি বর্ষায় হারিয়ে যাবে জয়ন্তী।”
জয়ন্তীর কিছু ক্ষতি হয়ে গেলে তার প্রভাব পড়বে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পেও। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, “ব্যাঘ্র প্রকল্প নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট গাইড লাইন আছে। গাইড লাইন মেনেই সব কাজ করতে হবে। যদি বন্যপ্রাণীর স্বার্থে বন দফতর বিষয়টি খতিয়ে দেখে, তবে কোনো সুরাহা হতে পারে।”
জয়ন্তী বাঁচলে, বাঁচবে বক্সা। বাঁচবে পরিবেশ। তাই জয়ন্তীর সমস্যার দ্রুত সুরাহার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।