রাজ্য
বিকল্প শিক্ষাপদ্ধতি: তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে লকডাউন পাঠশালা
শুধু পড়াশোনাই নয়, শিশুদের পুষ্টিসামগ্রী দিয়ে, কখনও বা খেলাধূলার সামগ্রী দিয়ে এই দীর্ঘ লকডাউনে তাদের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের প্রচেষ্টাও চলছে।

আসানসোল: ‘বিশ্বে জুড়ে অতিমারি, শিক্ষক আজ বাড়ি বাড়ি’ – এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রাথমিক ভাবে আদিবাসী এলাকাগুলোয় পাঁচ থেকে বারো জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে চলছে গাছতলায় পাঠশালা। উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। একে বলা যায় লকডাউন পাঠশালা।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আবেদনে এই ব্যবস্থা চালু করতে মাঠে নেমেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি ও রাজ্য প্রাথমিক ক্রীড়ার চিফ কোঅর্ডিনেটর অশোক রুদ্র। রাজ্যের প্রান্তিক গ্রাম থেকে শুরু করে স্মার্ট সিটি পর্যন্ত, সর্বত্র সকল ছাত্রছাত্রীর জন্য এই মুক্ত বিদ্যালয়রূপী লকডাউন পাঠশালাকে ধারাবাহিক ভাবে ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।

দেশে ও রাজ্যে প্রত্যেক দিন করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের সংখ্যাকে টপকে আরও উদ্বেগজনক হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে পরীক্ষা-সহ পঠনপাঠন স্বাভাবিক করা যায় সে সম্পর্কে সারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা দিশাহীন। এই অবস্থায় লকডাউন পাঠশালার আয়োজন করে নতুন পথ দেখাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
করোনাভাইরাস জনিত লকডাউন পর্বে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি আবেদন জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই লকডাউন পাঠশালার কর্মসূচি শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন অশোক রুদ্র।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় হীরাপুর ব্লকের প্রান্তিক আদিবাসী গ্রাম ধেনুয়ায় অশোক রুদ্রের নেতৃত্বে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর একত্রিত করে লকডাউন পাঠশালা কর্মসূচির সূচনা করা হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলায় তপন পোড়েল, আবু বক্কর, অনিমেষ গুপ্ত ও সচিন সিংহ, নদীয়া জেলায় জয়ন্ত সাহা ও সান্টু ভদ্র এবং উত্তর দিনাজপুরে গৌরাঙ্গ চৌহান প্রমুখদের উদ্যোগে এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে লকডাউন পাঠশালা। জঙ্গলমহলের শালবনী ব্লকে রাধামোহনপুর আদিবাসী বিদ্যালয়ে নিয়মিত অলচিকি ও বাংলা ভাষায় চলছে লকডাউন পাঠশালা তন্ময় সিংহ ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকার উদ্যোগে।

শুধু পড়াশোনাই নয়, শিশুদের পুষ্টিসামগ্রী দিয়ে, কখনও বা খেলাধূলার সামগ্রী দিয়ে এই দীর্ঘ লকডাউনে তাদের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের প্রচেষ্টাও চলছে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, বিপদের সময় পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এবং অপত্যস্নেহে ছাত্রছাত্রীদের পাশে থেকে প্রকৃত মাস্টারমশাই হিসাবে উত্তরণ ঘটছে বাংলার শিক্ষককুলের। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিরও সপ্রশংস উল্লেখ করেন অশোকবাবু।
তবে শুধু শিক্ষাদানের কর্মসূচিই নয়, আরও অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচিতে জড়িয়ে আছে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি থেকে রক্তদান, খাদ্যসামগ্রী দিয়ে উম্পুন কবলিত এবং করোনা লকডাউনে জর্জরিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো – সারা রাজ্যেই নানা কাজ করে চলেছে সমিতি। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে চার কোটি টাকার বেশি অর্থসাহায্য করেছে এই সংগঠন। এ ব্যাপারে রাজ্য সভাপতি বারবার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সমিতির রাজ্য কমিটি, জেলা কমিটি, চক্র কমিটি থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি।
রাজ্য
৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষায় রাজ্যে আক্রান্ত ৬০০, সুস্থতার হার ৯৭ শতাংশ ছুঁইছুঁই
শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬০৩।

কলকাতা: শনিবার সারা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে করোনা টিকাকরণ। আর বিশেষ দিনটিতেই রাজ্যে দৈনিক কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে আশার সঞ্চার করল। এ দিন ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার পরেও শনাক্ত হলেন মাত্র ছ’শোর মতো আক্রান্ত।
রাজ্যের করোনা-পরিস্থিতি
শনিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬০৩। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭০৭-এ।
অন্যদিকে এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ৬৬৬ জন। মোট সুস্থতার সংখ্যা ৫ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫১৫। সুস্থতার হার ঠেকেছে ৯৬.৯৬ শতাংশে। এক দিকে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া, অন্যদিকে সুস্থতা বেড়ে যাওয়ার উপর ভর করে কমেছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় সক্রিয় রোগী কমেছে ৭২। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাধীন কোভিডরোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ১৫১।
এ দিন মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের, মোট মৃত ১০ হাজার ৪১।
সংক্রমণের হার সামান্য কমল
তবে আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হার অতিসামান্য কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩০ হাজার ১১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। ফলে এ দিন দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ২.০২ শতাংশ।
এ দিকে রাজ্যে সামগ্রিক সংক্রমণের হারও আরও কিছুটা কমেছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৭৬ লক্ষ ২১ হাজার ১৩২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সংক্রমণের হার রয়েছে ৭.৪০ শতাংশ।
কলকাতায় কমলেও উত্তর ২৪ পরগণায় দৈনিক আক্রান্ত বাড়ল
কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগণায় নতুন সংক্রমণ দুশোর নীচে নেমে এসেছে শেষ কয়েক দিন ধরেই। যদিও, কলকাতায় কমলেও উত্তর ২৪ পরগণায় দৈনিক আক্রান্ত সামান্য বেড়েছে।
কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ জন এবং উত্তর ২৪ পরগণায় ১৮৬ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। কলকাতায় ১৩১ আর উত্তর ২৪ পরগণায় ১৭০ জন সুস্থ হয়েছেন। কলকাতায় শেষ ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ছ’জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
জেলায় জেলায়
এ দিন বাকি জেলাতেই দৈনিক সংক্রমণ আগের দিনের মতো থাকলেও বেশ কয়েকটিতে সামান্য বেড়েছে।
উল্লেখ্য যোগ্য ভাবে এ দিন হাওড়া (৪১), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৩৮), হুগলি (৩১), পশ্চিম বর্ধমান (২৩) বাদ দিলে বাকি সমস্ত জেলাতেই দৈনিক সংক্রামিতের সংখ্যা ২০-র নীচে।
আরও পড়তে পারেন: সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমল প্রায় দু’হাজার, অবনমন সংক্রমণের হারে
দঃ ২৪ পরগনা
টিকা নিয়ে খুশি চিকিৎসক, নার্স-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রথম সারির করোনাযোদ্ধারা
জেলার পাঁচটি মহকুমায় জেলার স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রথম সারির করোনাযোদ্ধারা টিকা পেলেন এ দিন।

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় শনিবার দেশ জুড়ে শুরু হল করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাঁচটি মহকুমায় জেলার স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রথম সারির করোনাযোদ্ধারা টিকা পেলেন এ দিন।
এ দিন সকালে জেলার ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল, বারুইপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, বাসন্তী ১১ নম্বর সাব-সেন্টার, জয়নগর রুরাল হাসপাতাল, জয়নগর নিমপীঠ রামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতাল, সোনারপুর কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, মহেশতলা পুরসভার মোল্লারগেট প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, সরিষা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফলতা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বানেশ্বরপুর রুরাল হাসপাতাল, মগরাহাট রুরাল হাসপাতাল, মথুরাপুর রুরাল হাসপাতাল, সাগর রুরাল হাসপাতাল ও ডায়মন্ড হারবার গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে এই কর্মসূচি পালন করা হল।
স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানালেন, টিকার দু’টি ডোজ নিতে হবে, প্রথম ডোজের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে সকলকে। এ দিন টিকাকরনের মুহূর্তে সাগর রুরাল হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক পি উলগানাথন, সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা, ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. দেবাশিস রায়-সহ আরও অনেকে।
নিমপীঠ রামকৃষ্ণ গ্রামীণ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস। জেলাশাসক পি উলগানাথন এ দিন বলেন, প্রথম সারিতে থাকা ১০০ জনকে এ দিন করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হল। ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ও শেষ ডোজ দেওয়া হবে। প্রথমে ডাক্তার,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হল। পরবর্তীতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে দেওয়া হবে। এ দিন এই টিকা নিয়ে খুশি চিকিৎসক,নার্স-সহ প্রথম সারিতে থাকা করোনাযোদ্ধারা।
আরও পড়তে পারেন: প্রয়োজনে সংস্থার কাছ থেকে কিনে প্রত্যেককে বিনামূল্যে টিকার আশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
রাজ্য
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে সিপিএমের লাইনেই খেলছেন শুভেন্দু অধিকারী
মরিয়া শুভেন্দুর ঝোলা থেকে আর কী কী বেরোয়, সেটাই দেখার!

জয়ন্ত মণ্ডল
প্রকাশ্য সভায় কখনো বলছেন, “সিপিএম কোনো দিনও তৃণমূলের সভায় ঢিল ছোড়েনি”, আবার কখনো নন্দীগ্রাম গণহত্যা সমর্থন করা না করে বলছেন, “বামেদের ভূমি সংস্কারকে খারাপ বলা যাবে না। অথচ, বামফ্রন্ট শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে রাজনীতিতে উত্থান তাঁর। এখন বামেদের প্রতি সদয় হয়ে কতকটা বামেদের ঢঙেই তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। কেন?
১৯ ডিসেম্বর দলবদলের সভা থেকেই নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) নিশানা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। রীতিমতো হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘‘ভাইপো হঠাও’’। হালকা চালে হলেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। তবে সেটা ছিল নিতান্তই সিপিএমের বেঁধে দেওয়া পুরোনো তত্ত্ব। তার পর থেকে মমতাকে নিশানা করতে সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করছেন শুভেন্দু। কেন?
মমতা এবং এনডিএ (অথবা বিজেপির) পুরোনো সম্পর্কের রেশ ধরেই তৃণমূল নেত্রীকে লাগাতার খোঁচা দিয়ে চলেছেন শুভেন্দু। বিগত কয়েক বছর ধরে এই একই ধরনের পন্থা অবলম্বন করে মমতাকে তুলোধনা করছেন বামেরা। মমতাই যে এ রাজ্যে বিজেপির জন্য জায়গা করে দিয়েছেন, তেমন অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায় সিপিএম নেতৃত্বের মুখে। সেই লাইনেই হাঁটতে দেখা যাচ্ছে শুভেন্দুকে। তবে উদ্দেশ্য অন্য।
দলবদলের সভায় শুভেন্দুর মন্তব্য

১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, মেদিনীপুর: ‘বিশ্বাসঘাতক’ কটাক্ষের জবাব দিতে শুভেন্দু বলেন, “আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে। কারা বলছে? ১৯৯৮ সালে যখন তৃণমূল প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এনডিএ-র শরিক ছিল তৃণমূল। ১৯৯৯ সালে আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। মমতা বলেছিলেন, ‘দল গঠনের পর কাঁথিতে লড়ে দ্বিতীয় হয়েছিলাম’। অর্থাৎ, অধিকারীদের বাদ দিয়ে আপনি দ্বিতীয় হয়েছিলেন। হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বারও প্রথম হতে পারবেন না, দ্বিতীয় হবেন। বিজেপি প্রথম হবে।”
দলবদলের পরের কয়েকটি সভায়

২২ ডিসেম্বর, ২০২০, পূর্ব বর্ধমান: তৃণমূলের বাড়বাড়ন্তের প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “বিজেপির আশ্রয়’ না থাকলে ১৯৯৮ সালে তৈরি মমতার তৃণমূল ২০০১ সালের আগে উঠে যেত। আমি জানি, বিজেপি নেতারা সে দিন বলেছিলেন, ‘পারলে পদ্মফুলে দাও, না পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দাও। কারণ এই অত্যাচারী কমিউনিস্ট রাজ খতম হওয়া দরকার আছে’। তাই পরোক্ষ ভাবে সেই নির্বাচনে বিজেপিরও ভূমিকা ছিল। পরিবর্তন হয়েছিল।’’
তিনি আরও বলেন, “২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল এনডিএর অংশীদার হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং আমি এক হাতে তৃণমূলের পতাকা এবং অন্য হাতে বিজেপির পতাকা ধরেছিলাম।” প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ভোটে তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন শুভেন্দু। সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠের কাছে পরাজিত হন সে বার।
৮ জানুয়ারি, ২০২১, পূর্ব মেদিনীপুর: নন্দীগ্রাম স্টেট ব্যাঙ্কের পাশের মাঠে জনসভা করেছিল বিজেপি। কয়েক জনের বিরুদ্ধে ঢিল ছুড়ে এই সভা ভণ্ডুল করার চেষ্টার অভিযোগ করেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু।
সঙ্গে তিনি বলেন, “বাইরে থেকে ঢিল ছুড়েছে। দু’-এক জন এই কাজ করেছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে। তবে আমরা তাদের চক্রান্ত রুখে দিয়েছি। আমি সিপিএমের আমলেও বিরোধী রাজনীতি করেছি। কিন্তু সিপিএমকে কখনোই তৃণমূলের জনসভায় ঢিল ছুড়তে দেখিনি”।
১৬ জানুয়ারি, ২০২১, পশ্চিম মেদিনীপুর: চন্দ্রকোনায় তৃণমূলকে আক্রমণ আক্রমণ করতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, দেশে যদি কেউ সুবিধাবাদী হয়ে থাকে তবে তিনি তৃণমূল নেত্রী। অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে তৃণমূল জন্ম নিয়েছিল।

আর রাজ্যের শিল্প নিয়ে তাঁর উক্তি, “রাজ্যে গত ৯ বছরে একটাও শিল্প হয়নি। কিন্তু বামেদের ভূমি সংস্কারকে খারাপ বলা যাবে না। তবে নেতাই, নন্দীগ্রামের গণহত্যাকে সমর্থন করা যায় না। বাম আমলেও এসএসসি হত, গত ৯ বছরে একটাও এসএসসি হয়নি”।
উদ্দেশ্য ভিন্ন
গত লোকসভা ভোটের আগে মেদিনীপুরে থেকেই মমতা-বিজেপি-আরএসএস সম্পর্ক নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বিজেপি ও আরএসএস-এর দালাল’ বলে আক্রমণ করেন তিনি। রাজ্যের বামপন্থীরা এমনটা অভিযোগ আকছার করে থাকেন প্রায় দেড় দশক ধরে।
কিন্তু সেই পুরোনো অভিযোগ নতুন বোতলে ভরে ফের এক বার বাজারে ছাড়ছেন শুভেন্দু। এর নেপথ্যে কারণ থাকতে পারে একাধিক। ক’ দিন আগের ‘শ্রদ্ধেয় দিদি’ এখন তাঁর মূল প্রতিপক্ষ। তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ করতে যা যা করা দরকার, শুভেন্দু সবই করতে পারেন। রাজ্যের উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা, বেকার সমস্যা (বিজেপি এবং রাজ্যপাল যেগুলো করে থাকেন) নিয়ে সরব হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সিপিএমের লাইনে মমতার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক খুঁচিয়ে তোলার অন্যতম কারণগুলি কতকটা এ রকম হলেও হতে পারে-
১) তৃণমূল জন্মলগ্ন থেকে বিজেপির পরিচর্যা পেয়েছিল, সেই বিজেপিতেই যোগ দিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের পাশাপাশি হয়তো মূলস্রোতে ফিরলেন শুভেন্দু।
২) এক সময়ে বিজেপির সহায়তা পেয়েও এখন তাদের বিরোধিতা করে তৃণমূল ‘বেইমানি’ করছে, সেটাই হয়তো রাজ্যের মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাইছেন শুভেন্দু।
৩) তৃণমূল এক সময়ে কেন্দ্রে বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল, তৃণমূল ছেড়ে সেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মধ্যে কোনো নীতিবিরুদ্ধ পদক্ষেপ নেই।
অথবা, ৪) শুভেন্দু যে দলেই থাকুন না, তাঁর অনুগামীরাও যাতে সে দিকে ঢলে পড়েন, সে দিকে তাকিয়েই তিনি কি আকারে-ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছেন – যাহা তৃণমূল, তাহাই বিজেপি?
এর আগে অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতাদের একাংশকে আক্রমণ করলেও দলনেত্রীকে নিয়ে মুখ খোলেননি শুভেন্দু। দল বদলের পর আর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পূর্বস্থলীর সভা থেকেই তিনি বলেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস কোম্পানিকে বলব, তার নেত্রীকে বলব, নিজের দমে যদি মুখ্যমন্ত্রী হতেন তা হলে ২০০১ সালেই হয়ে যেতেন। নন্দীগ্রামের ওই শবদেহগুলোর ওপরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।” এ ভাবেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোচ্ছে। সামনে বিধানসভা ভোট। মরিয়া শুভেন্দুর ঝোলা থেকে আর কী কী বেরোয়, সেটাই দেখার!
*প্রতিবেদনটি আপডেট করে পুনঃপ্রকাশিত
-
রাজ্য6 hours ago
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করতে সিপিএমের লাইনেই খেলছেন শুভেন্দু অধিকারী
-
দেশ2 days ago
করোনার টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হলে দায় নেবে না কেন্দ্র
-
দেশ1 day ago
নবম দফার বৈঠকেও কাটল না জট, ফের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কেন্দ্র
-
কলকাতা2 days ago
অগ্নিকাণ্ডে গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেবে পুরসভা, বাগবাজারে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়