‘হাজার চুরাশির মা’ থেকে ‘মহিমাময়ী মা’, যাত্রা শেষ মহাশ্বেতার

0

‘বিশিষ্ট লেখক মহাশ্বেতা দেবীর’ মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। জানানোরই কথা। লোধা-শবরদের নিয়ে তাঁর অসম্ভব মূল্যবান সামাজিক কাজ এবং জীবনের শেষ পর্বে প্রবলতর রাজনৈতিক ভূমিকায় মহাশ্বেতার অসাধারণ সাহিত্যকৃতি প্রায় যেন পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল। কারণ, তাঁর সৃষ্টিকে বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য পেছনে কোনও প্রতিষ্ঠান ছিল না কোনওকালেই, বা বলা চলে, তাঁকে ওই সুবিধার জন্য কখনও প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হয়নি। আবার কে জানে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় বাংলার যুবসমাজ যখন আরও এক বার উৎসবের মেজাজে পথে নেমেছিল, তখন তারা হয়তো মহাশ্বেতাকে চিনতে চলে গিয়েছিল হাজার চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, স্তন্যদায়িনী বা চোট্টি মুন্ডার কাছে।

আসলে প্রথিতযশা বাঙালি লেখককুল যখন মধ্যবিত্তের সংকট আর উদ্‌যাপনের মধ্যে তাঁদের সৃষ্টির রসদ খুঁজেছেন, মহাশ্বেতা তখন ভারতবর্ষের শিকড় সন্ধান করেছেন এ দেশের আদি বাসিন্দাদের কাছে। কারণ তিনি সব সময়েই মনে করে এসেছেন, ‘প্রকৃত ইতিহাস সাধারণ মানুষই রচনা করেন’। এ এমন এক বিশ্বাস, যা থেকে তাঁর পরিত্রাণের পথ ছিল না। কারণ তাঁর বাবার নাম ছিল মণীশ ঘটক(যুবনাশ্ব), ঋত্বিক ঘটক ছিলেন তাঁর ছোট কাকা। তাঁর মামা শচীন চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘দ্য ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি অফ ইন্ডিয়া’।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি সাহিত্যের স্নাতকোত্তর মহাশ্বেতা বিয়ে করেছিলেন নাট্যকার ও গণনাট্য সংঘের আদি পুরুষ বিজন ভট্টাচার্যকে। সে বন্ধুতা টেকেনি ঠিকই, কিন্তু জন্ম দিয়েছিল আধুনিক কালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্যের। অর্থাৎ সাম্যবাদী ভাবাদর্শের আবহ বরাবরই ঘিরে থেকেছে মহাশ্বেতাকে। সেই মহাশ্বেতা যখন রাজ্যের বামপন্থী সরকারের শিল্পনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে পথে নামলেন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে উঠলেন, তা ধ্রুপদী বাঙালি বামপন্থী নাগরিক সমাজের বড় চোখে লেগেছিল। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন গ্রামবাসীর মৃত্যুর প্রতিবাদে হাজার চুরাশির মা-র সরব হওয়াটা তারা খুব একটা ভালো চোখে দেখেননি।

তবু ইতিহাস এগিয়েছে। গত বছর চির প্রতিষ্ঠানবিরোধী নবারুণের মৃত্যুর পরও বাঙালি দেখেছে অশক্ত মহাশ্বেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে উঠে তাঁকে আশীর্বাদ জানিয়েছেন। খুব স্বাভাবিক যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় মহাশ্বেতা দে্বীকে ‘বাঙালির মহিমাময়ী মা’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহাশ্বেতার ৯০ বছরের উজ্জ্বল জীবন এ বঙ্গবাসীর রাজনৈতিক মননের যাত্রাপথেরও বুঝি অভিজ্ঞান হয়ে থাকল।      

dailyhunt

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

বিজ্ঞাপন