নরেন্দ্র মোদীর আমলে দেশ আবার পরাধীন হয়ে গেছে – শনিবার এ ভাবেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে দেশের যা অবস্থা তার প্রতিবাদ করে সোমবারই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে তিনি চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন।
এ দিন যে ভাবে, যে ভাষায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করলেন, তাতে অনেকেই বিস্মিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এ রকম অভূতপূর্ব আক্রমণ চালিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক ঢিলে অনেকগুলি পাখি মারার চেষ্টা করেছেন। এক দিকে তিনি রাজ্যের অধিকারের বিষয়ে সরব হয়েছেন, প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রবাদ বলতে কী বোঝায় তা বোঝাতে চেয়েছেন, পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে বিজেপির তলে তলে আঁতাত নিয়ে বিরোধী দলগুলি যে অভিযোগ করে তা যে নিতান্তই অমূলক তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন।
কেন হঠাৎ বিজেপির সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী?
সম্প্রতি নীতি আয়োগের একটি চিঠি রাজ্য সরকারের হাতে এসেছে। সেই চিঠিতে, সামাজিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা ৬৬ থেকে কমিয়ে ২৮ করার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে রাজ্যের আর্থিক দায় অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে খরচে নজরদারি চালাবেন নীতি আয়োগের সিইও।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, সব ব্যাপারে নাক গোলানো মুখ্যমন্ত্রীর স্বভাব। এটা পরিবর্তন করা দরকার।
শুক্রবার নবান্নয় এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী চাঁচাছোলা ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর আমলে সারা দেশ আবার পরাধীন হয়ে গেছে। সব কিছু ক্যাপচার করা শুরু করেছে। বুলডোজ করা হচ্ছে। সিস্টেমকে ধ্বংস করা হচ্ছে। ডিক্টেটরশিপ চলছে। এটা কি একটা নির্বাচিত সরকার চলছে? কোঅপারেটিভ ফেডারিলিজমের নামে সব দখল করার চেষ্টা হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “এখন কি দেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার চলছে?”
যে ভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হয়েছে এবং ওই সব প্রকল্পে কেন্দ্রের অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা হয়েছে, তার সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা ৬৬ থেকে কমিয়ে ২৮টা করে ফেলা হয়েছে। তার ওপর আবার এই প্রকল্পগুলোর ৪০ শতাংশ টাকা রাজ্যকে দিতে হবে, অথচ নাম হবে নরেন্দ্র মোদীর। কেন? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেছেন, গরিব মানুষের জন্য সব প্রজেক্ট ওরা বন্ধ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি না করলেও কেউ কেউ জনস্বার্থের মামলা করতেই পারে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি সরকারের নিন্দা করতে গিয়ে মুখমন্ত্রী কাশ্মীর, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়গুলিও টেনে নিয়ে আসেন। তাঁর অভিযোগ, এই সরকার “ডিফেন্সটাকে শেষ করে দিয়েছে, দেশটাকে বেচে দিচ্ছে। এর জন্যই কাশ্মীরে এত ডিজাস্টার। পাকিস্তান সিচুয়েশন নিয়েও ওরা মিসহ্যান্ডলিং করেছে। এনএসজি ফেল করেছে।”
রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “আমার স্টেট ট্রেজারিতে উনি (প্রধানমন্ত্রী) লোক বসাবেন। কেন?” তাঁর অভিযোগ, লোকসভায়, রাজ্যসভায় এগুলো আলোচনা না করেই সোজাসুজি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সব না থামলে রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন মমতা। প্রয়োজনে নীতীশ কুমার বা অন্য মুখমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে আদর্শ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার একটি ছবি তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, “আমি তো মনে করি কেন্দ্রের সব মিনিস্ট্রি উঠিয়ে দেওয়া উচিত। শুধু ফিনান্স, এমইএ (বিদেশ মন্ত্রক) আর রেল থাকুক।”
‘বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু’ নিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির টুইটের প্রসঙ্গ টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য “এটা প্ল্যান করেই করা হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে রাজ্য বিজেপি তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দলের পক্ষে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থনীতি কতটা বোঝেন। তিনি কি অর্থনীতিবিদ হয়ে গেলেন। অবশ্য সব ব্যাপারেই তো মুখ্যমন্ত্রীর নাকগলানো স্বভাব। এটা পরিবর্তন করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে লাভ নেই। পাকিস্তান সম্পর্কে কেমন নীতি গ্রহণ করা উচিত সেটা কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও নরেন্দ্র মোদী অনেক বেশি অবগত। বিগত দু’ বছরে নরেদ্র মোদী যে বিদেশনীতি নিয়েছেন সেটা ভারতে নজিরবিহীন ঘটনা।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।