আরজি কর-কাণ্ডের পরবর্তী ঘটনাক্রমে তৃতীয় বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে বৈঠক ভেস্তে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার নবান্নে প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও, চিকিৎসকেরা বৈঠকে আসেননি। এর পর সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর হতাশা প্রকাশ করেন এবং পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি, কিন্তু কেউ কেউ বিচার চায় না, চায় ক্ষমতার চেয়ার।”
মঙ্গলবার থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে। এর আগে, মুখ্যমন্ত্রী দু’বার তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দিলেও বৈঠক হয়নি। চিকিৎসকদের দাবি ছিল, বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হোক এবং ৩০ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে বৈঠক করা হোক। তবে এই দুই শর্তেই আপত্তি জানায় রাজ্য সরকার।
বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমার সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। তবে আমি ডাক্তারদের প্রতি কোনও রাগ বা ক্ষোভ পোষণ করছি না। আমি তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে সময় পেরিয়ে গেছে, এবং বহু মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সাত লক্ষ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।”
জুনিয়ার ডাক্তারদের বক্তব্য
জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা নবান্নে এসেছিলাম। পাঁচ দফা দাবি নিয়ে কথা বলতে এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন, তেমন খোলা মনেই কথা বলতে এসেছিলাম। আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম, ৩০ জনের প্রতিনিধিদলের কথা। সবাই নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের জন্য তাকিয়ে ছিলেন আমাদের দিকে। তাই আমরা চেয়েছিলাম সরাসরি সম্প্রচার হোক। এখানে আসার পর, আমরা নবান্নের আধিকারিকদের সঙ্গে সহযোগিতা করছিলাম, ফোন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। তখনই জানতে পারি, সরাসরি সম্প্রচারের দাবি তাঁরা মানতে পারছেন না। কিন্তু তখন তাঁরা আমাদের স্পষ্ট করে কিছুই জানাননি। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষারত অবস্থাতেই শুনতে পারলাম, মুখ্যমন্ত্রী প্রেস বিবৃতি দিচ্ছেন।”
জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁরা এখনও আশাবাদী যে সমাধান সম্ভব হবে। তারা বলেন, “আমরা চেয়ারের জন্য নয়, চেয়ারের প্রতি ভরসা রেখে আলোচনায় এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং আলোচনা করে সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যদি জুনিয়র চিকিৎসকরা বৈঠক করতে চান, তবে মুখ্যসচিব এবং অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। তবে আমি আপাতত আলোচনার বাইরে থাকছি।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক করা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।