মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি মামনি রুইদাসের মৃত্যুর ঘটনায় ১২ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করেছে মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ। শুক্রবার গাফিলতির অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়।
গত ৮ জানুয়ারি কেশপুরের বাসিন্দা মামনি রুইদাস পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ৯ জানুয়ারি রাতে তাঁর মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠে, রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইনের বিষক্রিয়ার কারণেই এই মৃত্যু। তবে তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।
স্বাস্থ্যদপ্তরের নির্দেশে গঠিত ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃত্যুর কারণ স্যালাইনের বিষক্রিয়া নয়, বরং অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্বশীল চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি এবং জুনিয়র ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসা। জানা যায়, ঘটনার দিন কোনও RMO বা সিনিয়র চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। অ্যানাস্থেশিয়া থেকে প্রসূতির ডেলিভারি – সবই করেছিলেন অভিজ্ঞতা কম থাকা ডাক্তাররা।
এই রিপোর্টের ভিত্তিতে মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার-সহ অভিযুক্ত ১২ চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, সিআইডির মাধ্যমে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশও দেন তিনি। শুক্রবার কোতোয়ালি থানায় গাফিলতি, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্বে অবহেলা এবং অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
আজ সিআইডি কর্মকর্তারা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নতুন সুপার ইন্দ্রলীন সেনের সঙ্গে দেখা করেন এবং তথ্য সংগ্রহ করেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “সিনিয়র চিকিৎসকরা দায়িত্ব না নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের এই গাফিলতির ফলেই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের অন্যান্য ইউনিটে একই স্যালাইন ব্যবহৃত হয়েছে, তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। এটা স্পষ্টভাবে ‘হিউম্যান এরর।’”
এই ঘটনায় চিকিৎসা পরিষেবার গাফিলতির বিষয়টি নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে। রাজ্য সরকারের সাপেন্ডের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের অভিযোগ গোটা ঘটনার দায়, চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।