ধর্ম নয়, রাজনৈতিক অভিসন্ধি। ধর্মীয় আবরণে ঘোমটা টানা একটি অশান্তির ছক। মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় সোমবার বহরমপুর থেকে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে ভিন্ন সুরে তিনি বুঝিয়ে দিলেন—এই অশান্তির দায় শুধুমাত্র এক সম্প্রদায়ের বা জনগণের নয়, বরং পরিকল্পিত উস্কানি ও রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কৌশলই এর নেপথ্যে। এবং সেই ষড়যন্ত্রে হাত মেলাচ্ছে কিছু তথাকথিত ধর্মীয় মুখ ও রাজনৈতিক দল।
‘ধর্মের নামে বিধর্ম’— তীব্র কটাক্ষ মমতার
‘‘আমি কোনও সম্প্রদায়কে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু কেউ কেউ ধর্মের নামে ভুল কথা বলছেন। পালে বাঘ না পড়লেও বাঘ বাঘ বলে চেঁচান। তাঁরাই বাংলার শত্রু,’’ — বলেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, এঁরা ধর্মীয় নেতা সেজে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও বিভেদ ছড়াচ্ছেন।
বিএসএফ-এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “কেন গুলি চলল? যদি না চলত, তাহলে পরের দিন এত বড় ঘটনা ঘটত না।’’ একদিকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের আচমকা তৎপরতা নিয়েও তাঁর ক্ষোভ, “মুর্শিদাবাদের ঘটনার পরদিনই কমিশন চলে এল! কিন্তু মণিপুর, বিহার, রাজস্থানে তো যায়নি!”
‘উস্কানিদাতা লুকিয়ে আলো নিভিয়ে রেখেছিলেন’
এক ধাক্কায় স্থানীয় কিছু সংগঠন ও নেতা-কেও কাঠগড়ায় তোলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, “৪৮ ঘণ্টা আলো নিভিয়ে রেখেছিলেন! কী লুকোচ্ছিলেন?” অর্থাৎ অশান্তির সময় শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক স্তরেও গাফিলতি বা গোপন চক্রান্ত ছিল বলেই ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রীর।
‘রাজনীতি নয়, সুবিচার চাই’
ধুলিয়ানে নিহত হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাসের পরিবারকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিয়েও মুখ খোলেন মমতা। তিনি বলেন, “আমি ১০ লাখ করে হাতে দিতাম। আপনারা তাঁদের লুকিয়ে নিয়ে গেছেন, এখন গালাগালি করাচ্ছেন!” তাঁর সাফ বক্তব্য, সাম্প্রদায়িক অশান্তিকে রাজনীতির অস্ত্র করা চলবে না।
‘দেশ বাঁচান, বিভাজন নয়’— বিজেপিকে তির্যক বার্তা
একই সঙ্গে বিজেপি ও কেন্দ্রকে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আপনারা সীমান্তের নিরাপত্তা দেখুন। চেয়ারে বসে মানুষের মধ্যে বিভাজন করা যায় না। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে সুবিচার দিন। ভোট রাজনীতির হাতিয়ার বানাবেন না।’’